সময়: বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

পুলিশ সংস্কার কমিশন: দুর্নীতির ৯টি খাত চিহ্নিত

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১১:৫১:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১৩১ Time View

police corruption 1

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

 

 

পুলিশ সংস্কার কমিশন সম্প্রতি এক গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে প্রচলিত দুর্নীতির ৯টি খাত চিহ্নিত করেছে, যা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশ বিভাগের প্রতি আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। দুর্নীতির এই শিকড় উপড়ে ফেলার লক্ষ্যে কমিশন একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেছে, যা নির্দিষ্ট দুর্নীতির খাতগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এছাড়া, পুলিশ বাহিনীর কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা এবং জনসাধারণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করার জন্য কমিশন বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পুলিশ প্রশাসনের শুদ্ধি অভিযান ও কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়, তাই দুর্নীতি প্রতিরোধের পাশাপাশি আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং জনবান্ধব পুলিশিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের প্রধান বিষয়বস্তু

গত শনিবার পুলিশ সংস্কার কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এর আগে ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়। প্রতিবেদনে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের বিরুদ্ধে ২ লাখ ৪৫ হাজার লঘুদণ্ড এবং ২৩ হাজার ৫৫০টি গুরুদণ্ডের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, পুলিশের অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের অন্যান্য অংশের মতো পুলিশ বিভাগও ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। পুলিশ সদস্যদের ওপর জনসাধারণের আস্থা কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এই অব্যাহত দুর্নীতি।

দুর্নীতির চিহ্নিত ৯টি খাত

প্রতিবেদনে চিহ্নিত দুর্নীতির ৯টি খাতকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে—পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি এবং বাহিরাগত দুর্নীতি।

অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি

১. ঘুষ গ্রহণ আর্থিক দুর্নীতি: থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা, মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার-বাণিজ্য, অভিযোগপত্র প্রদান, মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তির পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের ঘুষ গ্রহণের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। অভিযুক্তদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতা করতেও দেখা যায়।

২.রিমান্ডে নির্যাতন: অভিযুক্ত আসামিদের রিমান্ডে এনে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় পুলিশের মধ্যে প্রচলিত একটি অনৈতিক পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় অনেক নিরপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার হন এবং কখনও কখনও জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ভয়ভীতি দেখানো হয়।

৩.নিয়োগ বদলিবাণিজ্য: পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে ঘুষ নেওয়া একটি স্বীকৃত বাস্তবতা। বিশেষত কনস্টেবল নিয়োগে ১০ লাখ টাকা বা ততোধিক ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সুপারিশ ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়।

৪.ক্ষমতার অপব্যবহার: ভুয়া মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় অনেক পুলিশ সদস্যের জন্য সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক বিরোধী ও সাংবাদিকরা এই প্রক্রিয়ার শিকার হন।

৫.ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি: যানবাহনের বিরুদ্ধে জরিমানা প্রদান ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে ট্রাফিক পুলিশ অবৈধ অর্থ উপার্জন করে। সড়কে বিভিন্ন চেকপোস্টে অযৌক্তিকভাবে অর্থ আদায়ের ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়।

বাহিরাগত দুর্নীতি

৬.সড়কমহাসড়কে চাঁদাবাজি: পরিবহন খাতে পুলিশের চাঁদাবাজি একটি দৃশ্যমান সমস্যা, যেখানে ছাপানো স্লিপ বা কাগজের মাধ্যমে অর্থ তোলা হয়। বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক চালকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা হয়।

৭.ফুটপাত অবৈধ স্থাপনার চাঁদাবাজি: ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকান বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে পুলিশ নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করে। বছরে এই চাঁদার পরিমাণ প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকা। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোর বাজার এলাকায় পুলিশ ও স্থানীয় মাস্তানদের সমন্বয়ে চাঁদাবাজির এই প্রক্রিয়া চলে।

৮.অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত: অনেক পুলিশ সদস্য অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত করে অবৈধ মাদক, মানব পাচার ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এমনকি পুলিশ প্রহরায় থাকা অপরাধীদের পলায়নে সহায়তা করার ঘটনাও রয়েছে।

৯.বেআইনি গৃহতল্লাশি মুক্তিপণ আদায়: লক্ষ্যবস্তু করে নিরীহ মানুষকে আটক করা এবং মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার মতো ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। পুলিশ সদস্যরা বিনা পরোয়ানায় গৃহতল্লাশি চালিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে।

সংস্কারের সুপারিশ

পুলিশ সংস্কার কমিশন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুটি প্রধান সুপারিশ করেছে:

সর্বদলীয় কমিটি গঠন: প্রতিটি থানা বা উপজেলায় একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হবে, যা পুলিশের কার্যক্রমের ওপর তদারকি করবে। এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই কমিটি নিয়মিতভাবে পুলিশের কার্যক্রম মূল্যায়ন করবে এবং দুর্নীতি-সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখবে।

বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন: পুলিশের অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এই টাস্কফোর্স পুলিশের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতির মূল চক্র চিহ্নিত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পাশাপাশি, এটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় পুলিশের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জনসেবামূলক মনোভাব আনয়নে কাজ করবে। টাস্কফোর্সের সদস্যদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন ও স্বতন্ত্র তদন্তকারীরা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন বলেন, ‘‘সংস্কারের সুপারিশের ক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ জনগণের দূরত্ব কমানো এবং সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। দুর্নীতির খাতগুলো চিহ্নিত করে তা বন্ধে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।’’ তবে, সংস্কার প্রক্রিয়া সফল করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং নাগরিক সচেতনতার গুরুত্ব অপরিসীম।

পুলিশ বাহিনীর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য কেবল বাহ্যিক সংস্কার যথেষ্ট নয়, বরং প্রয়োজন গভীর এবং কার্যকর সাংগঠনিক পরিবর্তন। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করে শক্তিশালী নাগরিক তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

পুলিশ সংস্কার কমিশন: দুর্নীতির ৯টি খাত চিহ্নিত

Update Time : ১১:৫১:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

 

 

পুলিশ সংস্কার কমিশন সম্প্রতি এক গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে প্রচলিত দুর্নীতির ৯টি খাত চিহ্নিত করেছে, যা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশ বিভাগের প্রতি আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। দুর্নীতির এই শিকড় উপড়ে ফেলার লক্ষ্যে কমিশন একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেছে, যা নির্দিষ্ট দুর্নীতির খাতগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এছাড়া, পুলিশ বাহিনীর কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা এবং জনসাধারণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করার জন্য কমিশন বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পুলিশ প্রশাসনের শুদ্ধি অভিযান ও কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়, তাই দুর্নীতি প্রতিরোধের পাশাপাশি আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং জনবান্ধব পুলিশিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের প্রধান বিষয়বস্তু

গত শনিবার পুলিশ সংস্কার কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এর আগে ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়। প্রতিবেদনে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের বিরুদ্ধে ২ লাখ ৪৫ হাজার লঘুদণ্ড এবং ২৩ হাজার ৫৫০টি গুরুদণ্ডের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, পুলিশের অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের অন্যান্য অংশের মতো পুলিশ বিভাগও ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। পুলিশ সদস্যদের ওপর জনসাধারণের আস্থা কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এই অব্যাহত দুর্নীতি।

দুর্নীতির চিহ্নিত ৯টি খাত

প্রতিবেদনে চিহ্নিত দুর্নীতির ৯টি খাতকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে—পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি এবং বাহিরাগত দুর্নীতি।

অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি

১. ঘুষ গ্রহণ আর্থিক দুর্নীতি: থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা, মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার-বাণিজ্য, অভিযোগপত্র প্রদান, মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তির পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের ঘুষ গ্রহণের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। অভিযুক্তদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতা করতেও দেখা যায়।

২.রিমান্ডে নির্যাতন: অভিযুক্ত আসামিদের রিমান্ডে এনে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় পুলিশের মধ্যে প্রচলিত একটি অনৈতিক পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় অনেক নিরপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার হন এবং কখনও কখনও জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ভয়ভীতি দেখানো হয়।

৩.নিয়োগ বদলিবাণিজ্য: পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে ঘুষ নেওয়া একটি স্বীকৃত বাস্তবতা। বিশেষত কনস্টেবল নিয়োগে ১০ লাখ টাকা বা ততোধিক ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সুপারিশ ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়।

৪.ক্ষমতার অপব্যবহার: ভুয়া মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় অনেক পুলিশ সদস্যের জন্য সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক বিরোধী ও সাংবাদিকরা এই প্রক্রিয়ার শিকার হন।

৫.ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি: যানবাহনের বিরুদ্ধে জরিমানা প্রদান ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে ট্রাফিক পুলিশ অবৈধ অর্থ উপার্জন করে। সড়কে বিভিন্ন চেকপোস্টে অযৌক্তিকভাবে অর্থ আদায়ের ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়।

বাহিরাগত দুর্নীতি

৬.সড়কমহাসড়কে চাঁদাবাজি: পরিবহন খাতে পুলিশের চাঁদাবাজি একটি দৃশ্যমান সমস্যা, যেখানে ছাপানো স্লিপ বা কাগজের মাধ্যমে অর্থ তোলা হয়। বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক চালকদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা হয়।

৭.ফুটপাত অবৈধ স্থাপনার চাঁদাবাজি: ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকান বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে পুলিশ নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করে। বছরে এই চাঁদার পরিমাণ প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকা। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোর বাজার এলাকায় পুলিশ ও স্থানীয় মাস্তানদের সমন্বয়ে চাঁদাবাজির এই প্রক্রিয়া চলে।

৮.অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত: অনেক পুলিশ সদস্য অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত করে অবৈধ মাদক, মানব পাচার ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এমনকি পুলিশ প্রহরায় থাকা অপরাধীদের পলায়নে সহায়তা করার ঘটনাও রয়েছে।

৯.বেআইনি গৃহতল্লাশি মুক্তিপণ আদায়: লক্ষ্যবস্তু করে নিরীহ মানুষকে আটক করা এবং মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার মতো ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। পুলিশ সদস্যরা বিনা পরোয়ানায় গৃহতল্লাশি চালিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে।

সংস্কারের সুপারিশ

পুলিশ সংস্কার কমিশন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুটি প্রধান সুপারিশ করেছে:

সর্বদলীয় কমিটি গঠন: প্রতিটি থানা বা উপজেলায় একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হবে, যা পুলিশের কার্যক্রমের ওপর তদারকি করবে। এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই কমিটি নিয়মিতভাবে পুলিশের কার্যক্রম মূল্যায়ন করবে এবং দুর্নীতি-সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখবে।

বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন: পুলিশের অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও দুর্নীতি দমন নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এই টাস্কফোর্স পুলিশের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতির মূল চক্র চিহ্নিত করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পাশাপাশি, এটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় পুলিশের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জনসেবামূলক মনোভাব আনয়নে কাজ করবে। টাস্কফোর্সের সদস্যদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন ও স্বতন্ত্র তদন্তকারীরা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন বলেন, ‘‘সংস্কারের সুপারিশের ক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ জনগণের দূরত্ব কমানো এবং সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। দুর্নীতির খাতগুলো চিহ্নিত করে তা বন্ধে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।’’ তবে, সংস্কার প্রক্রিয়া সফল করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং নাগরিক সচেতনতার গুরুত্ব অপরিসীম।

পুলিশ বাহিনীর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য কেবল বাহ্যিক সংস্কার যথেষ্ট নয়, বরং প্রয়োজন গভীর এবং কার্যকর সাংগঠনিক পরিবর্তন। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করে শক্তিশালী নাগরিক তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share