সময়: সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উগ্র বামপন্থি কমিউনিস্টদের ভোট দিতে ২৯ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে: ট্রাম্প

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:২৬:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১০৩ Time View

149655 cpac

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

149655 cpac

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছিল, যা মূলত ‘উগ্র বামপন্থি কমিউনিস্টদের’ ভোট নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। ট্রাম্পের মতে, এই অর্থ এমন একটি সংস্থাকে প্রদান করা হয়েছে, যার পরিচিতি অত্যন্ত সীমিত, এবং যাদের রাজনৈতিক সংযোগ সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাওয়া যায়।

ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রেক্ষাপট

শনিবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপিএসি) বক্তব্য রাখার সময় ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। এই কনফারেন্সটি যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনৈতিক নেতা ও নীতিনির্ধারকদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ট্রাম্প তার প্রশাসনের সময়কালীন নীতিগুলো পুনরায় তুলে ধরেন এবং বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্র নীতির সমালোচনা করেন। ফক্স নিউজ তাদের ইউটিউব চ্যানেলে পুরো কনফারেন্সের ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে ১ ঘণ্টা ১৩ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওর ৪০ মিনিটের সময় ট্রাম্পকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়।

ট্রাম্পের বক্তব্যের মূল অংশ:

ট্রাম্প বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করতে এবং তাদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ২৯ মিলিয়ন ডলার প্রদান করা হয়েছিল, যাতে তারা ‘উগ্র বামপন্থি কমিউনিস্টদের’ ভোট দিতে পারে। আপনারা যদি দেখেন, তারা কাকে সমর্থন করছে, তাহলে বুঝতে পারবেন আসল উদ্দেশ্য কী ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের অর্থায়ন আসলে আমেরিকার করদাতাদের অর্থের অপচয়। আমাদের উচিত আমাদের নিজেদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়নে বিনিয়োগ করা, বিদেশি সরকার ও সংস্থাগুলোকে নয়।”

আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত

শুধু বাংলাদেশই নয়, ট্রাম্প তার বক্তব্যে ভারতের নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যয়ের বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “ভারতের নির্বাচনের জন্য ১৮ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। কেন? আমরা কেন কেবল কাগজের ব্যালট ব্যবহারে ফিরে যাই না? আমাদের উচিত আমাদের নিজেদের নির্বাচনে সহায়তা করা, অন্যদের নয়।”

এছাড়াও, তিনি এশিয়ার শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ৪৭ মিলিয়ন ডলার এবং নেপালের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য ১৯ মিলিয়ন ডলার খরচের কঠোর সমালোচনা করেন। ট্রাম্পের মতে, এ ধরনের ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে না, বরং এটি অন্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ সৃষ্টি করছে।

বিতর্কের সৃষ্টি

শুক্রবার গভর্নরস ওয়ার্কিং সেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় ট্রাম্প আরও বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করতে দুই কোটি ৯০ লাখ ডলার প্রদান করা হয়েছে। এই অর্থ এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে, যার নাম কেউ শোনেনি। তারা হঠাৎ করেই একটি চেক পেয়ে গেল, এবং সেই চেকের পরিমাণ ২৯ মিলিয়ন ডলার! আপনি কি কল্পনা করতে পারেন? একটি ছোট প্রতিষ্ঠান, যেখানে মাত্র দু’জন মানুষ কাজ করেন, তারা এখন বিশাল অঙ্কের অর্থ পেয়েছে। আমি মনে করি তারা খুব খুশি এবং এখন তারা ধনী হয়ে গেছেন। শিগগিরই তারা কোনো ব্যবসায়িক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান করে নেবে।”

বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকরা এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এই তহবিল প্রকৃতপক্ষে কোন খাতে ব্যবহৃত হয়েছে, তা নিয়ে গভীর তদন্ত করা দরকার। অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই মন্তব্য শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ভারতের রাজনৈতিক মহলে ট্রাম্পের ১৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তার সমালোচনা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

ট্রাম্পের বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই ২৯ মিলিয়ন ডলারের প্রকৃত ব্যবহার ও কাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ওপর এই বিতর্ক প্রভাব ফেলতে পারে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উগ্র বামপন্থি কমিউনিস্টদের ভোট দিতে ২৯ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে: ট্রাম্প

Update Time : ০৫:২৬:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

149655 cpac

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছিল, যা মূলত ‘উগ্র বামপন্থি কমিউনিস্টদের’ ভোট নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। ট্রাম্পের মতে, এই অর্থ এমন একটি সংস্থাকে প্রদান করা হয়েছে, যার পরিচিতি অত্যন্ত সীমিত, এবং যাদের রাজনৈতিক সংযোগ সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাওয়া যায়।

ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রেক্ষাপট

শনিবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপিএসি) বক্তব্য রাখার সময় ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। এই কনফারেন্সটি যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনৈতিক নেতা ও নীতিনির্ধারকদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ট্রাম্প তার প্রশাসনের সময়কালীন নীতিগুলো পুনরায় তুলে ধরেন এবং বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্র নীতির সমালোচনা করেন। ফক্স নিউজ তাদের ইউটিউব চ্যানেলে পুরো কনফারেন্সের ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে ১ ঘণ্টা ১৩ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওর ৪০ মিনিটের সময় ট্রাম্পকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়।

ট্রাম্পের বক্তব্যের মূল অংশ:

ট্রাম্প বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করতে এবং তাদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ২৯ মিলিয়ন ডলার প্রদান করা হয়েছিল, যাতে তারা ‘উগ্র বামপন্থি কমিউনিস্টদের’ ভোট দিতে পারে। আপনারা যদি দেখেন, তারা কাকে সমর্থন করছে, তাহলে বুঝতে পারবেন আসল উদ্দেশ্য কী ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের অর্থায়ন আসলে আমেরিকার করদাতাদের অর্থের অপচয়। আমাদের উচিত আমাদের নিজেদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়নে বিনিয়োগ করা, বিদেশি সরকার ও সংস্থাগুলোকে নয়।”

আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত

শুধু বাংলাদেশই নয়, ট্রাম্প তার বক্তব্যে ভারতের নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যয়ের বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “ভারতের নির্বাচনের জন্য ১৮ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। কেন? আমরা কেন কেবল কাগজের ব্যালট ব্যবহারে ফিরে যাই না? আমাদের উচিত আমাদের নিজেদের নির্বাচনে সহায়তা করা, অন্যদের নয়।”

এছাড়াও, তিনি এশিয়ার শিক্ষার উন্নয়নের জন্য ৪৭ মিলিয়ন ডলার এবং নেপালের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য ১৯ মিলিয়ন ডলার খরচের কঠোর সমালোচনা করেন। ট্রাম্পের মতে, এ ধরনের ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে না, বরং এটি অন্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ সৃষ্টি করছে।

বিতর্কের সৃষ্টি

শুক্রবার গভর্নরস ওয়ার্কিং সেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় ট্রাম্প আরও বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করতে দুই কোটি ৯০ লাখ ডলার প্রদান করা হয়েছে। এই অর্থ এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে, যার নাম কেউ শোনেনি। তারা হঠাৎ করেই একটি চেক পেয়ে গেল, এবং সেই চেকের পরিমাণ ২৯ মিলিয়ন ডলার! আপনি কি কল্পনা করতে পারেন? একটি ছোট প্রতিষ্ঠান, যেখানে মাত্র দু’জন মানুষ কাজ করেন, তারা এখন বিশাল অঙ্কের অর্থ পেয়েছে। আমি মনে করি তারা খুব খুশি এবং এখন তারা ধনী হয়ে গেছেন। শিগগিরই তারা কোনো ব্যবসায়িক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান করে নেবে।”

বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকরা এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এই তহবিল প্রকৃতপক্ষে কোন খাতে ব্যবহৃত হয়েছে, তা নিয়ে গভীর তদন্ত করা দরকার। অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের এই মন্তব্য শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ভারতের রাজনৈতিক মহলে ট্রাম্পের ১৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তার সমালোচনা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

ট্রাম্পের বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই ২৯ মিলিয়ন ডলারের প্রকৃত ব্যবহার ও কাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ওপর এই বিতর্ক প্রভাব ফেলতে পারে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share