ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ নয়: উচ্চ আদালতের রায়ে দেশজুড়ে ক্ষোভ

- Update Time : ১২:০৬:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১৫৬ Time View
সম্প্রতি ছত্তিশগড় হাইকোর্টের একটি রায় ভারতে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এই রায়ে বলা হয়েছে যে স্ত্রীকে জোরপূর্বক অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্কে বাধ্য করা কোনও অপরাধ নয়। এই রায়ের ফলে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মুক্তি পেয়েছেন, যাঁর স্ত্রী জোরপূর্বক অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের শিকার হওয়ার পরপরই মারা যান। এই রায় ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ এবং নারীর অধিকার বিষয়ে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত করেছে, যেখানে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা একটি বড় সমস্যা।
নিম্ন আদালত ২০১৯ সালে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং ‘অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড’ এর জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে, গত সপ্তাহে উচ্চ আদালত এই রায় বাতিল করে। বিচারপতি নরেন্দ্র কুমার ব্যাস তাঁর রায়ে বলেন, ভারতের আইনে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। তাই স্বামী যদি স্ত্রীর অসম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন, এমনকি যদি তা অস্বাভাবিক হয়, তবুও তিনি অপরাধী সাব্যস্ত হবেন না। দীর্ঘদিন ধরেই এই আইনটি সমালোচিত হয়ে আসছে।
এই বিতর্কিত রায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে। অনেক আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী দাবি তুলছেন যে ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হোক। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রায়ের বিরুদ্ধে বহু মানুষ সরব হয়েছেন এবং জরুরি ভিত্তিতে আইনি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছেন।
বিখ্যাত আইনজীবী এবং নারী অধিকার কর্মী সুকৃতি চৌহান এই রায়কে নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে এই রায় সঠিক হতে পারে, কিন্তু নৈতিকভাবে এটি ভয়ঙ্কর। এটি আমাদের আইনি ব্যবস্থার অন্ধকার দিকটি উন্মোচিত করেছে।”
আইন বিশেষজ্ঞ প্রিয়াঙ্কা শুক্লা বলেন, “এই রায় এমন বার্তা পাঠায় যে, একজন স্বামী তার স্ত্রীর ওপর যে কোনো ধরনের অত্যাচার চালাতে পারেন, এমনকি যদি তার মৃত্যু ঘটে তবুও তিনি দোষী হবেন না।”
যে ঘটনাটি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে
ঘটনাটি ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বরের। অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন ট্রাক চালক। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি সেদিন রাতে তার স্ত্রীর অসম্মতিতে অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন। পরদিন সকালে স্ত্রী তার বোন ও অন্যান্য আত্মীয়দের সাহায্যে হাসপাতালে যান, কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান।
মৃত্যুর আগে পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই নারী বলেন যে স্বামীর জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কে তিনি গুরুতর আহত হন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের ফলে তার নিম্ন উদর এবং মলদ্বারে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল।
তবে, উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে এবং অভিযোগকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করেনি। আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা শুক্লা বলেন, “এটি দুঃখজনক যে, আদালতের রায়ে ভুক্তভোগীর প্রতি সামান্যতম সহানুভূতি প্রকাশ করা হয়নি।”
ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণের আইনগত অবস্থান
ভারত বিশ্বের ৩০টি দেশের মধ্যে একটি, যেখানে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশেও একই ধরনের আইন বিদ্যমান। ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা এখনও বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে না। যদিও যুক্তরাজ্য ১৯৯১ সালে এই বিধান বাতিল করেছে, ভারত আজও তা বহাল রেখেছে।
বহুবার এই আইন সংশোধনের দাবি উঠলেও সরকার বারবার এই বিষয়ে নিষ্ক্রিয় থেকেছে। সরকারের যুক্তি, এই আইন পরিবর্তন করা হলে বিবাহপ্রথার স্থায়িত্ব নষ্ট হতে পারে এবং মিথ্যা অভিযোগের সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে, নারীবাদী সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, যথাযথ আইনি কাঠামো তৈরি করা হলে এমন অভিযোগের অপব্যবহার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আন্তর্জাতিক আইনে বৈবাহিক ধর্ষণ
বিশ্বের বহু দেশ ইতোমধ্যে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
- যুক্তরাজ্য: ১৯৯১ সালে হাউস অফ লর্ডস ঘোষণা করে যে, বৈবাহিক ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ।
- যুক্তরাষ্ট্র: ৫০টি রাজ্যেই বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন রয়েছে।
- কানাডা: ১৯৮৩ সালে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
- জার্মানি: ১৯৯৭ সালে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
- ফ্রান্স: ১৯৯২ সালে আদালত ঘোষণা করে যে, বিয়ের মধ্যেও সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্ক অপরাধ।
- অস্ট্রেলিয়া: ১৯৯৪ সালের মধ্যে সব রাজ্যে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
- দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৯৯৩ সালে এই আইন চালু করা হয়।
- ব্রাজিল: বৈবাহিক ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি, যেমন Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women (CEDAW), দীর্ঘদিন ধরে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বারবার বৈবাহিক ধর্ষণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করার পক্ষে মত দিয়েছে।
আইনি সংস্কারের দাবি
সরকারি সমীক্ষা অনুসারে, ভারতে ৩২% বিবাহিত নারী তাদের স্বামীর দ্বারা শারীরিক, মানসিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ৮২% নারী শুধুমাত্র যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এই পরিসংখ্যান আইন সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
উচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক রায়ের পর আন্দোলন আরও জোরালো হয়েছে। দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা ও বেঙ্গালুরুসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও নতুন আইন প্রণয়নের দাবিতে প্রচার চালাচ্ছে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে এই রায় চ্যালেঞ্জ করার জন্য একাধিক আবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ হবে কিনা তা সময়ই বলবে, তবে পরিবর্তনের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। এই রায় ভারতের আইনি ব্যবস্থার একটি গুরুতর ফাঁক তুলে ধরেছে এবং বৈশ্বিকভাবে নারীর অধিকারের বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেছে।
Please Share This Post in Your Social Media

ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ নয়: উচ্চ আদালতের রায়ে দেশজুড়ে ক্ষোভ

সম্প্রতি ছত্তিশগড় হাইকোর্টের একটি রায় ভারতে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এই রায়ে বলা হয়েছে যে স্ত্রীকে জোরপূর্বক অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্কে বাধ্য করা কোনও অপরাধ নয়। এই রায়ের ফলে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মুক্তি পেয়েছেন, যাঁর স্ত্রী জোরপূর্বক অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের শিকার হওয়ার পরপরই মারা যান। এই রায় ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ এবং নারীর অধিকার বিষয়ে নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত করেছে, যেখানে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা একটি বড় সমস্যা।
নিম্ন আদালত ২০১৯ সালে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং ‘অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড’ এর জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে, গত সপ্তাহে উচ্চ আদালত এই রায় বাতিল করে। বিচারপতি নরেন্দ্র কুমার ব্যাস তাঁর রায়ে বলেন, ভারতের আইনে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। তাই স্বামী যদি স্ত্রীর অসম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন, এমনকি যদি তা অস্বাভাবিক হয়, তবুও তিনি অপরাধী সাব্যস্ত হবেন না। দীর্ঘদিন ধরেই এই আইনটি সমালোচিত হয়ে আসছে।
এই বিতর্কিত রায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে। অনেক আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী দাবি তুলছেন যে ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হোক। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রায়ের বিরুদ্ধে বহু মানুষ সরব হয়েছেন এবং জরুরি ভিত্তিতে আইনি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছেন।
বিখ্যাত আইনজীবী এবং নারী অধিকার কর্মী সুকৃতি চৌহান এই রায়কে নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে এই রায় সঠিক হতে পারে, কিন্তু নৈতিকভাবে এটি ভয়ঙ্কর। এটি আমাদের আইনি ব্যবস্থার অন্ধকার দিকটি উন্মোচিত করেছে।”
আইন বিশেষজ্ঞ প্রিয়াঙ্কা শুক্লা বলেন, “এই রায় এমন বার্তা পাঠায় যে, একজন স্বামী তার স্ত্রীর ওপর যে কোনো ধরনের অত্যাচার চালাতে পারেন, এমনকি যদি তার মৃত্যু ঘটে তবুও তিনি দোষী হবেন না।”
যে ঘটনাটি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে
ঘটনাটি ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বরের। অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন ট্রাক চালক। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি সেদিন রাতে তার স্ত্রীর অসম্মতিতে অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন। পরদিন সকালে স্ত্রী তার বোন ও অন্যান্য আত্মীয়দের সাহায্যে হাসপাতালে যান, কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান।
মৃত্যুর আগে পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই নারী বলেন যে স্বামীর জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কে তিনি গুরুতর আহত হন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের ফলে তার নিম্ন উদর এবং মলদ্বারে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল।
তবে, উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে এবং অভিযোগকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করেনি। আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা শুক্লা বলেন, “এটি দুঃখজনক যে, আদালতের রায়ে ভুক্তভোগীর প্রতি সামান্যতম সহানুভূতি প্রকাশ করা হয়নি।”
ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণের আইনগত অবস্থান
ভারত বিশ্বের ৩০টি দেশের মধ্যে একটি, যেখানে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশেও একই ধরনের আইন বিদ্যমান। ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা এখনও বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে না। যদিও যুক্তরাজ্য ১৯৯১ সালে এই বিধান বাতিল করেছে, ভারত আজও তা বহাল রেখেছে।
বহুবার এই আইন সংশোধনের দাবি উঠলেও সরকার বারবার এই বিষয়ে নিষ্ক্রিয় থেকেছে। সরকারের যুক্তি, এই আইন পরিবর্তন করা হলে বিবাহপ্রথার স্থায়িত্ব নষ্ট হতে পারে এবং মিথ্যা অভিযোগের সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে, নারীবাদী সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, যথাযথ আইনি কাঠামো তৈরি করা হলে এমন অভিযোগের অপব্যবহার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আন্তর্জাতিক আইনে বৈবাহিক ধর্ষণ
বিশ্বের বহু দেশ ইতোমধ্যে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
- যুক্তরাজ্য: ১৯৯১ সালে হাউস অফ লর্ডস ঘোষণা করে যে, বৈবাহিক ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ।
- যুক্তরাষ্ট্র: ৫০টি রাজ্যেই বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন রয়েছে।
- কানাডা: ১৯৮৩ সালে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
- জার্মানি: ১৯৯৭ সালে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
- ফ্রান্স: ১৯৯২ সালে আদালত ঘোষণা করে যে, বিয়ের মধ্যেও সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্ক অপরাধ।
- অস্ট্রেলিয়া: ১৯৯৪ সালের মধ্যে সব রাজ্যে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
- দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৯৯৩ সালে এই আইন চালু করা হয়।
- ব্রাজিল: বৈবাহিক ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি, যেমন Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women (CEDAW), দীর্ঘদিন ধরে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বারবার বৈবাহিক ধর্ষণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করার পক্ষে মত দিয়েছে।
আইনি সংস্কারের দাবি
সরকারি সমীক্ষা অনুসারে, ভারতে ৩২% বিবাহিত নারী তাদের স্বামীর দ্বারা শারীরিক, মানসিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ৮২% নারী শুধুমাত্র যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এই পরিসংখ্যান আইন সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
উচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক রায়ের পর আন্দোলন আরও জোরালো হয়েছে। দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা ও বেঙ্গালুরুসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও নতুন আইন প্রণয়নের দাবিতে প্রচার চালাচ্ছে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে এই রায় চ্যালেঞ্জ করার জন্য একাধিক আবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ হবে কিনা তা সময়ই বলবে, তবে পরিবর্তনের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। এই রায় ভারতের আইনি ব্যবস্থার একটি গুরুতর ফাঁক তুলে ধরেছে এবং বৈশ্বিকভাবে নারীর অধিকারের বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেছে।