সময়: মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে রহস্যজনক হাড়গোড়ের সন্ধান, তদন্তে সিআইডি

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:০২:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১৩৪ Time View

0d96235ebf121dccc64255a29fd61a04 67a98ecad958e

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

 

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গুঁড়িয়ে দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়ি থেকে ‘কিছু হাড়গোড়’ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে ধানমন্ডি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট এসে আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করে। দীর্ঘক্ষণ ধরে তদন্ত চালিয়ে সিআইডির সদস্যরা বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন, যা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

ধানমন্ডি থানার ওসি আলী আহমেদ মাসুদ বলেন, “৩২ নম্বরে কিছু হাড়গোড় পাওয়া গেছে। এখন সেগুলো মানুষের না কি অন্য কোনো প্রাণীর, সেটি নিশ্চিত করতে ফরেনসিক বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহ করে তা যথাযথ পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়েছে।”

সিআইডির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা এখনই নিশ্চিত নই এটি মানবদেহের হাড় কি না। তবে নমুনাগুলো বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণের পরই আমরা চূড়ান্ত মন্তব্য করতে পারব।”

আলামত সংগ্রহ শেষে সোয়া ১০টার দিকে সিআইডির টিম ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বলে জানান ওসি মাসুদ। স্থানীয় বাসিন্দারা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাটি নিয়ে নানা রকম মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ দাবি করছেন, ঐতিহাসিক এ ভবনের নিচে গোপন কিছু থাকতে পারে যা এতদিন গোপন ছিল।

৩২ নম্বরের ভবন ধ্বংসের পটভূমি

গত বুধবার ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি থেকে ৩২ নম্বরের বাড়িটি ভাঙা শুরু হয়, যা শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের ছয় মাস পূর্তির দিনে সংঘটিত হয়। বৃহস্পতিবার দিনভর সেখানে লুটপাটের পর বিকেলে গরু জবাই করে বিরিয়ানি রান্না করা হয় এবং রাতে জেয়াফতের আয়োজন করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবন ভাঙার পর সেখানে অনেকেই হাতুড়ি ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে প্রবেশ করেন এবং ইট, রড, বৈদ্যুতিক তার সংগ্রহ করেন। এ সময় অনেকেই ভবনের গভীরে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেন, যা নিয়ে নতুন করে সন্দেহ দেখা দেয়। কেউ কেউ মনে করছেন, ভবনের নিচে কোনো গোপন কক্ষ বা বেজমেন্ট থাকতে পারে।

বেজমেন্ট নিয়ে নতুন আলোচনা

উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনলাইনে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুড়িয়ে দেয়। বাড়ির পাশেই নির্মাণাধীন ভবনে উপস্থিত বিক্ষুব্ধরা সেখানে একটি কয়েকতলা বেজমেন্ট দেখতে পান। তারা দুই তলা পর্যন্ত নামতে পারলেও পরবর্তী ফ্লোরে পানি দেখে থেমে যান। ধারণা করা হয়, নিচে আরও কয়েকটি তলা রয়েছে। এরপর থেকেই ওই বেজমেন্ট নিয়ে নানা আলোচনা চলতে থাকে।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ধ্বংসস্তূপ সরানোর পর আরও রহস্যজনক কিছু সন্ধান পাওয়া যেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

সিআইডির তদন্ত কার্যক্রম

রোববার সকাল থেকে ৩২ নম্বরের বেজমেন্টের পানি সেচের কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। সেচের কাজ শেষ করে তারা দুপুর সোয়া ১টার দিকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

এরপর সোমবার সেখানে আলামত সংগ্রহে আসে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং সংগ্রহ করা আলামত পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি হাড়গোড়গুলো মানবদেহের হয়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হবে এবং ভবিষ্যতের তদন্তকে নতুন দিকনির্দেশনা দেবে। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে সিআইডি জানিয়েছে, চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেতে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে।

স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ও কৌতূহল বিরাজ করছে। অনেকেই মনে করছেন, ভবনটির ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও চাঞ্চল্যকর কিছু লুকিয়ে থাকতে পারে, যা ধাপে ধাপে প্রকাশিত হবে। ভবিষ্যতে তদন্ত কী মোড় নেয়, তা সময়ই বলে দেবে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে রহস্যজনক হাড়গোড়ের সন্ধান, তদন্তে সিআইডি

Update Time : ০৫:০২:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

 

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গুঁড়িয়ে দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়ি থেকে ‘কিছু হাড়গোড়’ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে ধানমন্ডি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট এসে আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করে। দীর্ঘক্ষণ ধরে তদন্ত চালিয়ে সিআইডির সদস্যরা বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেন, যা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

ধানমন্ডি থানার ওসি আলী আহমেদ মাসুদ বলেন, “৩২ নম্বরে কিছু হাড়গোড় পাওয়া গেছে। এখন সেগুলো মানুষের না কি অন্য কোনো প্রাণীর, সেটি নিশ্চিত করতে ফরেনসিক বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহ করে তা যথাযথ পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়েছে।”

সিআইডির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা এখনই নিশ্চিত নই এটি মানবদেহের হাড় কি না। তবে নমুনাগুলো বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণের পরই আমরা চূড়ান্ত মন্তব্য করতে পারব।”

আলামত সংগ্রহ শেষে সোয়া ১০টার দিকে সিআইডির টিম ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বলে জানান ওসি মাসুদ। স্থানীয় বাসিন্দারা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাটি নিয়ে নানা রকম মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ দাবি করছেন, ঐতিহাসিক এ ভবনের নিচে গোপন কিছু থাকতে পারে যা এতদিন গোপন ছিল।

৩২ নম্বরের ভবন ধ্বংসের পটভূমি

গত বুধবার ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি থেকে ৩২ নম্বরের বাড়িটি ভাঙা শুরু হয়, যা শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের ছয় মাস পূর্তির দিনে সংঘটিত হয়। বৃহস্পতিবার দিনভর সেখানে লুটপাটের পর বিকেলে গরু জবাই করে বিরিয়ানি রান্না করা হয় এবং রাতে জেয়াফতের আয়োজন করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবন ভাঙার পর সেখানে অনেকেই হাতুড়ি ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে প্রবেশ করেন এবং ইট, রড, বৈদ্যুতিক তার সংগ্রহ করেন। এ সময় অনেকেই ভবনের গভীরে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেন, যা নিয়ে নতুন করে সন্দেহ দেখা দেয়। কেউ কেউ মনে করছেন, ভবনের নিচে কোনো গোপন কক্ষ বা বেজমেন্ট থাকতে পারে।

বেজমেন্ট নিয়ে নতুন আলোচনা

উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনলাইনে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুড়িয়ে দেয়। বাড়ির পাশেই নির্মাণাধীন ভবনে উপস্থিত বিক্ষুব্ধরা সেখানে একটি কয়েকতলা বেজমেন্ট দেখতে পান। তারা দুই তলা পর্যন্ত নামতে পারলেও পরবর্তী ফ্লোরে পানি দেখে থেমে যান। ধারণা করা হয়, নিচে আরও কয়েকটি তলা রয়েছে। এরপর থেকেই ওই বেজমেন্ট নিয়ে নানা আলোচনা চলতে থাকে।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ধ্বংসস্তূপ সরানোর পর আরও রহস্যজনক কিছু সন্ধান পাওয়া যেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

সিআইডির তদন্ত কার্যক্রম

রোববার সকাল থেকে ৩২ নম্বরের বেজমেন্টের পানি সেচের কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। সেচের কাজ শেষ করে তারা দুপুর সোয়া ১টার দিকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

এরপর সোমবার সেখানে আলামত সংগ্রহে আসে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট। বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং সংগ্রহ করা আলামত পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি হাড়গোড়গুলো মানবদেহের হয়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হবে এবং ভবিষ্যতের তদন্তকে নতুন দিকনির্দেশনা দেবে। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে সিআইডি জানিয়েছে, চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেতে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে।

স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ও কৌতূহল বিরাজ করছে। অনেকেই মনে করছেন, ভবনটির ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও চাঞ্চল্যকর কিছু লুকিয়ে থাকতে পারে, যা ধাপে ধাপে প্রকাশিত হবে। ভবিষ্যতে তদন্ত কী মোড় নেয়, তা সময়ই বলে দেবে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share