চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি: টাঙ্গাইলে চারজন গ্রেপ্তার

- Update Time : ১২:১৪:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৬৩ Time View
ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আজ শনিবার মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশারফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ডাকাতির ঘটনায় লুট হওয়া নগদ টাকা ও কিছু মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, ডাকাত চক্রটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে। যাত্রীদের দেওয়া তথ্য ও বাসে থাকা সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে এবং বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
ঘটনার বিবরণ
গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা ইউনিক রোড রয়েলসের ‘আমরি ট্রাভেলস’ নামের একটি বাসে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। যাত্রীদের ভাষ্যমতে, বাসটি রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে ছেড়ে যায় এবং রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে বাসের ভেতরই অস্ত্রধারী ডাকাতরা হানা দেয়। তারা যাত্রীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়।
ডাকাতরা নারী যাত্রীদের হয়রানি করতেও দ্বিধা করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। একাধিক যাত্রী জানিয়েছেন, ডাকাত দল নারী যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে এবং কিছু ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করে। এই ঘটনার কারণে বাসের যাত্রীরা চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
তিন ঘণ্টা ধরে চলা এই অপরাধ শেষে ডাকাতরা বাসটিকে একই স্থানে ফিরিয়ে এনে রাত ৩টা ৫২ মিনিটে নেমে যায়। এরপর বাসের চালক, তাঁর সহকারী ও সুপারভাইজার নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন, যেমন বাসে তেল নেই বলে দেরি করেন। পরে যাত্রীদের চাপের মুখে তাঁরা রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেন।
প্রাথমিক পদক্ষেপ ও পুলিশের ভূমিকা
যাত্রীরা প্রথমে বাসটি নিয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা করার জন্য যান, কিন্তু সেসময় ওসি থানায় উপস্থিত না থাকায় তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই ডাকাতদের চেহারা মনে রাখার চেষ্টা করেছেন, যা পুলিশি তদন্তে সহায়ক হতে পারে।
গ্রেপ্তার ও আইনি ব্যবস্থা
ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ বাসের সুপারভাইজার, চালক ও চালকের সহকারীকে আটক করেছে। নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলি আদালতের সূত্রে জানা যায়, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চালানমূলে বাসের চালক বাবলু ইসলাম (৩৫), চালকের সহকারী সুমন ইসলাম (৩৫) এবং সুপারভাইজার মাহবুব আলমকে (৩৮) বুধবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়।
সন্ধ্যায় তাঁদের আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন। তবে পুলিশি তদন্ত চলমান থাকায় তাঁদের ওপর নজরদারি বজায় রাখা হয়েছে। সন্দেহভাজন ডাকাতদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে নেমেছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
মামলা ও পরবর্তী পদক্ষেপ
ঘটনার তিন দিন পর, গতকাল শুক্রবার, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। বাসের যাত্রী ও নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা ওমর আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশের একটি বিশেষ দল সম্ভাব্য অপরাধীদের ধরতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
Please Share This Post in Your Social Media

চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি: টাঙ্গাইলে চারজন গ্রেপ্তার

ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আজ শনিবার মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশারফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ডাকাতির ঘটনায় লুট হওয়া নগদ টাকা ও কিছু মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, ডাকাত চক্রটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে। যাত্রীদের দেওয়া তথ্য ও বাসে থাকা সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে এবং বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
ঘটনার বিবরণ
গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা ইউনিক রোড রয়েলসের ‘আমরি ট্রাভেলস’ নামের একটি বাসে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। যাত্রীদের ভাষ্যমতে, বাসটি রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে ছেড়ে যায় এবং রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে বাসের ভেতরই অস্ত্রধারী ডাকাতরা হানা দেয়। তারা যাত্রীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়।
ডাকাতরা নারী যাত্রীদের হয়রানি করতেও দ্বিধা করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। একাধিক যাত্রী জানিয়েছেন, ডাকাত দল নারী যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে এবং কিছু ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করে। এই ঘটনার কারণে বাসের যাত্রীরা চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
তিন ঘণ্টা ধরে চলা এই অপরাধ শেষে ডাকাতরা বাসটিকে একই স্থানে ফিরিয়ে এনে রাত ৩টা ৫২ মিনিটে নেমে যায়। এরপর বাসের চালক, তাঁর সহকারী ও সুপারভাইজার নানা অজুহাত দেখাতে থাকেন, যেমন বাসে তেল নেই বলে দেরি করেন। পরে যাত্রীদের চাপের মুখে তাঁরা রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেন।
প্রাথমিক পদক্ষেপ ও পুলিশের ভূমিকা
যাত্রীরা প্রথমে বাসটি নিয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা করার জন্য যান, কিন্তু সেসময় ওসি থানায় উপস্থিত না থাকায় তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই ডাকাতদের চেহারা মনে রাখার চেষ্টা করেছেন, যা পুলিশি তদন্তে সহায়ক হতে পারে।
গ্রেপ্তার ও আইনি ব্যবস্থা
ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ বাসের সুপারভাইজার, চালক ও চালকের সহকারীকে আটক করেছে। নাটোরের বড়াইগ্রাম আমলি আদালতের সূত্রে জানা যায়, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চালানমূলে বাসের চালক বাবলু ইসলাম (৩৫), চালকের সহকারী সুমন ইসলাম (৩৫) এবং সুপারভাইজার মাহবুব আলমকে (৩৮) বুধবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়।
সন্ধ্যায় তাঁদের আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন। তবে পুলিশি তদন্ত চলমান থাকায় তাঁদের ওপর নজরদারি বজায় রাখা হয়েছে। সন্দেহভাজন ডাকাতদের ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে নেমেছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
মামলা ও পরবর্তী পদক্ষেপ
ঘটনার তিন দিন পর, গতকাল শুক্রবার, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। বাসের যাত্রী ও নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা ওমর আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশের একটি বিশেষ দল সম্ভাব্য অপরাধীদের ধরতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।