বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে ‘একনায়ক’ বলা নিয়ে বিতর্ক, প্রেস সচিবের কড়া আপত্তি

- Update Time : ০২:৫৭:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৮৭ Time View
বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময় ক্ষমতায় থাকা শাসক শেখ হাসিনার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হলো আজ। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তিন দিন পরই নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
তবে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পূর্ববর্তী সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনে বিপর্যস্ত অর্থনীতি, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেও তা এখনও প্রত্যাশিত সফলতা পায়নি। ফলে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী মানুষের আশার সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক সৃষ্টি হয়েছে। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই বিবিসি বাংলা একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বিতর্ক
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, “গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রাপ্তির ফারাক কতটা?”। প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়:
“শেখ হাসিনার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের পতনের পর আর্থ–সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল। দলমত নির্বিশেষে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে; সেই আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছিল ‘একনায়কতান্ত্রিক’ শাসনের।“
বিবিসি বাংলা এই ‘একনায়কতান্ত্রিক’ শব্দটি উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে
প্রেস সচিবের কড়া প্রতিক্রিয়া
এই প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার শাসনকে ‘একনায়কতান্ত্রিক’ বলে উল্লেখ করায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লেখেন:
“শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিবিসি বাংলার। সুতরাং, তারা হাসিনার ১৫ বছরের নৃশংস শাসনের বর্ণনা দিতে উদ্ধৃতি চিহ্ন দিয়ে–‘একনায়কতান্ত্রিক’- শব্দটি ব্যবহার করেছে। যা ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্বৈরশাসনকে স্বাভাবিক করার একটা নির্লজ্জ প্রচেষ্টা।“
এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এটিকে হাসিনার শাসনকে লঘু করার প্রয়াস বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
প্রেস সচিবের এই মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, বিবিসি বাংলা শেখ হাসিনার শাসনকে ‘একনায়কতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়ে স্বৈরশাসনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, বিবিসি ব্যালান্স রাখার জন্যই উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার করেছে।
এদিকে, বিবিসি বাংলা এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিতর্ক শুধু হাসিনার শাসনের মূল্যায়ন নিয়ে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে।
পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস পার হলেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও অনেকাংশে অনিশ্চিত। গণঅভ্যুত্থানের পর যে গণতন্ত্রের প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে—এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে এখন নতুন রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অতীতের স্বৈরশাসনের প্রভাব থেকেও মুক্ত হতে হবে। তবে এখনও পর্যন্ত অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকার কতটা সফল হয়েছে—তা নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন এবং প্রেস সচিবের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির এক নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকে ইতিহাস কীভাবে মূল্যায়ন করবে, তা ভবিষ্যৎ সময়ই নির্ধারণ করবে।
Please Share This Post in Your Social Media

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে ‘একনায়ক’ বলা নিয়ে বিতর্ক, প্রেস সচিবের কড়া আপত্তি

বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময় ক্ষমতায় থাকা শাসক শেখ হাসিনার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হলো আজ। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তিন দিন পরই নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
তবে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পূর্ববর্তী সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনে বিপর্যস্ত অর্থনীতি, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেও তা এখনও প্রত্যাশিত সফলতা পায়নি। ফলে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী মানুষের আশার সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক সৃষ্টি হয়েছে। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই বিবিসি বাংলা একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বিতর্ক
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, “গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রাপ্তির ফারাক কতটা?”। প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়:
“শেখ হাসিনার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের পতনের পর আর্থ–সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল। দলমত নির্বিশেষে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে; সেই আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছিল ‘একনায়কতান্ত্রিক’ শাসনের।“
বিবিসি বাংলা এই ‘একনায়কতান্ত্রিক’ শব্দটি উদ্ধৃতি চিহ্নের
প্রেস সচিবের কড়া প্রতিক্রিয়া
এই প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার শাসনকে ‘একনায়কতান্ত্রিক’ বলে উল্লেখ করায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লেখেন:
“শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিবিসি বাংলার। সুতরাং, তারা হাসিনার ১৫ বছরের নৃশংস শাসনের বর্ণনা দিতে উদ্ধৃতি চিহ্ন দিয়ে–‘একনায়কতান্ত্রিক’- শব্দটি ব্যবহার করেছে। যা ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্বৈরশাসনকে স্বাভাবিক করার একটা নির্লজ্জ প্রচেষ্টা।“
এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং এটিকে হাসিনার শাসনকে লঘু করার প্রয়াস বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
প্রেস সচিবের এই মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, বিবিসি বাংলা শেখ হাসিনার শাসনকে ‘একনায়কতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়ে স্বৈরশাসনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, বিবিসি ব্যালান্স রাখার জন্যই উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার করেছে।
এদিকে, বিবিসি বাংলা এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিতর্ক শুধু হাসিনার শাসনের মূল্যায়ন নিয়ে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে।
পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাস পার হলেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও অনেকাংশে অনিশ্চিত। গণঅভ্যুত্থানের পর যে গণতন্ত্রের প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে—এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে এখন নতুন রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অতীতের স্বৈরশাসনের প্রভাব থেকেও মুক্ত হতে হবে। তবে এখনও পর্যন্ত অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকার কতটা সফল হয়েছে—তা নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন এবং প্রেস সচিবের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির এক নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকে ইতিহাস কীভাবে মূল্যায়ন করবে, তা ভবিষ্যৎ সময়ই নির্ধারণ করবে।