সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ক্যান্সার প্রতিরোধে কী খাবেন, কী খাবেন না?

আশরাফুল ইসলাম মেহেদী
  • Update Time : ১১:৫৫:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১৪৫ Time View

1738672526 e6f5514c166d2cabadef3b81f21f26fe

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

ক্যান্সার একটি অতি গুরুতর রোগ, যেখানে শরীরের কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাধারণত, শরীরের কোষগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পর মারা যায় এবং নতুন কোষ তৈরি হয়। তবে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কোষগুলো আর মারা যায় না, বরং অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধি এক সময় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য আমাদের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিছু খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে, আবার কিছু খাবার ক্যান্সারের প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এই কারণে, আমাদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি, কারণ অবহেলা করলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।

ক্যান্সার এবং ফ্রি র‍্যাডিক্যালসের সম্পর্ক

ফ্রি র‍্যাডিক্যালস শরীরের জন্য ক্ষতিকর আণবিক কণা যা শরীরের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বা পরিবেশগত কারণে তৈরি হয়। যখন শরীরে অতিরিক্ত ফ্রি র‍্যাডিক্যালস জমা হয়, তখন এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করে, যা শরীরের কোষে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটায় এবং ক্যান্সারের মতো রোগের সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

ফ্রি র‍্যাডিক্যালস ক্যান্সারের ঝুঁকির একটি অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই ফ্রি র‍্যাডিক্যালসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের প্রয়োজন। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয় এবং ফ্রি র‍্যাডিক্যালসের ক্ষতিকর প্রভাবকে প্রতিরোধ করে। যদি আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, তবে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। এটি শুধু ক্যান্সার নয়, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য জটিল রোগের থেকেও সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। সুতরাং, আমাদের খাদ্যাভ্যাসে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় যেসব খাবার

কিছু খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে, যেগুলি নিয়মিতভাবে খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এসব খাবার থেকে বিরত থাকা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা জরুরি।

. প্রক্রিয়াজাত মাংস

প্রক্রিয়াজাত মাংসে নাইট্রেটস এবং নাইট্রাইটসের মতো রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। সসেজ, বেকন, হট ডগ, এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত মাংসের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এই খাবারগুলির অতিরিক্ত সেবন কোলন এবং পাকস্থলী ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

. ভাজা জাংক ফুড

বেশি তেলে ভাজা খাবার, যেমন ফাস্ট ফুড, চিপস, এবং অন্যান্য জাংক ফুড শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ধরনের খাবারগুলোতে ট্রান্স ফ্যাট থাকে, যা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকি এসব খাবারের অধিক সেবন হরমোনাল ইমব্যালেন্সও সৃষ্টি করতে পারে, যা প্রোস্টেট ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

. অ্যালকোহল

অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে এবং এটি বেশ কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে লিভার, ব্রেস্ট, কোলন এবং গলা ক্যান্সার। তবে, মদ্যপানের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করলে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

. চিনি উচ্চফ্যাট ডায়েট

চিনি এবং উচ্চ-ফ্যাট ডায়েটের সেবন শরীরের মেটাবলিজমকে বিঘ্নিত করতে পারে এবং এটি ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানোর একটি বড় কারণ, বিশেষ করে ব্রেস্ট, কোলন, এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে। উচ্চ-ফ্যাট ডায়েট শরীরের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা ক্যান্সারের বৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক।

. অতিরিক্ত লবণ প্যাকেজড ফুড

প্যাকেজড খাবার এবং অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার যেমন স্ন্যাকস, স্যুপ, এবং ক্যানড খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এগুলো শরীরের স্নায়ু এবং কোষের ক্ষতি করতে পারে এবং পাকস্থলীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

. ক্যাফেইন

ক্যাফেইনের বেশি সেবন শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষ করে অতিরিক্ত কফি বা সোডা পান করা। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এর বেশি সেবন হরমোনাল পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারে, যা ব্রেস্ট এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় যেসব খাবার

কিছু খাবার শরীরকে ক্যান্সারের কোষ থেকে রক্ষা করতে সহায়ক। এ ধরনের খাবার শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে এবং কোষগুলোকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।

. ফল

ফলসমূহ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং ফাইটোকেমিক্যালস সমৃদ্ধ, যা ক্যান্সারের কোষগুলোর বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কমলা, লেবু, পেঁপে, আঙুর, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রসপবেরি, এবং ডালিম ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। এগুলো শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং ফ্রি র‍্যাডিক্যালসের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

. শাকসবজি

ব্রোকলি, টমেটো, গাজর, কেল, রসুন, আদা, পালং শাকের মতো শাক-সবজি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং ফ্রি র‍্যাডিক্যালস থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়। এগুলো ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে, ব্রোকলি এবং টমেটোতে থাকা ফাইটোকেমিক্যালস এবং লাইকোপেন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

. ডাল গোটা শস্য

ডাল, গোটা শস্য এবং ডালজাতীয় খাবার ফাইবারের ভালো উৎস, যা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এই খাবারগুলো শরীরের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

. বাদাম বীজ

বাদাম, আখরোট, flaxseed এবং chia seed এ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ফাইবার থাকে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এই খাবারগুলো হৃৎপিণ্ডের জন্যও উপকারী এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

. সবুজ চা

সবুজ চাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাটেচিন এবং পলিফেনল থাকে, যা ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিকে বাধা দেয় এবং শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয়। এটি ফ্রি র‍্যাডিক্যালসের প্রভাবকে কমাতে সাহায্য করে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের এক শক্তিশালী উৎস হিসেবে কাজ করে।

মানসিক চাপ এবং ঘুমের ভূমিকা

ক্যান্সার প্রতিরোধে মানসিক চাপ কমানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়, শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়ে, যা ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য ধ্যান, যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া, যাদের জীবনযাত্রায় নিয়মিত ব্যায়াম ও ভালো মনোভাব রয়েছে, তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।

এছাড়া, পর্যাপ্ত ঘুমও অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম শরীরের সিস্টেম বুস্ট করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। যদি আপনার জীবনযাত্রায় পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম থাকে, তবে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী থাকে এবং এটি বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয়।

শরীরচর্চা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ

নিয়মিত শরীরচর্চা ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু আমাদের শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে না, বরং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। শরীরচর্চা নিয়মিত করলে, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে এবং প্রদাহের মাত্রা কমিয়ে দেয়। প্রাচীন সময় থেকেই জানানো হয়েছে যে, শরীরচর্চা ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। বিশেষ করে, কোলন, প্রোস্টেট, ব্রেস্ট এবং ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তাদের শরীরে সাইটোকাইনস এবং অন্যান্য অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানের স্তর বৃদ্ধি পায়, যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এই ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম বা যে কোনও শারীরিক কার্যকলাপ হতে পারে। এতে শরীরের মেটাবলিজম উন্নত হয়, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরের ভিতরের প্রদাহ কমে যায়, যা ক্যান্সারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করা শুধু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় না, বরং এটি মানসিক চাপও কমায়, যা ক্যান্সারের প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই একটি সুস্থ জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করা জরুরি, এবং এটি কেবল ক্যান্সার নয়, অন্যান্য রোগ থেকেও সুরক্ষা প্রদান করে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ক্যান্সার প্রতিরোধে কী খাবেন, কী খাবেন না?

Update Time : ১১:৫৫:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

ক্যান্সার একটি অতি গুরুতর রোগ, যেখানে শরীরের কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সাধারণত, শরীরের কোষগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পর মারা যায় এবং নতুন কোষ তৈরি হয়। তবে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কোষগুলো আর মারা যায় না, বরং অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধি এক সময় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য আমাদের জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিছু খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে, আবার কিছু খাবার ক্যান্সারের প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এই কারণে, আমাদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি, কারণ অবহেলা করলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।

ক্যান্সার এবং ফ্রি র‍্যাডিক্যালসের সম্পর্ক

ফ্রি র‍্যাডিক্যালস শরীরের জন্য ক্ষতিকর আণবিক কণা যা শরীরের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বা পরিবেশগত কারণে তৈরি হয়। যখন শরীরে অতিরিক্ত ফ্রি র‍্যাডিক্যালস জমা হয়, তখন এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করে, যা শরীরের কোষে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটায় এবং ক্যান্সারের মতো রোগের সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

ফ্রি র‍্যাডিক্যালস ক্যান্সারের ঝুঁকির একটি অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই ফ্রি র‍্যাডিক্যালসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের প্রয়োজন। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয় এবং ফ্রি র‍্যাডিক্যালসের ক্ষতিকর প্রভাবকে প্রতিরোধ করে। যদি আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, তবে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। এটি শুধু ক্যান্সার নয়, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য জটিল রোগের থেকেও সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। সুতরাং, আমাদের খাদ্যাভ্যাসে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় যেসব খাবার

কিছু খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে, যেগুলি নিয়মিতভাবে খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এসব খাবার থেকে বিরত থাকা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা জরুরি।

. প্রক্রিয়াজাত মাংস

প্রক্রিয়াজাত মাংসে নাইট্রেটস এবং নাইট্রাইটসের মতো রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। সসেজ, বেকন, হট ডগ, এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত মাংসের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এই খাবারগুলির অতিরিক্ত সেবন কোলন এবং পাকস্থলী ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

. ভাজা জাংক ফুড

বেশি তেলে ভাজা খাবার, যেমন ফাস্ট ফুড, চিপস, এবং অন্যান্য জাংক ফুড শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ধরনের খাবারগুলোতে ট্রান্স ফ্যাট থাকে, যা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকি এসব খাবারের অধিক সেবন হরমোনাল ইমব্যালেন্সও সৃষ্টি করতে পারে, যা প্রোস্টেট ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

. অ্যালকোহল

অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে এবং এটি বেশ কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে লিভার, ব্রেস্ট, কোলন এবং গলা ক্যান্সার। তবে, মদ্যপানের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করলে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

. চিনি উচ্চফ্যাট ডায়েট

চিনি এবং উচ্চ-ফ্যাট ডায়েটের সেবন শরীরের মেটাবলিজমকে বিঘ্নিত করতে পারে এবং এটি ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানোর একটি বড় কারণ, বিশেষ করে ব্রেস্ট, কোলন, এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে। উচ্চ-ফ্যাট ডায়েট শরীরের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা ক্যান্সারের বৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক।

. অতিরিক্ত লবণ প্যাকেজড ফুড

প্যাকেজড খাবার এবং অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার যেমন স্ন্যাকস, স্যুপ, এবং ক্যানড খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এগুলো শরীরের স্নায়ু এবং কোষের ক্ষতি করতে পারে এবং পাকস্থলীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

. ক্যাফেইন

ক্যাফেইনের বেশি সেবন শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষ করে অতিরিক্ত কফি বা সোডা পান করা। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এর বেশি সেবন হরমোনাল পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারে, যা ব্রেস্ট এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় যেসব খাবার

কিছু খাবার শরীরকে ক্যান্সারের কোষ থেকে রক্ষা করতে সহায়ক। এ ধরনের খাবার শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে এবং কোষগুলোকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।

. ফল

ফলসমূহ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং ফাইটোকেমিক্যালস সমৃদ্ধ, যা ক্যান্সারের কোষগুলোর বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কমলা, লেবু, পেঁপে, আঙুর, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রসপবেরি, এবং ডালিম ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। এগুলো শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং ফ্রি র‍্যাডিক্যালসের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।

. শাকসবজি

ব্রোকলি, টমেটো, গাজর, কেল, রসুন, আদা, পালং শাকের মতো শাক-সবজি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এবং ফ্রি র‍্যাডিক্যালস থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়। এগুলো ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে, ব্রোকলি এবং টমেটোতে থাকা ফাইটোকেমিক্যালস এবং লাইকোপেন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

. ডাল গোটা শস্য

ডাল, গোটা শস্য এবং ডালজাতীয় খাবার ফাইবারের ভালো উৎস, যা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এই খাবারগুলো শরীরের হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

. বাদাম বীজ

বাদাম, আখরোট, flaxseed এবং chia seed এ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ফাইবার থাকে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এই খাবারগুলো হৃৎপিণ্ডের জন্যও উপকারী এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

. সবুজ চা

সবুজ চাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাটেচিন এবং পলিফেনল থাকে, যা ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিকে বাধা দেয় এবং শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয়। এটি ফ্রি র‍্যাডিক্যালসের প্রভাবকে কমাতে সাহায্য করে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের এক শক্তিশালী উৎস হিসেবে কাজ করে।

মানসিক চাপ এবং ঘুমের ভূমিকা

ক্যান্সার প্রতিরোধে মানসিক চাপ কমানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়, শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়ে, যা ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য ধ্যান, যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া, যাদের জীবনযাত্রায় নিয়মিত ব্যায়াম ও ভালো মনোভাব রয়েছে, তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।

এছাড়া, পর্যাপ্ত ঘুমও অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম শরীরের সিস্টেম বুস্ট করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। যদি আপনার জীবনযাত্রায় পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম থাকে, তবে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী থাকে এবং এটি বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয়।

শরীরচর্চা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ

নিয়মিত শরীরচর্চা ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু আমাদের শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে না, বরং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। শরীরচর্চা নিয়মিত করলে, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে এবং প্রদাহের মাত্রা কমিয়ে দেয়। প্রাচীন সময় থেকেই জানানো হয়েছে যে, শরীরচর্চা ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। বিশেষ করে, কোলন, প্রোস্টেট, ব্রেস্ট এবং ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তাদের শরীরে সাইটোকাইনস এবং অন্যান্য অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানের স্তর বৃদ্ধি পায়, যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। এই ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম বা যে কোনও শারীরিক কার্যকলাপ হতে পারে। এতে শরীরের মেটাবলিজম উন্নত হয়, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরের ভিতরের প্রদাহ কমে যায়, যা ক্যান্সারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করা শুধু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় না, বরং এটি মানসিক চাপও কমায়, যা ক্যান্সারের প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই একটি সুস্থ জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করা জরুরি, এবং এটি কেবল ক্যান্সার নয়, অন্যান্য রোগ থেকেও সুরক্ষা প্রদান করে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share