সময়: বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে অজানা সংস্থাকে ২৯ মিলিয়ন ডলার: ট্রাম্প

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:২১:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৯৬ Time View

TRUMP TREATS

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

TRUMP TREATS

বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে এমন একটি সংস্থা, যার নাম আগে কেউ শোনেনি বলে মন্তব্য করেছেন  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করেছেন, ওই সংস্থায় মাত্র দুজন কর্মী কাজ করেন। ট্রাম্প এই অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “এটি একেবারেই অস্বাভাবিক এবং অর্থ অপচয়ের একটি বড় উদাহরণ।”

শুক্রবার (স্থানীয় সময়) হোয়াইট হাউসে গভর্নরদের এক ওয়ার্কিং সেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়ন কীভাবে বিতরণ করা হচ্ছে, তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। একই অনুষ্ঠানে ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ সহায়তার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি। হোয়াইট হাউসের ইউটিউব চ্যানেলে তাঁর বক্তৃতার ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমাদের ট্যাক্সপেয়ারদের অর্থ আমরা কাদের দিচ্ছি, সে বিষয়ে আরও বেশি স্বচ্ছতা থাকা উচিত।”

অর্থ বরাদ্দের বিতর্ক

এর আগে, ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতাবিষয়ক বিভাগ (ডিওজিই) জানিয়েছিল, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে। ডিওজিই তাদের ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্প স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ-এ বরাদ্দকৃত ২৯ মিলিয়ন ডলার বাতিল করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং দলগুলোর কার্যক্রমকে সমর্থন করার জন্য পরিকল্পিত ছিল। তবে ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, এই বরাদ্দ একটি ‘ভয়ংকর ভুল’ এবং সম্পূর্ণ অনৈতিক।

ডিওজিইর এই ঘোষণার পর শুক্রবার ট্রাম্প ফের ওই অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে এমন একটি সংস্থাকে, যার নাম কেউ জানে না। মাত্র দুজন লোক কাজ করেন সেখানে, অথচ তারা এত বড় অঙ্কের অর্থ পেয়েছে।” ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন যে এই অর্থ বরাদ্দের যথার্থতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের আরও সচেতন হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, “ছোট ছোট সংস্থা বিভিন্নভাবে অর্থ পায়। কেউ ১০ হাজার, কেউ ২০ হাজার ডলার পায়। কিন্তু এই সংস্থা পেয়েছে ২৯ মিলিয়ন ডলার। আমি নিশ্চিত, তারা দারুণ খুশি হয়েছে এবং শিগগিরই ভালো কোনো বিজনেস সাময়িকীতে বড় প্রতারণার উদাহরণ হিসেবে স্থান পাবে।” ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়ন ব্যবস্থায় বড় ধরনের দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা রয়েছে, যা জনগণের অর্থের অপচয় করছে।

কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা এক বাংলাদেশি সাবেক কূটনীতিক এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, ইউএসএআইডি বা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অন্য কোনো সংস্থার আর্থিক সহায়তা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত হওয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়া, ব্যক্তিগত সহায়তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকা বাঞ্ছনীয়। এ ধরনের সহায়তা সরাসরি বাইরের কোনো ব্যক্তির কাছে যাওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে যদি কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়, তবে তা অবশ্যই যথাযথভাবে পর্যালোচনা করা উচিত।”

হোয়াইট হাউসের ওই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “২১ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতকে, ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য। আমাদের কী হবে! আমিও তো চাই ভোটার উপস্থিতি বাড়ুক।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব রাজনৈতিক অবকাঠামোকে শক্তিশালী করার চেয়ে বাইরের দেশগুলোর জন্য অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী।

অন্যান্য দেশের অর্থায়ন

ট্রাম্প আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র সরকার নেপালের দুটি প্রকল্পের জন্য ৩৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। এর মধ্যে জীববৈচিত্র্যের জন্য ১৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সার্বিয়া, মলদোভাসহ আরও কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, “আমরা নেপালের জন্য ৩৯ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছি, অথচ আমাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নেই। এটি আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যার বিষয়।”

তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক অজানা সংস্থা কোটি কোটি ডলার পাচ্ছে, কিন্তু এই অর্থ কীভাবে ব্যয় হচ্ছে, সেটি নিরীক্ষার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। আমাদের উচিত এই ধরনের অর্থ ব্যয়ের প্রক্রিয়াগুলোকে আরও বেশি স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ করার জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে অজানা সংস্থাকে ২৯ মিলিয়ন ডলার: ট্রাম্প

Update Time : ১০:২১:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

TRUMP TREATS

বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে ২৯ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে এমন একটি সংস্থা, যার নাম আগে কেউ শোনেনি বলে মন্তব্য করেছেন  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করেছেন, ওই সংস্থায় মাত্র দুজন কর্মী কাজ করেন। ট্রাম্প এই অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “এটি একেবারেই অস্বাভাবিক এবং অর্থ অপচয়ের একটি বড় উদাহরণ।”

শুক্রবার (স্থানীয় সময়) হোয়াইট হাউসে গভর্নরদের এক ওয়ার্কিং সেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়ন কীভাবে বিতরণ করা হচ্ছে, তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। একই অনুষ্ঠানে ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ সহায়তার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি। হোয়াইট হাউসের ইউটিউব চ্যানেলে তাঁর বক্তৃতার ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমাদের ট্যাক্সপেয়ারদের অর্থ আমরা কাদের দিচ্ছি, সে বিষয়ে আরও বেশি স্বচ্ছতা থাকা উচিত।”

অর্থ বরাদ্দের বিতর্ক

এর আগে, ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতাবিষয়ক বিভাগ (ডিওজিই) জানিয়েছিল, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে। ডিওজিই তাদের ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্প স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ-এ বরাদ্দকৃত ২৯ মিলিয়ন ডলার বাতিল করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং দলগুলোর কার্যক্রমকে সমর্থন করার জন্য পরিকল্পিত ছিল। তবে ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, এই বরাদ্দ একটি ‘ভয়ংকর ভুল’ এবং সম্পূর্ণ অনৈতিক।

ডিওজিইর এই ঘোষণার পর শুক্রবার ট্রাম্প ফের ওই অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে এমন একটি সংস্থাকে, যার নাম কেউ জানে না। মাত্র দুজন লোক কাজ করেন সেখানে, অথচ তারা এত বড় অঙ্কের অর্থ পেয়েছে।” ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন যে এই অর্থ বরাদ্দের যথার্থতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের আরও সচেতন হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, “ছোট ছোট সংস্থা বিভিন্নভাবে অর্থ পায়। কেউ ১০ হাজার, কেউ ২০ হাজার ডলার পায়। কিন্তু এই সংস্থা পেয়েছে ২৯ মিলিয়ন ডলার। আমি নিশ্চিত, তারা দারুণ খুশি হয়েছে এবং শিগগিরই ভালো কোনো বিজনেস সাময়িকীতে বড় প্রতারণার উদাহরণ হিসেবে স্থান পাবে।” ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়ন ব্যবস্থায় বড় ধরনের দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা রয়েছে, যা জনগণের অর্থের অপচয় করছে।

কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা এক বাংলাদেশি সাবেক কূটনীতিক এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, ইউএসএআইডি বা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অন্য কোনো সংস্থার আর্থিক সহায়তা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত হওয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়া, ব্যক্তিগত সহায়তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকা বাঞ্ছনীয়। এ ধরনের সহায়তা সরাসরি বাইরের কোনো ব্যক্তির কাছে যাওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে যদি কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়, তবে তা অবশ্যই যথাযথভাবে পর্যালোচনা করা উচিত।”

হোয়াইট হাউসের ওই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “২১ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতকে, ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য। আমাদের কী হবে! আমিও তো চাই ভোটার উপস্থিতি বাড়ুক।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব রাজনৈতিক অবকাঠামোকে শক্তিশালী করার চেয়ে বাইরের দেশগুলোর জন্য অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী।

অন্যান্য দেশের অর্থায়ন

ট্রাম্প আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র সরকার নেপালের দুটি প্রকল্পের জন্য ৩৯ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। এর মধ্যে জীববৈচিত্র্যের জন্য ১৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সার্বিয়া, মলদোভাসহ আরও কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, “আমরা নেপালের জন্য ৩৯ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছি, অথচ আমাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নেই। এটি আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যার বিষয়।”

তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক অজানা সংস্থা কোটি কোটি ডলার পাচ্ছে, কিন্তু এই অর্থ কীভাবে ব্যয় হচ্ছে, সেটি নিরীক্ষার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। আমাদের উচিত এই ধরনের অর্থ ব্যয়ের প্রক্রিয়াগুলোকে আরও বেশি স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ করার জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share