সময়: বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছিলাম, কিছুই করার ছিল না’ – ঢাকা-রাজশাহী রুটে বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের অভিযোগ, যাত্রীদের বর্ণনায় ভয়াবহ রাত – বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১০:৫৯:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৭১ Time View

c5096dee40b26079c393b7c688289cbe 67b7e547c6cd5

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

c5096dee40b26079c393b7c688289cbe 67b7e547c6cd5

 

ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী একটি বাসে মধ্যরাতে ডাকাতির পাশাপাশি নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘটনাটি ঘটে এবং প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে বাসটি ডাকাতদের দখলে ছিল। বাসে থাকা যাত্রীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর ও মর্মান্তিক বিবরণ। এই ঘটনায় বাসের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে আটক করা হয়েছে, তবে তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। পুলিশ এখনও ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে নিশ্চিত নয় এবং কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।

 যাত্রীদের বর্ণনায় সেই ভয়াবহ রাত

২২ বছর বয়সী সোহাগ হাসান, যিনি পেশায় ব্যবসায়ী এবং বড়াইগ্রামের বাসিন্দা, সেই রাতে বাসে ছিলেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাসটি যাত্রী বোঝাই থাকলেও মাঝপথে আরও সাত-আটজনকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর ডাকাতরা বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং যাত্রীদের গলায় চাকু ধরে হুমকি দেয়। তারা বাসের আলো জ্বালাতে নিষেধ করে এবং যাত্রীদের চোখ বন্ধ রাখতে বলে। সোহাগ বলেন, “ওরা বলছিল, চোখ বন্ধ কইরা থাকবি। তাকাইলে কানা করে দিবো।”

সোহাগ ও তার সঙ্গী ওমর আলীর কাছে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা ছিল। ডাকাতরা তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার চেষ্টা করে। সোহাগ বলেন, “আমি টাকা দিতে চাইনি বলে ওরা আমায় নিচে ফেলে আমার বুকের ওপর পাড়া দিয়ে রাখছে, টাকা না দেওয়া পর্যন্ত।” তিনি আরও বলেন, ডাকাতরা বাসের দুই নারী যাত্রীকে নিয়ে পেছনের সিটে যায় এবং তাদের ধর্ষণ করে। সোহাগ বলেন, “ওরা যে পরিমাণ… উনি ধর্ষণেরও শিকার হয়েছে। পিছে নিয়ে গেলে উনি অনেক চিৎকার করছিল। ওদিকে আমাদের যেতে দিচ্ছিল না। আমরা শুধু চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছিলাম।”

 নারী যাত্রীদের ওপর নির্যাতন

বাসে থাকা আরেক যাত্রী, ৭৩ বছর বয়সী মজনু আকন্দও একই রকম অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি বলেন, “ওই রাতে আমরা যে চিল্লাচিল্লি শুনছি… তাতে মা-বোনের ইজ্জতের… গাড়ির ভেতরে আমাদের কোনও ভাষা ছিল না। ওনাদের মানসম্মানের ক্ষতি করছে, ধস্তাধস্তি করছে।” তিনি আরও বলেন, দুই নারী যাত্রী সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের একজন আনুমানিক ২০ বছর বয়সী এবং অন্যজন ২৫-৩০ বছর বয়সী ছিলেন।

সোহাগ হাসান বলেন, “আরেকজন নারী, ২৫-৩০ বছর বয়স হবে। ওনার সবকিছুই নিয়ে নিছে। উনি আমাদের দুই সিট সামনে ছিল। আমাদের তাকাইতে দিচ্ছিলো না। ওনার গায়ের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিচ্ছিল। আমরা যখন বারবার প্রতিবাদ করতে যাচ্ছি, তখন আমাদের মারতে চেষ্টা করে… পেছনে শুধু হিন্দু মেয়েটাকেই নিয়ে যায়। আর ওনার সঙ্গে সিটের ওখানে বসেই জোরজবরদস্তি করে।”

 ঘটনার সূত্রপাত

ঘটনাটি গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টায় শুরু হয়, যখন বাসটি ঢাকার গাবতলী থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাসটি ছাড়ার সময় যাত্রীতে ভরপুর ছিল। যাত্রীদের মতে, বাসে ৬০-৬৫ জন যাত্রী ছিলেন, যদিও বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ বলছে বাসটি ৩০-৪০ জন যাত্রী নিয়ে রওনা দিয়েছিল। বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, “দুইটার দিকে গাজীপুর বা টাঙ্গাইল থেকে গাড়িতে ডাকাত গাড়িতে উঠে। যাত্রীদের কাছ থেকে তারা সব নিয়ে নেয়। পরে ভোর পাঁচটার দিকে কোথাও নেমে যায়, টাঙ্গাইল বা গাজীপুরে।”

ডাকাতরা বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোর ছয়টার দিকে যাত্রীরা মির্জাপুর থানায় গিয়ে মৌখিক অভিযোগ করে। বড়াইগ্রামের ওসি বলেন, “যাত্রীরা বাস আটক করে বলে যে ড্রাইভার-হেল্পাররা জড়িত এই ঘটনায়। তাদের যাত্রীদেরকে ওদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পরে আমরা গিয়ে ওদের আটক করি।”

 পুলিশের বক্তব্য

বড়াইগ্রাম ও মির্জাপুর থানার পুলিশ বলছে, ধর্ষণের অভিযোগ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। বড়াইগ্রামের ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ধর্ষণের কোনও বিষয় আমি পাইনি। এরকম কোনও ঘটনা আমায় কেউ বলেনি বা আমি সাক্ষী পাইনি।” মির্জাপুর থানার ওসি মোশাররফ হোসেনও একই রকম বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় বাসটি এলে সাত-আটজনের ডাকাত দল গাড়িতে উঠে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। মির্জাপুর সীমানায় এটা ঘটেনি। আর এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানায় কেউ অভিযোগ করেনি।”

 যাত্রীদের অভিযোগ ও পুলিশের প্রতিক্রিয়ায় অমিল

যাত্রীদের বর্ণনা ও পুলিশের বক্তব্যের মধ্যে বড় ধরনের অমিল দেখা যাচ্ছে। সোহাগ হাসান ও মজনু আকন্দ উভয়েই বলছেন যে নারী যাত্রীরা বড়াইগ্রামেই নেমে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সোহাগ বলেন, “উনি (হিন্দু নারী) বাস থেকে নামার পর ওনার কান্নাকাটি দেখে আমরা সবাই ভেঙে পড়ি। উনি পুলিশের সামনে মান-সম্মানের পরোয়া না করে যতটুকু বলা যায়, বলছে।”

স্থানীয় সাংবাদিক হালিম খান যাত্রীদের বরাতে বলেন, “যাত্রীরা বলছে যে দুইজন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। নারী যাত্রী যারা ছিল, সবাই শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে। যেভাবে যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো হয়, তা হয়েছে। কিন্তু ধর্ষণের ব্যাপারে তারা বলছে যে পেছনের দিকে দু’জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়… ওই নারীদেরকে তো পাওয়া যায়নি। হয়তো তারা পথে নেমে গিয়েছে।”

বাসের চালক ও সহকারীদের ভূমিকা

ঘটনায় বাসের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে আটক করা হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, ডাকাতদের সঙ্গে বাসের চালক ও সহকারীরা যোগসাজশ করেছিলেন। তারা ডাকাতদেরকে যাত্রীদের টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্রের অবস্থান দেখিয়ে দিয়েছিলেন। বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “যাত্রীরা বাস আটক করে বলে যে ড্রাইভার-হেল্পাররা জড়িত এই ঘটনায়। তাদের যাত্রীদেরকে ওদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পরে আমরা গিয়ে ওদের আটক করি।”

আইনি প্রক্রিয়া ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। পুলিশ বলছে, ভিকটিমরা যদি মামলা করে, তাহলে তা গাজীপুর বা টাঙ্গাইলে দায়ের করা হবে। বাসের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে ৫৪ ধারায় আটক করা হয়েছে, তবে তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিক হালিম খান বলেন, “থানায় একটা রেফারেন্স করেছে। কারণ কোনও ভিকটিম যদি মামলা করে, তাহলে এই রেকর্ড সেই মামলার সাপোর্টে কাজ করবে।”

শেষ কথা: ন্যায়বিচারের দাবি

এই ঘটনায় যাত্রীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র, যা নারী নির্যাতন ও ডাকাতির মতো অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। যাত্রীরা ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন এবং আশা করছেন যে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। তবে পুলিশের প্রতিক্রিয়া ও তদন্তের গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা ঘটনাটির তদন্তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছিলাম, কিছুই করার ছিল না’ – ঢাকা-রাজশাহী রুটে বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের অভিযোগ, যাত্রীদের বর্ণনায় ভয়াবহ রাত – বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

Update Time : ১০:৫৯:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

c5096dee40b26079c393b7c688289cbe 67b7e547c6cd5

 

ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী একটি বাসে মধ্যরাতে ডাকাতির পাশাপাশি নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘটনাটি ঘটে এবং প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে বাসটি ডাকাতদের দখলে ছিল। বাসে থাকা যাত্রীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর ও মর্মান্তিক বিবরণ। এই ঘটনায় বাসের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে আটক করা হয়েছে, তবে তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। পুলিশ এখনও ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে নিশ্চিত নয় এবং কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।

 যাত্রীদের বর্ণনায় সেই ভয়াবহ রাত

২২ বছর বয়সী সোহাগ হাসান, যিনি পেশায় ব্যবসায়ী এবং বড়াইগ্রামের বাসিন্দা, সেই রাতে বাসে ছিলেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাসটি যাত্রী বোঝাই থাকলেও মাঝপথে আরও সাত-আটজনকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর ডাকাতরা বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং যাত্রীদের গলায় চাকু ধরে হুমকি দেয়। তারা বাসের আলো জ্বালাতে নিষেধ করে এবং যাত্রীদের চোখ বন্ধ রাখতে বলে। সোহাগ বলেন, “ওরা বলছিল, চোখ বন্ধ কইরা থাকবি। তাকাইলে কানা করে দিবো।”

সোহাগ ও তার সঙ্গী ওমর আলীর কাছে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা ছিল। ডাকাতরা তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার চেষ্টা করে। সোহাগ বলেন, “আমি টাকা দিতে চাইনি বলে ওরা আমায় নিচে ফেলে আমার বুকের ওপর পাড়া দিয়ে রাখছে, টাকা না দেওয়া পর্যন্ত।” তিনি আরও বলেন, ডাকাতরা বাসের দুই নারী যাত্রীকে নিয়ে পেছনের সিটে যায় এবং তাদের ধর্ষণ করে। সোহাগ বলেন, “ওরা যে পরিমাণ… উনি ধর্ষণেরও শিকার হয়েছে। পিছে নিয়ে গেলে উনি অনেক চিৎকার করছিল। ওদিকে আমাদের যেতে দিচ্ছিল না। আমরা শুধু চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছিলাম।”

 নারী যাত্রীদের ওপর নির্যাতন

বাসে থাকা আরেক যাত্রী, ৭৩ বছর বয়সী মজনু আকন্দও একই রকম অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি বলেন, “ওই রাতে আমরা যে চিল্লাচিল্লি শুনছি… তাতে মা-বোনের ইজ্জতের… গাড়ির ভেতরে আমাদের কোনও ভাষা ছিল না। ওনাদের মানসম্মানের ক্ষতি করছে, ধস্তাধস্তি করছে।” তিনি আরও বলেন, দুই নারী যাত্রী সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের একজন আনুমানিক ২০ বছর বয়সী এবং অন্যজন ২৫-৩০ বছর বয়সী ছিলেন।

সোহাগ হাসান বলেন, “আরেকজন নারী, ২৫-৩০ বছর বয়স হবে। ওনার সবকিছুই নিয়ে নিছে। উনি আমাদের দুই সিট সামনে ছিল। আমাদের তাকাইতে দিচ্ছিলো না। ওনার গায়ের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিচ্ছিল। আমরা যখন বারবার প্রতিবাদ করতে যাচ্ছি, তখন আমাদের মারতে চেষ্টা করে… পেছনে শুধু হিন্দু মেয়েটাকেই নিয়ে যায়। আর ওনার সঙ্গে সিটের ওখানে বসেই জোরজবরদস্তি করে।”

 ঘটনার সূত্রপাত

ঘটনাটি গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টায় শুরু হয়, যখন বাসটি ঢাকার গাবতলী থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বাসটি ছাড়ার সময় যাত্রীতে ভরপুর ছিল। যাত্রীদের মতে, বাসে ৬০-৬৫ জন যাত্রী ছিলেন, যদিও বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ বলছে বাসটি ৩০-৪০ জন যাত্রী নিয়ে রওনা দিয়েছিল। বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, “দুইটার দিকে গাজীপুর বা টাঙ্গাইল থেকে গাড়িতে ডাকাত গাড়িতে উঠে। যাত্রীদের কাছ থেকে তারা সব নিয়ে নেয়। পরে ভোর পাঁচটার দিকে কোথাও নেমে যায়, টাঙ্গাইল বা গাজীপুরে।”

ডাকাতরা বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোর ছয়টার দিকে যাত্রীরা মির্জাপুর থানায় গিয়ে মৌখিক অভিযোগ করে। বড়াইগ্রামের ওসি বলেন, “যাত্রীরা বাস আটক করে বলে যে ড্রাইভার-হেল্পাররা জড়িত এই ঘটনায়। তাদের যাত্রীদেরকে ওদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পরে আমরা গিয়ে ওদের আটক করি।”

 পুলিশের বক্তব্য

বড়াইগ্রাম ও মির্জাপুর থানার পুলিশ বলছে, ধর্ষণের অভিযোগ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। বড়াইগ্রামের ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ধর্ষণের কোনও বিষয় আমি পাইনি। এরকম কোনও ঘটনা আমায় কেউ বলেনি বা আমি সাক্ষী পাইনি।” মির্জাপুর থানার ওসি মোশাররফ হোসেনও একই রকম বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় বাসটি এলে সাত-আটজনের ডাকাত দল গাড়িতে উঠে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। মির্জাপুর সীমানায় এটা ঘটেনি। আর এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানায় কেউ অভিযোগ করেনি।”

 যাত্রীদের অভিযোগ ও পুলিশের প্রতিক্রিয়ায় অমিল

যাত্রীদের বর্ণনা ও পুলিশের বক্তব্যের মধ্যে বড় ধরনের অমিল দেখা যাচ্ছে। সোহাগ হাসান ও মজনু আকন্দ উভয়েই বলছেন যে নারী যাত্রীরা বড়াইগ্রামেই নেমে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। সোহাগ বলেন, “উনি (হিন্দু নারী) বাস থেকে নামার পর ওনার কান্নাকাটি দেখে আমরা সবাই ভেঙে পড়ি। উনি পুলিশের সামনে মান-সম্মানের পরোয়া না করে যতটুকু বলা যায়, বলছে।”

স্থানীয় সাংবাদিক হালিম খান যাত্রীদের বরাতে বলেন, “যাত্রীরা বলছে যে দুইজন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। নারী যাত্রী যারা ছিল, সবাই শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে। যেভাবে যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো হয়, তা হয়েছে। কিন্তু ধর্ষণের ব্যাপারে তারা বলছে যে পেছনের দিকে দু’জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়… ওই নারীদেরকে তো পাওয়া যায়নি। হয়তো তারা পথে নেমে গিয়েছে।”

বাসের চালক ও সহকারীদের ভূমিকা

ঘটনায় বাসের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে আটক করা হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, ডাকাতদের সঙ্গে বাসের চালক ও সহকারীরা যোগসাজশ করেছিলেন। তারা ডাকাতদেরকে যাত্রীদের টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্রের অবস্থান দেখিয়ে দিয়েছিলেন। বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “যাত্রীরা বাস আটক করে বলে যে ড্রাইভার-হেল্পাররা জড়িত এই ঘটনায়। তাদের যাত্রীদেরকে ওদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পরে আমরা গিয়ে ওদের আটক করি।”

আইনি প্রক্রিয়া ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। পুলিশ বলছে, ভিকটিমরা যদি মামলা করে, তাহলে তা গাজীপুর বা টাঙ্গাইলে দায়ের করা হবে। বাসের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে ৫৪ ধারায় আটক করা হয়েছে, তবে তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিক হালিম খান বলেন, “থানায় একটা রেফারেন্স করেছে। কারণ কোনও ভিকটিম যদি মামলা করে, তাহলে এই রেকর্ড সেই মামলার সাপোর্টে কাজ করবে।”

শেষ কথা: ন্যায়বিচারের দাবি

এই ঘটনায় যাত্রীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র, যা নারী নির্যাতন ও ডাকাতির মতো অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। যাত্রীরা ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন এবং আশা করছেন যে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। তবে পুলিশের প্রতিক্রিয়া ও তদন্তের গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা ঘটনাটির তদন্তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share