শিক্ষায় নতুন কারিকুলাম ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম? হাজার কোটি টাকার লুটপাটের অভিযোগ, তদন্তের ঘোষণা

- Update Time : ১১:৫৬:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৭৬ Time View
শিক্ষায় নতুন কারিকুলামের নামে বিশাল অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের তীব্র সমালোচনা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার শিক্ষায় নতুন কারিকুলাম চালু করেছিল। কারিকুলামের বিস্তারের জন্য ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ অর্থ লোপাট করা হয়েছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, প্রকল্প পরিচালক ৮২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা খরচ করেছেন, অথচ বাস্তবে কারিকুলামের বিস্তারে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
অভিযোগ অনুযায়ী, স্বৈরশাসকের পতনের পর বিতর্কিত কারিকুলাম বাতিল করা হলেও প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ মাহফুজ আলী নতুন করে আরও ১০০৮ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১২ সালের পাঠ্যক্রম ফিরিয়ে আনার পরও নতুন কারিকুলামের বিস্তারের নামে হাজার কোটি টাকা খরচের উদ্যোগ আসলে দুর্নীতিরই আরেক নাম। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এই প্রকল্পের নাম ছিল ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম’, বর্তমানে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘ডিসেমিনেশন অব ন্যাশনাল কারিকুলাম’।
লুটপাটের কৌশল:
পরিকল্পনার আওতায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ের শিক্ষক, শিক্ষা অফিসার, আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আবাসিক প্রশিক্ষণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জন্য ওরিয়েন্টেশনসহ বিভিন্ন খাতে বিশাল অঙ্কের ব্যয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প পরিচালক ও তার ঘনিষ্ঠজনরা এই প্রকল্পের নামে বড় অঙ্কের অর্থ লোপাট করেছেন।
স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর এই স্কিম বন্ধ করা হলেও, প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ মাহফুজ আলী এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে চাকরিরত থাকলেও, দীর্ঘদিন তিনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-তে কর্মরত ছিলেন। আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রভাবশালী নেতাদের সুপারিশে তিনি এই প্রকল্পের দায়িত্ব পান।
অকার্যকর কর্মচারীদের মাসে লাখ লাখ টাকা ব্যয়:
আগের কারিকুলাম বাতিল হয়ে যাওয়ার পরও স্কিমের ১২ কর্মকর্তা ও ৭ কর্মচারী কার্যত কোনো কাজ না করেই নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এতে সরকারের প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা এই কর্মচারীদের সরকারি কলেজে পদায়নের দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেছেন, “আওয়ামী লীগের সময় চালু করা বিতর্কিত কারিকুলামের বিস্তারের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এখনো সেই প্রকল্পের পরিচালক বহাল রয়েছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী আমলের লুটপাটের সঙ্গে জড়িত অনেককে এখনো অপসারণ করা হয়নি, যা দুঃখজনক।”
প্রকল্প পরিচালকের প্রতিক্রিয়া:
এই ব্যাপারে স্কিম পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, “যে সরকার থাকে, তার নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। আগের সরকারের সময়ে ৭ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। কারিকুলাম বাতিল হলেও সেই প্রশিক্ষণ বিফলে যায়নি।” তিনি দাবি করেন, “২০২৬ সাল থেকে নতুন কারিকুলাম শুরু হবে এবং সেই অনুযায়ীই স্কিম ডিজাইন করা হয়েছে। এখানে অর্থ অপচয়ের কোনো সুযোগ নেই।”
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত ঘোষণা:
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, “নতুন কারিকুলামের বিস্তারের নামে লুটপাটের অভিযোগ গুরুতর। ব্যয়কৃত অর্থের যথাযথ তদন্ত করা হবে। এছাড়া, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের নামে আর কোনো অতিরিক্ত ব্যয় করার সুযোগ নেই।”
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবিলম্বে এই প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকল্পের অর্থায়ন ও ব্যয়ের খতিয়ান পর্যালোচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
Please Share This Post in Your Social Media

শিক্ষায় নতুন কারিকুলাম ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম? হাজার কোটি টাকার লুটপাটের অভিযোগ, তদন্তের ঘোষণা

শিক্ষায় নতুন কারিকুলামের নামে বিশাল অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের তীব্র সমালোচনা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার শিক্ষায় নতুন কারিকুলাম চালু করেছিল। কারিকুলামের বিস্তারের জন্য ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্পের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ অর্থ লোপাট করা হয়েছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, প্রকল্প পরিচালক ৮২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা খরচ করেছেন, অথচ বাস্তবে কারিকুলামের বিস্তারে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
অভিযোগ অনুযায়ী, স্বৈরশাসকের পতনের পর বিতর্কিত কারিকুলাম বাতিল করা হলেও প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ মাহফুজ আলী নতুন করে আরও ১০০৮ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১২ সালের পাঠ্যক্রম ফিরিয়ে আনার পরও নতুন কারিকুলামের বিস্তারের নামে হাজার কোটি টাকা খরচের উদ্যোগ আসলে দুর্নীতিরই আরেক নাম। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এই প্রকল্পের নাম ছিল ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম’, বর্তমানে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘ডিসেমিনেশন অব ন্যাশনাল কারিকুলাম’।
লুটপাটের কৌশল:
পরিকল্পনার আওতায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ের শিক্ষক, শিক্ষা অফিসার, আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আবাসিক প্রশিক্ষণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জন্য ওরিয়েন্টেশনসহ বিভিন্ন খাতে বিশাল অঙ্কের ব্যয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্প পরিচালক ও তার ঘনিষ্ঠজনরা এই প্রকল্পের নামে বড় অঙ্কের অর্থ লোপাট করেছেন।
স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর এই স্কিম বন্ধ করা হলেও, প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ মাহফুজ আলী এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে চাকরিরত থাকলেও, দীর্ঘদিন তিনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-তে কর্মরত ছিলেন। আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রভাবশালী নেতাদের সুপারিশে তিনি এই প্রকল্পের দায়িত্ব পান।
অকার্যকর কর্মচারীদের মাসে লাখ লাখ টাকা ব্যয়:
আগের কারিকুলাম বাতিল হয়ে যাওয়ার পরও স্কিমের ১২ কর্মকর্তা ও ৭ কর্মচারী কার্যত কোনো কাজ না করেই নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। এতে সরকারের প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা এই কর্মচারীদের সরকারি কলেজে পদায়নের দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেছেন, “আওয়ামী লীগের সময় চালু করা বিতর্কিত কারিকুলামের বিস্তারের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এখনো সেই প্রকল্পের পরিচালক বহাল রয়েছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী আমলের লুটপাটের সঙ্গে জড়িত অনেককে এখনো অপসারণ করা হয়নি, যা দুঃখজনক।”
প্রকল্প পরিচালকের প্রতিক্রিয়া:
এই ব্যাপারে স্কিম পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, “যে সরকার থাকে, তার নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। আগের সরকারের সময়ে ৭ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। কারিকুলাম বাতিল হলেও সেই প্রশিক্ষণ বিফলে যায়নি।” তিনি দাবি করেন, “২০২৬ সাল থেকে নতুন কারিকুলাম শুরু হবে এবং সেই অনুযায়ীই স্কিম ডিজাইন করা হয়েছে। এখানে অর্থ অপচয়ের কোনো সুযোগ নেই।”
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও তদন্ত ঘোষণা:
শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, “নতুন কারিকুলামের বিস্তারের নামে লুটপাটের অভিযোগ গুরুতর। ব্যয়কৃত অর্থের যথাযথ তদন্ত করা হবে। এছাড়া, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের নামে আর কোনো অতিরিক্ত ব্যয় করার সুযোগ নেই।”
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবিলম্বে এই প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকল্পের অর্থায়ন ও ব্যয়ের খতিয়ান পর্যালোচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।