সময়: বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ডিসি সম্মেলনে গিয়ে ‘কষ্ট পেলেন’ প্রধান উপদেষ্টা

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৭:০৯:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৫৮ Time View

2ea85238c5aaef71d1ab8c45a5760500 67b1ca282dd9b

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

2ea85238c5aaef71d1ab8c45a5760500 67b1ca282dd9b

প্রতি বছরের মতো এবারও জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের আয়োজন করেছে সরকার। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে সেখানে তাকে ‘প্রধান অতিথি’ হিসেবে সম্বোধন করা হলে তিনি এতে ‘কষ্ট’ পেয়েছেন বলে প্রকাশ করেন।

প্রধান অতিথি নয়, ক্যাপ্টেন হতে চান ইউনূস

বক্তব্য প্রদানকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, প্রধান অতিথি বলায় আমি কষ্ট পেয়েছি। যেন আমাকে খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে বাইরে রাখা হলো। অথচ আমি চাই দলের ক্যাপ্টেন হতে, যে দলের নেতৃত্ব দেবে, সবাইকে একত্রিত করবে এবং খেলার কৌশল নির্ধারণ করবে। অতিথি হিসেবে আমি এখানে বক্তব্য দিতে চাই না, আমি নেতৃত্ব দিতে চাই।

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, বাংলাদেশে যে কোনো উন্নয়ন কার্যক্রমকে আমি একটি বড় খেলার সঙ্গে তুলনা করিহোক সেটা ক্রিকেট বা ফুটবল। এই খেলায় আমাদের প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। একজন ব্যাটসম্যান, একজন বোলার, একজন গোলকিপার যেমন দলের অপরিহার্য অংশ, তেমনি প্রশাসন, নীতিনির্ধারক, জেলা প্রশাসক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারাও দেশের উন্নয়নে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই মিলে এই খেলা পরিচালনা

করি। তাই আমাকে অতিথি হিসেবে দেখালে, আমার মনে হয় যেন আমাকে খেলার বাইরে রাখা হয়েছে, যেখানে আমি আসলে ক্যাপ্টেনের ভূমিকায় থাকতে চাই।

ডিসি সম্মেলনের গুরুত্ব ভূমিকা

প্রতি বছর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়।

এই সম্মেলনে জেলা প্রশাসকরা মাঠপর্যায়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নীতিনির্ধারকদের কাছে সুপারিশ উপস্থাপন করেন। এতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয় এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করা হয়।

এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উপদেষ্টা-সচিবরা উপস্থিত থাকবেন এবং ডিসিদের দেওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণ করা হবে।

জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা চ্যালেঞ্জ

জেলা প্রশাসকরা মাঠপর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তারা সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি দমন, ভূমি প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

তবে বর্তমান সময়ে জেলা প্রশাসকদের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যেমন—

  • স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ করা
  • দুর্নীতি রোধ করা
  • উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি
  • আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখা
  • ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশাসনকে আরও আধুনিক করা

এবারের ডিসি সম্মেলনে এসব বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা হবে এবং ভবিষ্যতে প্রশাসনকে আরও কার্যকর ও জনবান্ধব করার উপায় খোঁজা হবে।

সম্মেলনের মূল এজেন্ডা

এবারের ডিসি সম্মেলনে প্রধানত নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে—

  1. উন্নয়ন প্রকল্প বাজেট: জেলা পর্যায়ে চলমান এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পর্যালোচনা ও বাজেট বরাদ্দ।
  2. আইনশৃঙ্খলা: নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করা এবং অপরাধ দমন কৌশল নির্ধারণ।
  3. প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি: মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও কার্যকর করার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী কৌশল গ্রহণ।
  4. দুর্নীতি দমন: স্থানীয় প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উপায় খোঁজা।
  5. জনসেবার মান উন্নয়ন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব আরও সুসংহত করা।

ডিসি সম্মেলন থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো সরাসরি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে, যা সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে আরও কার্যকর ও জনবান্ধব করতে সহায়তা করবে।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের তাৎপর্য

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি প্রশাসনিক কাঠামোতে একটি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে চান এবং নেতৃত্ব দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে কাজ করছেন। তিনি প্রশাসনকে একটি দল হিসেবে দেখতে চান, যেখানে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া হবে।

তার এই বক্তব্য জেলা প্রশাসকদের অনুপ্রাণিত করতে পারে, যাতে তারা আরও দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করেন এবং সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে নিজেদের সর্বোচ্চটা দেন।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ডিসি সম্মেলনে গিয়ে ‘কষ্ট পেলেন’ প্রধান উপদেষ্টা

Update Time : ০৭:০৯:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

2ea85238c5aaef71d1ab8c45a5760500 67b1ca282dd9b

প্রতি বছরের মতো এবারও জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের আয়োজন করেছে সরকার। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে সেখানে তাকে ‘প্রধান অতিথি’ হিসেবে সম্বোধন করা হলে তিনি এতে ‘কষ্ট’ পেয়েছেন বলে প্রকাশ করেন।

প্রধান অতিথি নয়, ক্যাপ্টেন হতে চান ইউনূস

বক্তব্য প্রদানকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, প্রধান অতিথি বলায় আমি কষ্ট পেয়েছি। যেন আমাকে খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে বাইরে রাখা হলো। অথচ আমি চাই দলের ক্যাপ্টেন হতে, যে দলের নেতৃত্ব দেবে, সবাইকে একত্রিত করবে এবং খেলার কৌশল নির্ধারণ করবে। অতিথি হিসেবে আমি এখানে বক্তব্য দিতে চাই না, আমি নেতৃত্ব দিতে চাই।

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, বাংলাদেশে যে কোনো উন্নয়ন কার্যক্রমকে আমি একটি বড় খেলার সঙ্গে তুলনা করিহোক সেটা ক্রিকেট বা ফুটবল। এই খেলায় আমাদের প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। একজন ব্যাটসম্যান, একজন বোলার, একজন গোলকিপার যেমন দলের অপরিহার্য অংশ, তেমনি প্রশাসন, নীতিনির্ধারক, জেলা প্রশাসক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারাও দেশের উন্নয়নে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই মিলে এই খেলা পরিচালনা করি।

তাই আমাকে অতিথি হিসেবে দেখালে, আমার মনে হয় যেন আমাকে খেলার বাইরে রাখা হয়েছে, যেখানে আমি আসলে ক্যাপ্টেনের ভূমিকায় থাকতে চাই।

ডিসি সম্মেলনের গুরুত্ব ভূমিকা

প্রতি বছর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়।

এই সম্মেলনে জেলা প্রশাসকরা মাঠপর্যায়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নীতিনির্ধারকদের কাছে সুপারিশ উপস্থাপন করেন। এতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয় এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করা হয়।

এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উপদেষ্টা-সচিবরা উপস্থিত থাকবেন এবং ডিসিদের দেওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণ করা হবে।

জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা চ্যালেঞ্জ

জেলা প্রশাসকরা মাঠপর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তারা সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি দমন, ভূমি প্রশাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

তবে বর্তমান সময়ে জেলা প্রশাসকদের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যেমন—

  • স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ করা
  • দুর্নীতি রোধ করা
  • উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি
  • আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখা
  • ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশাসনকে আরও আধুনিক করা

এবারের ডিসি সম্মেলনে এসব বিষয় নিয়ে গভীর আলোচনা হবে এবং ভবিষ্যতে প্রশাসনকে আরও কার্যকর ও জনবান্ধব করার উপায় খোঁজা হবে।

সম্মেলনের মূল এজেন্ডা

এবারের ডিসি সম্মেলনে প্রধানত নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে—

  1. উন্নয়ন প্রকল্প বাজেট: জেলা পর্যায়ে চলমান এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পর্যালোচনা ও বাজেট বরাদ্দ।
  2. আইনশৃঙ্খলা: নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করা এবং অপরাধ দমন কৌশল নির্ধারণ।
  3. প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি: মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও কার্যকর করার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী কৌশল গ্রহণ।
  4. দুর্নীতি দমন: স্থানীয় প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উপায় খোঁজা।
  5. জনসেবার মান উন্নয়ন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব আরও সুসংহত করা।

ডিসি সম্মেলন থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো সরাসরি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে, যা সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে আরও কার্যকর ও জনবান্ধব করতে সহায়তা করবে।

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের তাৎপর্য

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি প্রশাসনিক কাঠামোতে একটি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে চান এবং নেতৃত্ব দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে কাজ করছেন। তিনি প্রশাসনকে একটি দল হিসেবে দেখতে চান, যেখানে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশকে এগিয়ে নেওয়া হবে।

তার এই বক্তব্য জেলা প্রশাসকদের অনুপ্রাণিত করতে পারে, যাতে তারা আরও দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করেন এবং সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে নিজেদের সর্বোচ্চটা দেন।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share