সময়: বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

লিবিয়ায় ২৩ লাশ উদ্ধার: সবাই বাংলাদেশি নাগরিক বলে ধারণা

বিল্লাল হোসেন
  • Update Time : ০৫:৪৫:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১২৪ Time View

LIVIA 2

শেয়ার করুনঃ
Pin Share
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের ব্রেগা তীরে ভেসে আসা মরদেহ ছবি: লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেসবুক পেজ থেকে

 

লিবিয়ার পূর্ব উপকূলে ভূমধ্যসাগরে ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনায় ২৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিহতদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। ঘটনাটি আবারও অবৈধ অভিবাসনের ঝুঁকি ও বিপজ্জনক পরিণতির এক করুণ উদাহরণ হিসেবে সামনে এসেছে।

ভূমধ্যসাগরে বিপজ্জনক যাত্রার মর্মান্তিক পরিণতি

গত ২৫ জানুয়ারি, ৫৬ জন আরোহী নিয়ে লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করা একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। এরপর ২৮ থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে লিবিয়ার উপকূলে ২৩টি মরদেহ ভেসে আসে। স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতাবাস জানিয়েছে, গলিত অবস্থায় পাওয়া মরদেহগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করা না গেলেও, তাদের অবয়ব দেখে মনে করা হচ্ছে তারা সবাই বাংলাদেশি।

রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ও বিস্তারিত উদ্ধার প্রক্রিয়া

লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ খায়রুল বাসার রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) এক ভিডিও বার্তায় জানান, নৌকাডুবির পর ২৮ জানুয়ারি সাতজন, ২৯ জানুয়ারি ১১ জন, ৩০ জানুয়ারি ৩ জন এবং ৩১ জানুয়ারি ২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত লাশগুলো স্থানীয় হাসপাতাল ও মর্গে রাখা হয়েছিল, কিন্তু সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় পরে আজদাদিয়া এলাকায় সমাহিত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “লাশগুলো আজদাদিয়া এলাকায় সমাহিত করা হয়েছে, কারণ পচন ধরায় সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।” উদ্ধার ও দাফন প্রক্রিয়ায় লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্ট ও স্থানীয় প্রশাসন সহায়তা করেছে। লাশগুলোর সঙ্গে কোনো নথিপত্র না থাকায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। তবে, একজন বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবক লাশের অবয়ব দেখে তাদের বাংলাদেশি নাগরিক বলে মনে করছেন।

বেঁচে যাওয়া দুইজনের অবস্থা ও পরিচয় নিশ্চিতকরণের চ্যালেঞ্জ

নৌকাডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া দুজনকে স্থানীয় হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে, তারা এখনো সনাক্ত হননি। নিখোঁজ থাকা বাকি ৩১ জনের কোনো খোঁজ মেলেনি, যা স্বজনদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

দূতাবাসের পদক্ষেপ ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ দূতাবাস বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করতে ব্রেগা অঞ্চলে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছে, তবে এখনো অনুমতি মেলেনি। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের বেনগাজি অঞ্চলে বিদ্রোহী জেনারেল খলিফা হাফতারের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থাকায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ দূতাবাস বর্তমানে ‘দ্বার-আল-লিবিয়া’ নামের একটি সংগঠন এবং স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যও দূতাবাস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এ ধরনের বিপজ্জনক যাত্রা এড়াতে প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করছে।

অবৈধ অভিবাসনের কারণ ও চক্রের দৌরাত্ম্য

দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও উন্নত জীবনের আশায় অনেক বাংলাদেশি তরুণ অবৈধ উপায়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বিভিন্ন দালাল চক্র অভিবাসন প্রত্যাশীদের ভুল তথ্য দিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে প্ররোচিত করে। তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অভিবাসীরা লিবিয়ার মতো অস্থিতিশীল দেশে আটকা পড়েন এবং চরম ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে যাত্রা করতে বাধ্য হন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংগঠন অভিবাসন নীতির উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

লিবিয়া, ইতালি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একাধিক অভিবাসন সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে, তবে তা যথেষ্ট কঠোর নয় বলে অভিবাসন বিশ্লেষকরা মনে করেন। এদিকে, বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ পথ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে উদ্যোগ নিচ্ছে।

মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে কবে?

এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বারবার ঘটলেও বাংলাদেশি তরুণদের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা কমছে না। সরকারকে উচিত কঠোর নজরদারি চালিয়ে অবৈধ অভিবাসন দমন করা। পাশাপাশি অভিবাসীদের জন্য নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজলভ্য করতে হবে। দালালদের প্রতারণা বন্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে।

শেষ কথা

লিবিয়ায় ২৩ বাংলাদেশির মৃত্যু এবং আরও ৩১ জনের নিখোঁজ থাকার এই ঘটনায় আবারও স্পষ্ট হলো অবৈধ অভিবাসন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। রাষ্ট্র, পরিবার ও সমাজকে একত্রে কাজ করতে হবে যেন আর কোনো বাংলাদেশিকে এভাবে জীবন দিতে না হয়। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দালাল চক্র ও মানবপাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধুমাত্র সচেতনতা ও কার্যকর নীতির মাধ্যমেই এই মানবিক সংকটের সমাধান সম্ভব।

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
About Author Information

বিল্লাল হোসেন

বিল্লাল হোসেন, একজন প্রজ্ঞাবান পেশাজীবী, যিনি গণিতের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি সমৃদ্ধ ও বহুমুখী ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। তার আর্থিক খাতে যাত্রা তাকে নেতৃত্বের ভূমিকায় নিয়ে গেছে, বিশেষ করে সৌদি আরবের আল-রাজি ব্যাংকিং Inc. এবং ব্যাংক-আল-বিলাদে বিদেশী সম্পর্ক ও করেসপন্ডেন্ট মেইন্টেনেন্স অফিসার হিসেবে। প্রথাগত অর্থনীতির গণ্ডির বাইরে, বিল্লাল একজন প্রখ্যাত লেখক ও বিশ্লেষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে মননশীল কলাম ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করে। তার দক্ষতা বিস্তৃত বিষয় জুড়ে রয়েছে, যেমন অর্থনীতির জটিলতা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট, রেমিটেন্স, রিজার্ভ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত দিক। বিল্লাল তার লেখায় একটি অনন্য বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসেন, যা ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে অর্জিত বাস্তব জ্ঞানকে একত্রিত করে একাডেমিক কঠোরতার সাথে। তার প্রবন্ধগুলো শুধুমাত্র জটিল বিষয়গুলির উপর গভীর বোঝাপড়ার প্রতিফলন নয়, বরং পাঠকদের জন্য জ্ঞানপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যা তত্ত্ব ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। বিল্লাল হোসেনের অবদান তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে যে, তিনি আমাদের আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বের জটিলতাগুলি উন্মোচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি বিস্তৃত এবং আরও সূক্ষ্ম বোঝাপড়ার দিকে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

লিবিয়ায় ২৩ লাশ উদ্ধার: সবাই বাংলাদেশি নাগরিক বলে ধারণা

Update Time : ০৫:৪৫:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের ব্রেগা তীরে ভেসে আসা মরদেহ ছবি: লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেসবুক পেজ থেকে

 

লিবিয়ার পূর্ব উপকূলে ভূমধ্যসাগরে ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনায় ২৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিহতদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। ঘটনাটি আবারও অবৈধ অভিবাসনের ঝুঁকি ও বিপজ্জনক পরিণতির এক করুণ উদাহরণ হিসেবে সামনে এসেছে।

ভূমধ্যসাগরে বিপজ্জনক যাত্রার মর্মান্তিক পরিণতি

গত ২৫ জানুয়ারি, ৫৬ জন আরোহী নিয়ে লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করা একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। এরপর ২৮ থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে লিবিয়ার উপকূলে ২৩টি মরদেহ ভেসে আসে। স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতাবাস জানিয়েছে, গলিত অবস্থায় পাওয়া মরদেহগুলোর পরিচয় নিশ্চিত করা না গেলেও, তাদের অবয়ব দেখে মনে করা হচ্ছে তারা সবাই বাংলাদেশি।

রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ও বিস্তারিত উদ্ধার প্রক্রিয়া

লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ খায়রুল বাসার রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) এক ভিডিও বার্তায় জানান, নৌকাডুবির পর ২৮ জানুয়ারি সাতজন, ২৯ জানুয়ারি ১১ জন, ৩০ জানুয়ারি ৩ জন এবং ৩১ জানুয়ারি ২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত লাশগুলো স্থানীয় হাসপাতাল ও মর্গে রাখা হয়েছিল, কিন্তু সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় পরে আজদাদিয়া এলাকায় সমাহিত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “লাশগুলো আজদাদিয়া এলাকায় সমাহিত করা হয়েছে, কারণ পচন ধরায় সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।” উদ্ধার ও দাফন প্রক্রিয়ায় লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্ট ও স্থানীয় প্রশাসন সহায়তা করেছে। লাশগুলোর সঙ্গে কোনো নথিপত্র না থাকায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি। তবে, একজন বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবক লাশের অবয়ব দেখে তাদের বাংলাদেশি নাগরিক বলে মনে করছেন।

বেঁচে যাওয়া দুইজনের অবস্থা ও পরিচয় নিশ্চিতকরণের চ্যালেঞ্জ

নৌকাডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া দুজনকে স্থানীয় হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে, তারা এখনো সনাক্ত হননি। নিখোঁজ থাকা বাকি ৩১ জনের কোনো খোঁজ মেলেনি, যা স্বজনদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

দূতাবাসের পদক্ষেপ ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ দূতাবাস বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করতে ব্রেগা অঞ্চলে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছে, তবে এখনো অনুমতি মেলেনি। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের বেনগাজি অঞ্চলে বিদ্রোহী জেনারেল খলিফা হাফতারের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থাকায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ দূতাবাস বর্তমানে ‘দ্বার-আল-লিবিয়া’ নামের একটি সংগঠন এবং স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যও দূতাবাস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এ ধরনের বিপজ্জনক যাত্রা এড়াতে প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করছে।

অবৈধ অভিবাসনের কারণ ও চক্রের দৌরাত্ম্য

দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও উন্নত জীবনের আশায় অনেক বাংলাদেশি তরুণ অবৈধ উপায়ে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বিভিন্ন দালাল চক্র অভিবাসন প্রত্যাশীদের ভুল তথ্য দিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে প্ররোচিত করে। তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অভিবাসীরা লিবিয়ার মতো অস্থিতিশীল দেশে আটকা পড়েন এবং চরম ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে যাত্রা করতে বাধ্য হন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংগঠন অভিবাসন নীতির উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

লিবিয়া, ইতালি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একাধিক অভিবাসন সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে, তবে তা যথেষ্ট কঠোর নয় বলে অভিবাসন বিশ্লেষকরা মনে করেন। এদিকে, বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ পথ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে উদ্যোগ নিচ্ছে।

মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে কবে?

এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বারবার ঘটলেও বাংলাদেশি তরুণদের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা কমছে না। সরকারকে উচিত কঠোর নজরদারি চালিয়ে অবৈধ অভিবাসন দমন করা। পাশাপাশি অভিবাসীদের জন্য নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজলভ্য করতে হবে। দালালদের প্রতারণা বন্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে।

শেষ কথা

লিবিয়ায় ২৩ বাংলাদেশির মৃত্যু এবং আরও ৩১ জনের নিখোঁজ থাকার এই ঘটনায় আবারও স্পষ্ট হলো অবৈধ অভিবাসন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। রাষ্ট্র, পরিবার ও সমাজকে একত্রে কাজ করতে হবে যেন আর কোনো বাংলাদেশিকে এভাবে জীবন দিতে না হয়। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দালাল চক্র ও মানবপাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধুমাত্র সচেতনতা ও কার্যকর নীতির মাধ্যমেই এই মানবিক সংকটের সমাধান সম্ভব।

শেয়ার করুনঃ
Pin Share