ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়ে থানায় জিডি করলেন ফুটবলার সুমাইয়া

- Update Time : ০৫:০৬:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১৮৩ Time View
জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্য মাতসুশিমা সুমাইয়া ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাওয়ার অভিযোগ এনে রাজধানীর মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। আজ বুধবার দুপুরে তিনি জিডি করেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মিডিয়া ম্যানেজার খালিদ মাহমুদ নওমী।
নারী ফুটবল দলে সংকট ও সুমাইয়ার বিদ্রোহ
গত কয়েকদিন ধরে জাতীয় দলের ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে নারী ফুটবলারদের বিরোধ নিয়ে আলোচনা চলছে ফুটবল মহলে। কোচের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে সুমাইয়াসহ ১৮ জন সিনিয়র ফুটবলার বিদ্রোহ করেছেন। এই সংকট সমাধানে বাফুফে তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি।
এর মধ্যেই গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন জাপান প্রবাসী ফুটবলার সুমাইয়া। ওই পোস্টে তিনি দাবি করেন, গত কয়েকদিনে একাধিকবার ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি আক্ষেপ করে লেখেন, কেন তিনি ফুটবলার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সুমাইয়ার আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট
ফেসবুকে সুমাইয়া লেখেন,
“আমি সুমাইয়া। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের একজন সদস্য। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেও আমি স্কুল টুর্নামেন্ট থেকে ফুটবল শুরু করি এবং ২০২৪ সালে সাফ
তিনি আরও বলেন,
“আমি ফুটবল শুরু করি তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে, যাতে তারা শুধু পড়াশোনার বাইরেও নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারে। আমি বিশ্বাস করতাম, কঠোর পরিশ্রম আর সংকল্প থাকলে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। কিন্তু আজ আমি আক্ষেপ নিয়ে বসে আছি।“
সুমাইয়া তার পোস্টে উল্লেখ করেন, তিনি পরিবার, পড়াশোনা এবং ব্যক্তিগত সময়ের অনেক কিছুই দেশের ফুটবলের জন্য উৎসর্গ করেছেন, কিন্তু কোনো স্বীকৃতি পাননি।
“আমি আমার পরিবার, ঈদের আনন্দ এবং আমার পড়াশোনা ছেড়ে দেশের জন্য খেলেছি, কিন্তু কেউ আমাদের এই ত্যাগের প্রশংসা করেনি।“
বাবা–মায়ের সঙ্গে লড়াই করেও অবহেলিত সুমাইয়া
জাপানিজ বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি এই ফুটবলার ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়তে নিজের বাবা–মায়ের সঙ্গে লড়াই করেছেন। তারা প্রথমে চাননি তিনি খেলাধুলায় যুক্ত হোন, কিন্তু সুমাইয়া তাদের বোঝান যে দেশ তার পাশে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি বলে তিনি আক্ষেপ করেন।
তিনি লেখেন,
“আমি বিশ্বাস করেছিলাম, বিপদে দেশ পাশে থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কেউ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভাবে না। আমি ও আমার সতীর্থরা যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছি, তা বিবেচনা করলে বোঝা যাবে আমাদের কতটা কষ্ট হয়েছে।“
সুমাইয়া আরও জানান, নারী ফুটবলারদের সমস্যা নিয়ে বাফুফে সভাপতিকে দেওয়া চিঠিটি ইংরেজিতে লিখে দেওয়ার কারণে তিনি লাগাতার ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাচ্ছেন।
“আমি কেবল একটি চিঠি ইংরেজিতে লিখে দিয়েছি। এই কারণেই আমাকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার কল্পনাতেও আসেনি, কেউ আমাকে এতটা ঘৃণা করতে পারে।“
নারী ফুটবলারদের অভিযোগ ও বাটলারের ভূমিকা
জাতীয় নারী ফুটবল দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে বডি শেমিং এবং অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলেছেন। তারা একটি লিখিত অভিযোগ তৈরি করেন, যা ইংরেজিতে অনুবাদ করে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আওয়ালকে পাঠানো হয়। অভিযোগপত্রটি ইংরেজিতে লিখে দেওয়ার কাজটি করেন সুমাইয়া।
এই ঘটনার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আক্রমণ শুরু হয়। একাধিকবার ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাওয়ার পর তিনি বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।
মানসিক ট্রমায় ভুগছেন সুমাইয়া
ফেসবুক পোস্টে সুমাইয়া জানান, তিনি মারাত্মক মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং এই অবস্থা থেকে কবে মুক্তি পাবেন, তা তিনি জানেন না।
“আমি জানি না, এই মানসিক ট্রমা কাটিয়ে উঠতে আর কতদিন লাগবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটার জন্য কাউকে এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত নয়।“
ফুটবলারদের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ
সুমাইয়ার পোস্ট ও থানায় জিডির ঘটনায় ফুটবল মহলে বিতর্ক ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। নারী ফুটবলারদের নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি সামনে এসেছে। বাংলাদেশে নারী খেলোয়াড়দের প্রতি অবহেলা ও বৈষম্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের, যা এই ঘটনার মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বাফুফে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও এ বিষয়ে কোনো সরকারি মন্তব্য করেনি। তবে ফুটবলপ্রেমীরা চাইছেন, সুমাইয়ার অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং নারী ফুটবলারদের জন্য একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।
Please Share This Post in Your Social Media

ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়ে থানায় জিডি করলেন ফুটবলার সুমাইয়া
জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্য মাতসুশিমা সুমাইয়া ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাওয়ার অভিযোগ এনে রাজধানীর মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। আজ বুধবার দুপুরে তিনি জিডি করেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মিডিয়া ম্যানেজার খালিদ মাহমুদ নওমী।
নারী ফুটবল দলে সংকট ও সুমাইয়ার বিদ্রোহ
গত কয়েকদিন ধরে জাতীয় দলের ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে নারী ফুটবলারদের বিরোধ নিয়ে আলোচনা চলছে ফুটবল মহলে। কোচের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে সুমাইয়াসহ ১৮ জন সিনিয়র ফুটবলার বিদ্রোহ করেছেন। এই সংকট সমাধানে বাফুফে তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি।
এর মধ্যেই গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন জাপান প্রবাসী ফুটবলার সুমাইয়া। ওই পোস্টে তিনি দাবি করেন, গত কয়েকদিনে একাধিকবার ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি আক্ষেপ করে লেখেন, কেন তিনি ফুটবলার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সুমাইয়ার আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট
ফেসবুকে সুমাইয়া লেখেন,
“আমি সুমাইয়া। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের একজন সদস্য। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেও আমি স্কুল টুর্নামেন্ট থেকে ফুটবল শুরু করি এবং ২০২৪ সালে
তিনি আরও বলেন,
“আমি ফুটবল শুরু করি তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে, যাতে তারা শুধু পড়াশোনার বাইরেও নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারে। আমি বিশ্বাস করতাম, কঠোর পরিশ্রম আর সংকল্প থাকলে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। কিন্তু আজ আমি আক্ষেপ নিয়ে বসে আছি।“
সুমাইয়া তার পোস্টে উল্লেখ করেন, তিনি পরিবার, পড়াশোনা এবং ব্যক্তিগত সময়ের অনেক কিছুই দেশের ফুটবলের জন্য উৎসর্গ করেছেন, কিন্তু কোনো স্বীকৃতি পাননি।
“আমি আমার পরিবার, ঈদের আনন্দ এবং আমার পড়াশোনা ছেড়ে দেশের জন্য খেলেছি, কিন্তু কেউ আমাদের এই ত্যাগের প্রশংসা করেনি।“
বাবা–মায়ের সঙ্গে লড়াই করেও অবহেলিত সুমাইয়া
জাপানিজ বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি এই ফুটবলার ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়তে নিজের বাবা–মায়ের সঙ্গে লড়াই করেছেন। তারা প্রথমে চাননি তিনি খেলাধুলায় যুক্ত হোন, কিন্তু সুমাইয়া তাদের বোঝান যে দেশ তার পাশে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি বলে তিনি আক্ষেপ করেন।
তিনি লেখেন,
“আমি বিশ্বাস করেছিলাম, বিপদে দেশ পাশে থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কেউ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভাবে না। আমি ও আমার সতীর্থরা যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছি, তা বিবেচনা করলে বোঝা যাবে আমাদের কতটা কষ্ট হয়েছে।“
সুমাইয়া আরও জানান, নারী ফুটবলারদের সমস্যা নিয়ে বাফুফে সভাপতিকে দেওয়া চিঠিটি ইংরেজিতে লিখে দেওয়ার কারণে তিনি লাগাতার ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাচ্ছেন।
“আমি কেবল একটি চিঠি ইংরেজিতে লিখে দিয়েছি। এই কারণেই আমাকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার কল্পনাতেও আসেনি, কেউ আমাকে এতটা ঘৃণা করতে পারে।“
নারী ফুটবলারদের অভিযোগ ও বাটলারের ভূমিকা
জাতীয় নারী ফুটবল দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে বডি শেমিং এবং অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলেছেন। তারা একটি লিখিত অভিযোগ তৈরি করেন, যা ইংরেজিতে অনুবাদ করে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আওয়ালকে পাঠানো হয়। অভিযোগপত্রটি ইংরেজিতে লিখে দেওয়ার কাজটি করেন সুমাইয়া।
এই ঘটনার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আক্রমণ শুরু হয়। একাধিকবার ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাওয়ার পর তিনি বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।
মানসিক ট্রমায় ভুগছেন সুমাইয়া
ফেসবুক পোস্টে সুমাইয়া জানান, তিনি মারাত্মক মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং এই অবস্থা থেকে কবে মুক্তি পাবেন, তা তিনি জানেন না।
“আমি জানি না, এই মানসিক ট্রমা কাটিয়ে উঠতে আর কতদিন লাগবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটার জন্য কাউকে এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত নয়।“
ফুটবলারদের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ
সুমাইয়ার পোস্ট ও থানায় জিডির ঘটনায় ফুটবল মহলে বিতর্ক ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। নারী ফুটবলারদের নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি সামনে এসেছে। বাংলাদেশে নারী খেলোয়াড়দের প্রতি অবহেলা ও বৈষম্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের, যা এই ঘটনার মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বাফুফে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও এ বিষয়ে কোনো সরকারি মন্তব্য করেনি। তবে ফুটবলপ্রেমীরা চাইছেন, সুমাইয়ার অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং নারী ফুটবলারদের জন্য একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।