খেলাফত মজলিসের সমাবেশ: উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে সতর্কতার আহ্বান

- Update Time : ১০:৪৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৮৫ Time View

রাজশাহীতে খেলাফত মজলিসের এক বিশাল গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে সংগঠনের মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমেদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সাম্প্রতিক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহারের আলটিমেটাম দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে দলের আমির মামুনুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলেন, “মাত্রাতিরিক্ত সুশীলগিরি করবেন না।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন যে, ধর্মপ্রাণ জনগণের প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্য সহ্য করা হবে না।
বক্তাদের বক্তব্য ও প্রতিবাদ
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমেদ বলেন, “তৌহিদি জনতা মানে যারা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাদের উগ্রবাদী বলে অভিহিত করেছেন। এভাবে পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে উগ্রবাদী বলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, আপনাকে মুখ সামলে কথা বলতে হবে। যদি বাংলাদেশের মুসলমান গর্জে ওঠে, পালাবার পথ পাবেন না। আপনি মুসলমানদের উগ্রবাদী বলতে পারেন না। ৫ আগস্টের পর দেশের জনগণ এ ধরনের বক্তব্য মেনে নেবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে, অন্যথায় দেশের জনগণ আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”
জালালুদ্দিন আহমেদের এই বক্তব্যের সময় সমাবেশে উপস্থিত হাজারো সমর্থক স্লোগান দেন এবং মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। অনেকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসেন যেখানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।
বিতর্কের সূত্রপাত
উল্লেখ্য, গত সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মন্তব্য করেন, “অভ্যুত্থানের পক্ষে হলে মব করা বন্ধ করুন, আর যদি মব করেন, তাহলে আপনাদেরও ডেভিল (শয়তান) হিসেবে ট্রিট করা হবে।” তিনি আরও লেখেন, “তৌহিদি জনতা! আপনারা দেড় দশক পরে শান্তিতে ধর্ম ও সংস্কৃতি পালনের সুযোগ পেয়েছেন। আপনাদের আহাম্মকি কিংবা উগ্রতা আপনাদের সে শান্তি বিনষ্টের কারণ হতে যাচ্ছে। জুলুম করা থেকে বিরত থাকুন, নইলে আপনাদের ওপর জুলুম অবধারিত হবে।”
এই মন্তব্যের জবাবে খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং তা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। সমাবেশে বক্তারা একত্রে বলেন, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এ ধরনের মন্তব্য দেশের জনগণ মেনে নেবে না।”
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ব্যাখ্যা
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ে মাহফুজ আলম মঙ্গলবার রাতে আরেকটি ফেসবুক পোস্ট করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, “তৌহিদি জনতা নামে পরিচিত যারা, তাদের আমি হুমকি দিইনি, বরং সতর্ক করেছি। কারণ, গত পনেরো বছর নিপীড়ন সহ্য করে এবং অভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখে একটি সম্ভাবনা তৈরি করেছেন, কিন্তু মব সংস্কৃতির কারণে তা নষ্ট হচ্ছে।”
তার এই ব্যাখ্যা পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করতে পারে বলে আশা করা হলেও, খেলাফত মজলিসের নেতারা এখনো তার বক্তব্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে অনড়। তারা বলছেন, “এটি শুধু একটি ব্যাখ্যা নয়, বরং একটি কৌশল। আসল কথা হলো, মাহফুজ আলম ধর্মপ্রাণ জনগণের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি
এই বিতর্কের ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। ধর্মীয় অনুভূতি এবং রাজনৈতিক বক্তব্যের সংঘাত ভবিষ্যতে আরও বড় আকার নিতে পারে। এখন দেখার বিষয়, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেন কি না এবং সরকার এই সংকট নিরসনে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
সমাবেশের পরবর্তী পদক্ষেপ
সমাবেশ শেষে খেলাফত মজলিসের নেতারা পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তারা জানিয়েছেন, “যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাহফুজ আলম তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন, তাহলে দেশের প্রতিটি জেলায় গণবিক্ষোভ করা হবে।” এ ছাড়া তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সমাপ্তি
এই ঘটনার ফলে বাংলাদেশে ধর্ম ও রাজনীতির সংযোগ আরও গভীরভাবে আলোচনায় এসেছে। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি কীভাবে বিকশিত হয়, তা এখন নজর রাখার বিষয়। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই সংকট সামাল দেবে, তা দেখার অপেক্ষায় আছে পুরো দেশ।
Please Share This Post in Your Social Media

খেলাফত মজলিসের সমাবেশ: উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে সতর্কতার আহ্বান


রাজশাহীতে খেলাফত মজলিসের এক বিশাল গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে সংগঠনের মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমেদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সাম্প্রতিক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহারের আলটিমেটাম দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে দলের আমির মামুনুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলেন, “মাত্রাতিরিক্ত সুশীলগিরি করবেন না।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন যে, ধর্মপ্রাণ জনগণের প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্য সহ্য করা হবে না।
বক্তাদের বক্তব্য ও প্রতিবাদ
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমেদ বলেন, “তৌহিদি জনতা মানে যারা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তাদের উগ্রবাদী বলে অভিহিত করেছেন। এভাবে পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে উগ্রবাদী বলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, আপনাকে মুখ সামলে কথা বলতে হবে। যদি বাংলাদেশের মুসলমান গর্জে ওঠে, পালাবার পথ পাবেন না। আপনি মুসলমানদের উগ্রবাদী বলতে পারেন না। ৫ আগস্টের পর দেশের জনগণ এ ধরনের বক্তব্য মেনে নেবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে, অন্যথায় দেশের জনগণ আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”
জালালুদ্দিন আহমেদের এই বক্তব্যের সময় সমাবেশে উপস্থিত হাজারো সমর্থক স্লোগান দেন এবং মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। অনেকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসেন যেখানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।
বিতর্কের সূত্রপাত
উল্লেখ্য, গত সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মন্তব্য করেন, “অভ্যুত্থানের পক্ষে হলে মব করা বন্ধ করুন, আর যদি মব করেন, তাহলে আপনাদেরও ডেভিল (শয়তান) হিসেবে ট্রিট করা হবে।” তিনি আরও লেখেন, “তৌহিদি জনতা! আপনারা দেড় দশক পরে শান্তিতে ধর্ম ও সংস্কৃতি পালনের সুযোগ পেয়েছেন। আপনাদের আহাম্মকি কিংবা উগ্রতা আপনাদের সে শান্তি বিনষ্টের কারণ হতে যাচ্ছে। জুলুম করা থেকে বিরত থাকুন, নইলে আপনাদের ওপর জুলুম অবধারিত হবে।”
এই মন্তব্যের জবাবে খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং তা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। সমাবেশে বক্তারা একত্রে বলেন, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এ ধরনের মন্তব্য দেশের জনগণ মেনে নেবে না।”
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ব্যাখ্যা
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সমালোচনার মুখে পড়ে মাহফুজ আলম মঙ্গলবার রাতে আরেকটি ফেসবুক পোস্ট করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, “তৌহিদি জনতা নামে পরিচিত যারা, তাদের আমি হুমকি দিইনি, বরং সতর্ক করেছি। কারণ, গত পনেরো বছর নিপীড়ন সহ্য করে এবং অভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখে একটি সম্ভাবনা তৈরি করেছেন, কিন্তু মব সংস্কৃতির কারণে তা নষ্ট হচ্ছে।”
তার এই ব্যাখ্যা পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করতে পারে বলে আশা করা হলেও, খেলাফত মজলিসের নেতারা এখনো তার বক্তব্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে অনড়। তারা বলছেন, “এটি শুধু একটি ব্যাখ্যা নয়, বরং একটি কৌশল। আসল কথা হলো, মাহফুজ আলম ধর্মপ্রাণ জনগণের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি
এই বিতর্কের ফলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। ধর্মীয় অনুভূতি এবং রাজনৈতিক বক্তব্যের সংঘাত ভবিষ্যতে আরও বড় আকার নিতে পারে। এখন দেখার বিষয়, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেন কি না এবং সরকার এই সংকট নিরসনে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
সমাবেশের পরবর্তী পদক্ষেপ
সমাবেশ শেষে খেলাফত মজলিসের নেতারা পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তারা জানিয়েছেন, “যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাহফুজ আলম তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন, তাহলে দেশের প্রতিটি জেলায় গণবিক্ষোভ করা হবে।” এ ছাড়া তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সমাপ্তি
এই ঘটনার ফলে বাংলাদেশে ধর্ম ও রাজনীতির সংযোগ আরও গভীরভাবে আলোচনায় এসেছে। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি কীভাবে বিকশিত হয়, তা এখন নজর রাখার বিষয়। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই সংকট সামাল দেবে, তা দেখার অপেক্ষায় আছে পুরো দেশ।