স্বতন্ত্র পরিচালকরা অনিয়মের জালে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা

- Update Time : ১২:৪৫:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১৮০ Time View
বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে ২০২১ সালে স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই পদক্ষেপটি ছিল ব্যাংকিং খাতে শুদ্ধাচার এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যার উদ্দেশ্য ছিল স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং আর্থিক অনিয়ম রোধ করা। তবে, বর্তমানে এই স্বতন্ত্র পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন ও শুদ্ধাচারের পথে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ছয় মাসে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে এসব ব্যাংক পরিদর্শন শুরু করেছে। অভিযোগগুলো বিশেষত পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান, জনবল নিয়োগ, বদলি ও পদায়নসহ অন্যান্য গুরুতর অনিয়মের দিকে ইঙ্গিত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের কাছে অভিযোগ পাওয়ার পর, বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য যেমন নিয়োগ, বিনিয়োগ, ঋণ পুনঃতফসিল এবং আদায়ের পরিমাণ চেয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তদন্ত কার্যক্রম শুরু হলেও, ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্যাপক অনিয়ম এবং স্বচ্ছতার অভাব বিষয়টি উদ্বেগজনক।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি স্বতন্ত্র পরিচালকরাও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের মতো অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন, তবে সরকারের আর্থিক খাত সংস্কারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে এবং ব্যাংকিং খাতের শুদ্ধাচারে আরও বাধা সৃষ্টি হবে। এর ফলে আমানতকারীদের মধ্যে আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে, যা দেশের আর্থিক খাতের জন্য ক্ষতিকর। এই পরিস্থিতি দেশে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে, যা স্বাভাবিকভাবে জনসাধারণের আস্থা ও বিনিয়োগের উপর প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ
বাংলাদেশ ব্যাংক, যা দেশের ব্যাংকিং খাতের রেগুলেটর হিসেবে কাজ করে, তার জন্য এ পরিস্থিতি এক বড় চ্যালেঞ্জ।৮ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিয়োগ দেয়। তবে, কিছু সময় পরই এসব ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। বিশেষ করে, ইসলামী ব্যাংক এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে, স্বতন্ত্র পরিচালকেরা ঋণ বিতরণে পক্ষপাতিত্ব এবং পছন্দের জনবল নিয়োগে অনিয়ম করেছেন।
এছাড়া, ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল জলিলকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর, বিষয়টি আরও গুরুত্ব সহকারে সামনে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি নিজের জামাতাকে ইসলামী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ দিয়েছেন এবং পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করেছেন। এই ধরনের অনিয়মের কারণে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়।
অভিযোগগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে, ঋণ বিতরণে পক্ষপাতিত্ব, জনবল নিয়োগে অনিয়ম এবং ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে হস্তক্ষেপের মতো গুরুতর কৃতকর্ম। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা ২১ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের ইনক্রিমেন্টের পরিমাণ বিশাল। এটি ব্যাংকের ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ টাকার অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। ব্যাংকটি প্রথম দফায় ২১ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১৩ জন ইতোমধ্যেই যোগদান করেছেন। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, ৬টি ইনক্রিমেন্টসহ একজন ইভিপি, ১২টি ইনক্রিমেন্টসহ একজন এসভিপি, ১৩টি ইনক্রিমেন্টসহ তিনজন এসভিপি, ৯টি ইনক্রিমেন্টসহ দুজন ভিপি, আটটি ইনক্রিমেন্টসহ একজন ভিপি, দুজন এভিপি এবং তিনজন এসএভিপি।
এছাড়া, ৮৭৫ কোটি টাকার ঋণের সুদের হার কমানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রিতি কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড, অক্সফোর্ড কালারস লিমিটেড এবং প্রিতি ওয়াশিং লিমিটেডের ঋণ ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ শতাংশ সুদে পুনঃতফসিল করা হয়েছে, যার কারণে ব্যাংকটির আয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা কমে যাবে। এসব বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এ সংক্রান্ত সব তথ্য সংগ্রহ করছে।
এটা ব্যাংকিং খাতের জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতি
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এই পরিস্থিতিতে বলেন, “যদি এ ধরনের অনিয়ম চলতে থাকে, তাহলে দেশের আর্থিক সংস্কার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে এবং জনগণের আস্থা কমে যাবে। ব্যাংকিং খাতে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত না হলে, সাধারণ মানুষ তাদের আমানত রাখার ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা কমে যাবে।”
এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক শুরু হওয়া এই তদন্ত যদি যথাযথভাবে পরিচালিত না হয়, তবে তা দেশের ব্যাংকিং খাতের শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় এক বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। শুদ্ধাচার ও স্বচ্ছতার অভাবে, দেশের ব্যাংকিং খাতে অদূর ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে, যা পুরো দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়বদ্ধতা এবং দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজন
বাংলাদেশ ব্যাংক, যেহেতু দেশের প্রধান আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তার দায়িত্ব হল এসব অনিয়মের ব্যাপারে দ্রুত এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করা। ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো যাচাই করে, যদি প্রমাণিত হয় যে স্বতন্ত্র পরিচালকরাও অনিয়মে জড়িত, তবে বাংলাদেশ ব্যাংককে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা, শুদ্ধাচার এবং আইনানুগ পদক্ষেপের উপর আরও জোর দিতে হবে। সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার অবশ্যই এসব বিষয়ে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় দেশের ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের খেসারত এক বৃহত্তর অর্থনৈতিক সংকট হিসেবে দেশের জনগণের উপর পড়তে পারে।
Please Share This Post in Your Social Media

স্বতন্ত্র পরিচালকরা অনিয়মের জালে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা

বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে ২০২১ সালে স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই পদক্ষেপটি ছিল ব্যাংকিং খাতে শুদ্ধাচার এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যার উদ্দেশ্য ছিল স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং আর্থিক অনিয়ম রোধ করা। তবে, বর্তমানে এই স্বতন্ত্র পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন ও শুদ্ধাচারের পথে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ছয় মাসে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে এসব ব্যাংক পরিদর্শন শুরু করেছে। অভিযোগগুলো বিশেষত পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান, জনবল নিয়োগ, বদলি ও পদায়নসহ অন্যান্য গুরুতর অনিয়মের দিকে ইঙ্গিত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের কাছে অভিযোগ পাওয়ার পর, বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য যেমন নিয়োগ, বিনিয়োগ, ঋণ পুনঃতফসিল এবং আদায়ের পরিমাণ চেয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তদন্ত কার্যক্রম শুরু হলেও, ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্যাপক অনিয়ম এবং স্বচ্ছতার অভাব বিষয়টি উদ্বেগজনক।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি স্বতন্ত্র পরিচালকরাও শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের মতো অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন, তবে সরকারের আর্থিক খাত সংস্কারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে এবং ব্যাংকিং খাতের শুদ্ধাচারে আরও বাধা সৃষ্টি হবে। এর ফলে আমানতকারীদের মধ্যে আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে, যা দেশের আর্থিক খাতের জন্য ক্ষতিকর। এই পরিস্থিতি দেশে বৃহত্তর অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে, যা স্বাভাবিকভাবে জনসাধারণের আস্থা ও বিনিয়োগের উপর প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ
বাংলাদেশ ব্যাংক, যা দেশের ব্যাংকিং খাতের রেগুলেটর হিসেবে কাজ করে, তার জন্য এ পরিস্থিতি এক বড় চ্যালেঞ্জ।৮ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিয়োগ দেয়। তবে, কিছু সময় পরই এসব ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। বিশেষ করে, ইসলামী ব্যাংক এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে, স্বতন্ত্র পরিচালকেরা ঋণ বিতরণে পক্ষপাতিত্ব এবং পছন্দের জনবল নিয়োগে অনিয়ম করেছেন।
এছাড়া, ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল জলিলকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর, বিষয়টি আরও গুরুত্ব সহকারে সামনে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি নিজের জামাতাকে ইসলামী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ দিয়েছেন এবং পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করেছেন। এই ধরনের অনিয়মের কারণে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়।
অভিযোগগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে, ঋণ বিতরণে পক্ষপাতিত্ব, জনবল নিয়োগে অনিয়ম এবং ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে হস্তক্ষেপের মতো গুরুতর কৃতকর্ম। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা ২১ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করেছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের ইনক্রিমেন্টের পরিমাণ বিশাল। এটি ব্যাংকের ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ৫০ লাখ টাকার অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। ব্যাংকটি প্রথম দফায় ২১ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১৩ জন ইতোমধ্যেই যোগদান করেছেন। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, ৬টি ইনক্রিমেন্টসহ একজন ইভিপি, ১২টি ইনক্রিমেন্টসহ একজন এসভিপি, ১৩টি ইনক্রিমেন্টসহ তিনজন এসভিপি, ৯টি ইনক্রিমেন্টসহ দুজন ভিপি, আটটি ইনক্রিমেন্টসহ একজন ভিপি, দুজন এভিপি এবং তিনজন এসএভিপি।
এছাড়া, ৮৭৫ কোটি টাকার ঋণের সুদের হার কমানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, সুহি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রিতি কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড, অক্সফোর্ড কালারস লিমিটেড এবং প্রিতি ওয়াশিং লিমিটেডের ঋণ ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ শতাংশ সুদে পুনঃতফসিল করা হয়েছে, যার কারণে ব্যাংকটির আয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা কমে যাবে। এসব বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এ সংক্রান্ত সব তথ্য সংগ্রহ করছে।
এটা ব্যাংকিং খাতের জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতি
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এই পরিস্থিতিতে বলেন, “যদি এ ধরনের অনিয়ম চলতে থাকে, তাহলে দেশের আর্থিক সংস্কার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে এবং জনগণের আস্থা কমে যাবে। ব্যাংকিং খাতে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত না হলে, সাধারণ মানুষ তাদের আমানত রাখার ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা কমে যাবে।”
এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক শুরু হওয়া এই তদন্ত যদি যথাযথভাবে পরিচালিত না হয়, তবে তা দেশের ব্যাংকিং খাতের শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় এক বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। শুদ্ধাচার ও স্বচ্ছতার অভাবে, দেশের ব্যাংকিং খাতে অদূর ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে, যা পুরো দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়বদ্ধতা এবং দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজন
বাংলাদেশ ব্যাংক, যেহেতু দেশের প্রধান আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তার দায়িত্ব হল এসব অনিয়মের ব্যাপারে দ্রুত এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করা। ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো যাচাই করে, যদি প্রমাণিত হয় যে স্বতন্ত্র পরিচালকরাও অনিয়মে জড়িত, তবে বাংলাদেশ ব্যাংককে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা, শুদ্ধাচার এবং আইনানুগ পদক্ষেপের উপর আরও জোর দিতে হবে। সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার অবশ্যই এসব বিষয়ে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় দেশের ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের খেসারত এক বৃহত্তর অর্থনৈতিক সংকট হিসেবে দেশের জনগণের উপর পড়তে পারে।