বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য

- Update Time : ১১:১২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১০২ Time View

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বের বিস্তারিত
এক ভারতীয় সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘আমরা জানি বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে বাইডেন প্রশাসনের সময় মার্কিন ডিপ স্টেট সক্রিয় ছিল। সম্প্রতি নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জুনিয়র সোরোসের বৈঠকও সেই সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ দেয়। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?’
ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘না, আমাদের ডিপ স্টেটের এখানে (বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে) কোনো ভূমিকা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) এই বিষয়ে বহুদিন ধরে কাজ করছেন এবং ভারত বহু বছর ধরে বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করে আসছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ওপরই নির্ভর করতে চাই, কারণ ভারত এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত ভূমিকা পালন করে আসছে।’
ট্রাম্পের বক্তব্যের বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যে ভারতের নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান ভারতের কৌশলগত গুরুত্বকে বাড়িয়ে তুলবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য ভারতের আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে অবস্থানকে আরও সুসংহত করবে এবং ভারতকে বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ওপর আরও প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দেবে।
এর ফলে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের প্রভাব বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই বলেই ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা আরও জোরালো করতে পারে। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে, কারণ তারা তাদের কূটনৈতিক কৌশল নির্ধারণের সময় ভারতের অবস্থানকে আরও গুরুত্ব দিতে বাধ্য হবে। একই সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সমীকরণ পরিবর্তন করতে পারে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশ, ভারত এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা ও সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ভারত–মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্ক
এ সময় ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়েও আলোচনা হয়। ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই উভয় দেশের বাণিজ্যে ভারসাম্য বজায় থাকুক।’
ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, ‘ভারত যে পরিমাণ শুল্ক আরোপ করবে, আমরাও সমান শুল্ক আরোপ করবো। মূলত, আমরা সমান সুবিধা চাই।’ তার এই বক্তব্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি ভারতের বাজারে আমেরিকান পণ্যের আরও প্রবেশাধিকার চান এবং এই সম্পর্ককে আরও লাভজনক করতে চান।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
ট্রাম্পের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বক্তব্য বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের গুরুত্বকে আরও সামনে নিয়ে এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের শক্তিশালী অবস্থান ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে গঠিত হবে এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো ভূমিকা রাখেনি বলে দাবি করছে। তবে এই অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা ও যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের গুরুত্বও তার বক্তব্যে উঠে এসেছে। এই পরিস্থিতির ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক কীভাবে গড়ে ওঠে, সেটি পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা
Please Share This Post in Your Social Media

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য


বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বের বিস্তারিত
এক ভারতীয় সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘আমরা জানি বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে বাইডেন প্রশাসনের সময় মার্কিন ডিপ স্টেট সক্রিয় ছিল। সম্প্রতি নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জুনিয়র সোরোসের বৈঠকও সেই সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ দেয়। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?’
ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘না, আমাদের ডিপ স্টেটের এখানে (বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে) কোনো ভূমিকা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) এই বিষয়ে বহুদিন ধরে কাজ করছেন এবং ভারত বহু বছর ধরে বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করে আসছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ওপরই নির্ভর করতে চাই, কারণ ভারত এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত ভূমিকা পালন করে আসছে।’
ট্রাম্পের বক্তব্যের বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যে ভারতের নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান ভারতের কৌশলগত গুরুত্বকে বাড়িয়ে তুলবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য ভারতের আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে অবস্থানকে আরও সুসংহত করবে এবং ভারতকে বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ওপর আরও প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দেবে।
এর ফলে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের প্রভাব বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই বলেই ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা আরও জোরালো করতে পারে। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে, কারণ তারা তাদের কূটনৈতিক কৌশল নির্ধারণের সময় ভারতের অবস্থানকে আরও গুরুত্ব দিতে বাধ্য হবে। একই সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সমীকরণ পরিবর্তন করতে পারে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশ, ভারত এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা ও সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ভারত–মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্ক
এ সময় ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়েও আলোচনা হয়। ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই উভয় দেশের বাণিজ্যে ভারসাম্য বজায় থাকুক।’
ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, ‘ভারত যে পরিমাণ শুল্ক আরোপ করবে, আমরাও সমান শুল্ক আরোপ করবো। মূলত, আমরা সমান সুবিধা চাই।’ তার এই বক্তব্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি ভারতের বাজারে আমেরিকান পণ্যের আরও প্রবেশাধিকার চান এবং এই সম্পর্ককে আরও লাভজনক করতে চান।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
ট্রাম্পের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বক্তব্য বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের গুরুত্বকে আরও সামনে নিয়ে এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের শক্তিশালী অবস্থান ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে গঠিত হবে এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো ভূমিকা রাখেনি বলে দাবি করছে। তবে এই অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা ও যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের গুরুত্বও তার বক্তব্যে উঠে এসেছে। এই পরিস্থিতির ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক কীভাবে গড়ে ওঠে, সেটি পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা