শুক্রবার বা জুমার দিনের গুরুত্ব ও আমাদের করণীয়

- Update Time : ১০:৪০:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১০৩ Time View
ইসলামে শুক্রবার (জুমার দিন) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় একটি দিন। এই দিনকে “সপ্তাহের সেরা দিন” হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং এই দিনেই মুসলমানদের জন্য জুমার নামাজ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। হাদিস ও কুরআনে শুক্রবারের বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, এই দিন আল্লাহর কাছে এমন এক বিশেষ সময় রয়েছে, যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি যে কোনো ভালো কাজ করতে গিয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে তা পূর্ণ হয়। শুক্রবারের দিনটি পৃথিবী ও আকাশের মাঝে একটি বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টি করে, যেখানে মানুষের অন্তরে রহমত, বরকত ও শান্তি প্রবাহিত হয়। বিশেষ করে, জুমার দিনের খুৎবা ও নামাজ মুসলমানদের একত্রিত করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও আল্লাহর কাছে তাওবা করার সুযোগ দেয়। এ কারণে, মুসলমানরা এই দিনটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করে থাকে এবং আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা ও বরকত লাভের জন্য বিশেষ দোয়া প্রার্থনা করে।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।” (সুরা আল-জুমুআহ: ৯)
শুক্রবারের ফজিলত ও তাৎপর্য
১. সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন: হাদিসে বলা হয়েছে যে, শুক্রবার হলো সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন এবং এই দিনেই আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
_«خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ أُدْخِلَ الجَنَّةَ، وَفِيهِ أُخْرِجَ مِنْهَا
বাংলা অর্থ:
“শুক্রবার হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন, এই দিনেই আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।” (সহিহ মুসলিম: ৮৫৪)
২. গুনাহ মাফের সুযোগ: জুমার দিনে খুতবা শোনা এবং নামাজ আদায় করলে আগের জুমা থেকে এই জুমা পর্যন্ত ছোট গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
_«الصَّلَوَاتُ الخَمْسُ، وَالجُمُعَةُ إِلَى الجُمُعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الكَبَائِرُ»_
বাংলা অর্থ:
“পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান পর্যন্তের সময়কালের মধ্যে ছোট গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়, যদি কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকা হয়।” (সহিহ মুসলিম: ২৩৩)
আমাদের করণীয়
শুক্রবারকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা এবং এই দিনের আমলসমূহ পালন করা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য।
১. গোসল করা ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা: হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, উত্তম পোশাক পরে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে, সে জুমার নামাজের জন্য সুন্নত পদ্ধতিতে প্রস্তুত হয়, তার জন্য বিশেষ সওয়াব রয়েছে।” (সহিহ বুখারি: ৮৮৩)
২. সুরা কাহফ পাঠ করা: রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য এক সপ্তাহের আলো থাকবে।” (সহিহ মুসলিম: ১০৪০) এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত কাজ, যা জুমার দিনে পালন করতে উত্সাহিত করা হয়েছে। সুরা কাহফ পাঠ করার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর কাছ থেকে রহমত ও বরকত লাভ করেন এবং তাদের জীবনে নূর (আলো) আসে, যা এক সপ্তাহ ধরে তাদের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকে। রাসূল (সা.)-এর এই হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, জুমার দিনে সুরা কাহফ পাঠ করা শুধু একটি নেক আমল নয়, বরং এটি একজন মুসলিমের জীবনে আল্লাহর বিশেষ রহমত ও নির্দেশনা নিয়ে আসে, যা তার দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও সঠিক পথে পরিচালিত করে।
৩. জুমার নামাজ আদায় করা: পুরুষদের জন্য জুমার নামাজ ফরজ। কোনো বৈধ কারণ ছাড়া এটি পরিত্যাগ করা গুরুতর গুনাহ। রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি তিনটি জুমার নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করে, তার অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দেন।” (আবু দাউদ: ১০৫২)
৪. দরুদ শরিফ বেশি পরিমাণে পড়া: রাসূল (সা.) বলেন, “তোমরা জুমার দিনে আমার উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার নিকট পৌঁছানো হয়।” (আবু দাউদ: ১৫৩১)
শুক্রবার মুসলমানদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এটি শুধু একটি সাধারণ ছুটির দিন নয়, বরং ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ লাভের সুবর্ণ সুযোগ। আমরা যদি কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুসারে এই দিনের আমলগুলোর প্রতি যত্নশীল হই, তাহলে আমাদের জীবনে বরকত ও কল্যাণ নেমে আসবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুমার গুরুত্ব বোঝার এবং তা যথাযথভাবে পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Please Share This Post in Your Social Media

শুক্রবার বা জুমার দিনের গুরুত্ব ও আমাদের করণীয়

ইসলামে শুক্রবার (জুমার দিন) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় একটি দিন। এই দিনকে “সপ্তাহের সেরা দিন” হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং এই দিনেই মুসলমানদের জন্য জুমার নামাজ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। হাদিস ও কুরআনে শুক্রবারের বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, এই দিন আল্লাহর কাছে এমন এক বিশেষ সময় রয়েছে, যখন কোনো মুসলিম ব্যক্তি যে কোনো ভালো কাজ করতে গিয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে তা পূর্ণ হয়। শুক্রবারের দিনটি পৃথিবী ও আকাশের মাঝে একটি বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টি করে, যেখানে মানুষের অন্তরে রহমত, বরকত ও শান্তি প্রবাহিত হয়। বিশেষ করে, জুমার দিনের খুৎবা ও নামাজ মুসলমানদের একত্রিত করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও আল্লাহর কাছে তাওবা করার সুযোগ দেয়। এ কারণে, মুসলমানরা এই দিনটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করে থাকে এবং আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা ও বরকত লাভের জন্য বিশেষ দোয়া প্রার্থনা করে।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।” (সুরা আল-জুমুআহ: ৯)
শুক্রবারের ফজিলত ও তাৎপর্য
১. সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন: হাদিসে বলা হয়েছে যে, শুক্রবার হলো সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন এবং এই দিনেই আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
_«خَيْرُ يَوْمٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ أُدْخِلَ الجَنَّةَ، وَفِيهِ أُخْرِجَ مِنْهَا
বাংলা অর্থ:
“শুক্রবার হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন, এই দিনেই আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।” (সহিহ মুসলিম: ৮৫৪)
২. গুনাহ মাফের সুযোগ: জুমার দিনে খুতবা শোনা এবং নামাজ আদায় করলে আগের জুমা থেকে এই জুমা পর্যন্ত ছোট গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
_«الصَّلَوَاتُ الخَمْسُ، وَالجُمُعَةُ إِلَى الجُمُعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الكَبَائِرُ»_
বাংলা অর্থ:
“পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান পর্যন্তের সময়কালের মধ্যে ছোট গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়, যদি কবীরা গুনাহসমূহ থেকে বিরত থাকা হয়।” (সহিহ মুসলিম: ২৩৩)
আমাদের করণীয়
শুক্রবারকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা এবং এই দিনের আমলসমূহ পালন করা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য।
১. গোসল করা ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা: হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, উত্তম পোশাক পরে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে, সে জুমার নামাজের জন্য সুন্নত পদ্ধতিতে প্রস্তুত হয়, তার জন্য বিশেষ সওয়াব রয়েছে।” (সহিহ বুখারি: ৮৮৩)
২. সুরা কাহফ পাঠ করা: রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য এক সপ্তাহের আলো থাকবে।” (সহিহ মুসলিম: ১০৪০) এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত কাজ, যা জুমার দিনে পালন করতে উত্সাহিত করা হয়েছে। সুরা কাহফ পাঠ করার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর কাছ থেকে রহমত ও বরকত লাভ করেন এবং তাদের জীবনে নূর (আলো) আসে, যা এক সপ্তাহ ধরে তাদের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকে। রাসূল (সা.)-এর এই হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, জুমার দিনে সুরা কাহফ পাঠ করা শুধু একটি নেক আমল নয়, বরং এটি একজন মুসলিমের জীবনে আল্লাহর বিশেষ রহমত ও নির্দেশনা নিয়ে আসে, যা তার দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও সঠিক পথে পরিচালিত করে।
৩. জুমার নামাজ আদায় করা: পুরুষদের জন্য জুমার নামাজ ফরজ। কোনো বৈধ কারণ ছাড়া এটি পরিত্যাগ করা গুরুতর গুনাহ। রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি তিনটি জুমার নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করে, তার অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দেন।” (আবু দাউদ: ১০৫২)
৪. দরুদ শরিফ বেশি পরিমাণে পড়া: রাসূল (সা.) বলেন, “তোমরা জুমার দিনে আমার উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার নিকট পৌঁছানো হয়।” (আবু দাউদ: ১৫৩১)
শুক্রবার মুসলমানদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এটি শুধু একটি সাধারণ ছুটির দিন নয়, বরং ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ লাভের সুবর্ণ সুযোগ। আমরা যদি কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনা অনুসারে এই দিনের আমলগুলোর প্রতি যত্নশীল হই, তাহলে আমাদের জীবনে বরকত ও কল্যাণ নেমে আসবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুমার গুরুত্ব বোঝার এবং তা যথাযথভাবে পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।