ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ঢল

- Update Time : ১০:২৬:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৯৬ Time View
মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার এক বিশাল ঢল দেখা যায়। রাত ৮টার দিকে ছাত্র-জনতা স্লোগান দিতে দিতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হতে শুরু করে এবং এর পরই পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে।
এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে, যেখানে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। ছাত্র-জনতার এই প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল সেই ভাষণের বিরুদ্ধে। তাদের দাবী ছিল— ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা এবং প্রতিবাদ জানানো।
বিক্ষোভের চিত্র
সন্ধ্যার আগে থেকেই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের আশপাশে জড়ো হতে শুরু করে। রাত ৮টার দিকে তাদের ঢল শুরু হয়ে পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু ভবনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। আন্দোলনকারীরা সেখানে দরজা ভেঙে বঙ্গবন্ধু ভবনে ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে তারা জানালার কাচ ভেঙে ফেলতে এবং ভবনের বিভিন্ন অংশের ইট খুলে নেয়ার চেষ্টা করতে থাকে।
এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভবনের ভিতরে আগুন ধরিয়ে দেয়, আর স্লোগান দিতে থাকে—
- “জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো!”
- “দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা!”
- “অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন!”
- “শেখ হাসিনার বিচার চাই!”
- “ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, ফ্যাসিবাদের আস্তানা!”
এই স্লোগানগুলো শোনা যায় পুরো ধানমন্ডি ৩২ এলাকায়। স্লোগানগুলো ছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এবং তারা তাদের মূল লক্ষ্য—শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানাচ্ছিল।
প্রতিবাদী ছাত্রদের উদ্দেশ্য
ছাত্র-জনতার এই প্রতিবাদ মূলত ছাত্রলীগের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার ভাষণের বিরুদ্ধে ছিল। ছাত্র-জনতার এই প্রতিবাদ কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য ছিল—ক্ষমতার অপব্যবহার, দেশের স্বৈরাচারি শাসন, এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ জানানো। তারা এই আন্দোলন দিয়ে গণঅভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচারি শাসনের পতন ঘটানোর পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়েছিল।
আন্দোলনকারীদের মনোবল
বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা, যারা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল, তারা নিজেদের দাবির প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা বিশ্বাস করে যে এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে চলমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতির অবসান ঘটানো সম্ভব। তাদের মূল চাওয়া ছিল—প্রতিবাদী একতাবদ্ধতা এবং দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা।
এদিকে, এই বিক্ষোভের ফলে ধানমন্ডি ৩২ এলাকাটি উত্তাল হয়ে ওঠে, যেখানে একে অপরকে সাহস যুগিয়ে তারা তাদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সংগঠিত হয়ে উঠে। সারা দেশে এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আরও বেশি ছাত্র-জনতা সংগঠিত হতে পারে বলে আশাবাদী আন্দোলনকারীরা।
প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এ মুহূর্তে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা করেছেন যে তাদের প্রতিবাদ চলবে এবং তারা সরকারের প্রতি তাদের দাবি আদায়ে অটল থাকবে। আগামী দিনে এই আন্দোলন আরো বৃহত্তর রূপ ধারণ করতে পারে বলে জানানো হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত, এবং কতটুকু নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।
এই ঘটনার পর, সরকার পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়নি। তবে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এবং জনসংখ্যার অংশগ্রহণের ভিত্তিতে, এমন আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এই প্রতিবাদ আন্দোলনটি আবারও ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ এবং রাজনৈতিক আদর্শের প্রতিফলন হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নিতে পারে।
Please Share This Post in Your Social Media

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ঢল

মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার এক বিশাল ঢল দেখা যায়। রাত ৮টার দিকে ছাত্র-জনতা স্লোগান দিতে দিতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হতে শুরু করে এবং এর পরই পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে।
এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে, যেখানে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল। ছাত্র-জনতার এই প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল সেই ভাষণের বিরুদ্ধে। তাদের দাবী ছিল— ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা এবং প্রতিবাদ জানানো।
বিক্ষোভের চিত্র
সন্ধ্যার আগে থেকেই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের আশপাশে জড়ো হতে শুরু করে। রাত ৮টার দিকে তাদের ঢল শুরু হয়ে পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু ভবনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। আন্দোলনকারীরা সেখানে দরজা ভেঙে বঙ্গবন্ধু ভবনে ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে তারা জানালার কাচ ভেঙে ফেলতে এবং ভবনের বিভিন্ন অংশের ইট খুলে নেয়ার চেষ্টা করতে থাকে।
এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভবনের ভিতরে আগুন ধরিয়ে দেয়, আর স্লোগান দিতে থাকে—
- “জ্বালো জ্বালো, আগুন জ্বালো!”
- “দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা!”
- “অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন!”
- “শেখ হাসিনার বিচার চাই!”
- “ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, ফ্যাসিবাদের আস্তানা!”
এই স্লোগানগুলো শোনা যায় পুরো ধানমন্ডি ৩২ এলাকায়। স্লোগানগুলো ছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এবং তারা তাদের মূল লক্ষ্য—শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানাচ্ছিল।
প্রতিবাদী ছাত্রদের উদ্দেশ্য
ছাত্র-জনতার এই প্রতিবাদ মূলত ছাত্রলীগের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার ভাষণের বিরুদ্ধে ছিল। ছাত্র-জনতার এই প্রতিবাদ কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য ছিল—ক্ষমতার অপব্যবহার, দেশের স্বৈরাচারি শাসন, এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ জানানো। তারা এই আন্দোলন দিয়ে গণঅভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচারি শাসনের পতন ঘটানোর পক্ষে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়েছিল।
আন্দোলনকারীদের মনোবল
বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা, যারা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল, তারা নিজেদের দাবির প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা বিশ্বাস করে যে এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে চলমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতির অবসান ঘটানো সম্ভব। তাদের মূল চাওয়া ছিল—প্রতিবাদী একতাবদ্ধতা এবং দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা।
এদিকে, এই বিক্ষোভের ফলে ধানমন্ডি ৩২ এলাকাটি উত্তাল হয়ে ওঠে, যেখানে একে অপরকে সাহস যুগিয়ে তারা তাদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সংগঠিত হয়ে উঠে। সারা দেশে এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আরও বেশি ছাত্র-জনতা সংগঠিত হতে পারে বলে আশাবাদী আন্দোলনকারীরা।
প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এ মুহূর্তে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা করেছেন যে তাদের প্রতিবাদ চলবে এবং তারা সরকারের প্রতি তাদের দাবি আদায়ে অটল থাকবে। আগামী দিনে এই আন্দোলন আরো বৃহত্তর রূপ ধারণ করতে পারে বলে জানানো হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত, এবং কতটুকু নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।
এই ঘটনার পর, সরকার পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়নি। তবে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এবং জনসংখ্যার অংশগ্রহণের ভিত্তিতে, এমন আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এই প্রতিবাদ আন্দোলনটি আবারও ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ এবং রাজনৈতিক আদর্শের প্রতিফলন হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নিতে পারে।