শিক্ষার সাথে নৈতিকতার সংযোগ না ঘটলে মানুষ হওয়া যায় না: ধর্ম উপদেষ্টা

- Update Time : ০৬:৫৫:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৯২ Time View
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, শিক্ষার সাথে নৈতিকতার সংযোগ না ঘটলে প্রকৃত মানুষ হওয়া সম্ভব নয়। শুধুমাত্র সার্টিফিকেট অর্জন করলেই মানুষ হওয়া যায় না, বরং নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ছাড়া শিক্ষিত ব্যক্তিরাও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারেন। এ দুইয়ের সমন্বয় ছাড়া একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত হয় না।
তিনি ৫ ফেব্রুয়ারি, বুধবার রাজধানীর মুগদায় বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল ও স্প্রিং সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
শিক্ষা ও ধর্মের সম্পর্ক
ড. খালিদ হোসেন বলেন, পৃথিবীর অধিকাংশ স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি খাতের অন্তর্ভুক্ত। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, তবে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে ধর্ম ও নৈতিকতার সম্পর্ক রয়েছে। মুসলমানদের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয় একটি মসজিদকেন্দ্রিক বিদ্যাপীঠ। এটি প্রমাণ করে যে ধর্ম ও শিক্ষার মধ্যকার সম্পর্ক দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান এবং এটি একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধ সংযুক্ত করা প্রয়োজন। কারণ, শিক্ষা শুধু পুঁথিগত জ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তা মানুষকে সৎ পথে পরিচালিত করতে পারে না। তাই শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি নৈতিকতার চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নৈতিকতা ছাড়া শিক্ষার ফল কী?
ধর্ম উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি নৈতিকতা বোধ না জাগ্রত হয়, তাহলে তারা পাশ করার পর ঘুষ, দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত হবে। শুধুমাত্র ভালো গ্রেড অর্জন করে চাকরির বাজারে প্রবেশ করলেই একজন প্রকৃত শিক্ষিত ব্যক্তি হওয়া যায় না, বরং তার কর্মকাণ্ড ও ব্যবহারই নির্ধারণ করে সে কতটুকু নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত।
তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অর্থ উপার্জন করতেই হয়, তবে সেটি অবশ্যই ন্যায়সংগত ও সততার সঙ্গে করতে হবে। অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনকে কখনোই গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।
রাজনীতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ
ড. খালিদ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রাজনীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অন্ধ দলীয় রাজনীতি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে গবেষণা, শিক্ষা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য নিবেদিত থাকে।
তিনি নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, অযথা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট না করে বরং পড়াশোনার প্রতি সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে দেন যে, রাজনৈতিক বিভক্তি ও দলীয়করণ শিক্ষার পরিবেশকে ব্যাহত করতে পারে এবং এটি শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচারের আহ্বান
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিচালনা ও শিক্ষার মানোন্নয়নে স্বচ্ছতা বজায় রাখার আহ্বান জানান ধর্ম উপদেষ্টা। তিনি বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অনিয়ম মেনে নেওয়া উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সকল কাজ নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত।
বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য
বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর কাজী আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান প্রফেসর কামালউদ্দিন আবদুল্লাহ জাফরি, বাংলাদেশ ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হাই শিকদার এবং বিআইইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দ জারিফ জাফরি।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা সবাই শিক্ষার মানোন্নয়ন, নৈতিকতা চর্চা ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক ব্যবস্থার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
শিক্ষা কেবলমাত্র সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য নয়, বরং নৈতিকতার সাথে সংযুক্ত থাকলেই তা প্রকৃত অর্থে মূল্যবান হয়ে ওঠে। ধর্ম উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী, সমাজের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ও নৈতিকতার সমন্বয় অপরিহার্য। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং তাদের নৈতিকভাবে সুসংগঠিত করা হলে দেশ একটি সৎ, দক্ষ ও মানবিক নেতৃত্ব পাবে, যা একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সহায়ক হবে।
Please Share This Post in Your Social Media

শিক্ষার সাথে নৈতিকতার সংযোগ না ঘটলে মানুষ হওয়া যায় না: ধর্ম উপদেষ্টা
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, শিক্ষার সাথে নৈতিকতার সংযোগ না ঘটলে প্রকৃত মানুষ হওয়া সম্ভব নয়। শুধুমাত্র সার্টিফিকেট অর্জন করলেই মানুষ হওয়া যায় না, বরং নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ছাড়া শিক্ষিত ব্যক্তিরাও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারেন। এ দুইয়ের সমন্বয় ছাড়া একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত হয় না।
তিনি ৫ ফেব্রুয়ারি, বুধবার রাজধানীর মুগদায় বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল ও স্প্রিং সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
শিক্ষা ও ধর্মের সম্পর্ক
ড. খালিদ হোসেন বলেন, পৃথিবীর অধিকাংশ স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি খাতের অন্তর্ভুক্ত। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, তবে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে ধর্ম ও নৈতিকতার সম্পর্ক রয়েছে। মুসলমানদের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয় একটি মসজিদকেন্দ্রিক বিদ্যাপীঠ। এটি প্রমাণ করে যে ধর্ম ও শিক্ষার মধ্যকার সম্পর্ক দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান এবং এটি একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধ সংযুক্ত করা প্রয়োজন। কারণ, শিক্ষা শুধু পুঁথিগত জ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তা মানুষকে সৎ পথে পরিচালিত করতে পারে না। তাই শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি নৈতিকতার চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নৈতিকতা ছাড়া শিক্ষার ফল কী?
ধর্ম উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি নৈতিকতা বোধ না জাগ্রত হয়, তাহলে তারা পাশ করার পর ঘুষ, দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত হবে। শুধুমাত্র ভালো গ্রেড অর্জন করে চাকরির বাজারে প্রবেশ করলেই একজন প্রকৃত শিক্ষিত ব্যক্তি হওয়া যায় না, বরং তার কর্মকাণ্ড ও ব্যবহারই নির্ধারণ করে সে কতটুকু নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত।
তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অর্থ উপার্জন করতেই হয়, তবে সেটি অবশ্যই ন্যায়সংগত ও সততার সঙ্গে করতে হবে। অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনকে কখনোই গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।
রাজনীতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ
ড. খালিদ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রাজনীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অন্ধ দলীয় রাজনীতি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে গবেষণা, শিক্ষা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য নিবেদিত থাকে।
তিনি নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, অযথা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট না করে বরং পড়াশোনার প্রতি সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে দেন যে, রাজনৈতিক বিভক্তি ও দলীয়করণ শিক্ষার পরিবেশকে ব্যাহত করতে পারে এবং এটি শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচারের আহ্বান
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিচালনা ও শিক্ষার মানোন্নয়নে স্বচ্ছতা বজায় রাখার আহ্বান জানান ধর্ম উপদেষ্টা। তিনি বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অনিয়ম মেনে নেওয়া উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সকল কাজ নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত।
বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য
বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর কাজী আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান প্রফেসর কামালউদ্দিন আবদুল্লাহ জাফরি, বাংলাদেশ ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল হাই শিকদার এবং বিআইইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দ জারিফ জাফরি।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা সবাই শিক্ষার মানোন্নয়ন, নৈতিকতা চর্চা ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক ব্যবস্থার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
শিক্ষা কেবলমাত্র সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য নয়, বরং নৈতিকতার সাথে সংযুক্ত থাকলেই তা প্রকৃত অর্থে মূল্যবান হয়ে ওঠে। ধর্ম উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী, সমাজের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ও নৈতিকতার সমন্বয় অপরিহার্য। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং তাদের নৈতিকভাবে সুসংগঠিত করা হলে দেশ একটি সৎ, দক্ষ ও মানবিক নেতৃত্ব পাবে, যা একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সহায়ক হবে।