সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

তরুণ উপদেষ্টার পদত্যাগ: নতুন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব গ্রহণের সম্ভাবনা

বিল্লাল হোসেন
  • Update Time : ০৫:২৯:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১৩৫ Time View

ADVISER

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে গঠিত এই দলটি মধ্যপন্থী আদর্শের অনুসারী হবে বলে জানা গেছে। নতুন এই দলে অন্তর্বর্তী সরকারের একজন তরুণ উপদেষ্টার নেতৃত্ব গ্রহণের সম্ভাবনা প্রবল।

নতুন দলের আদর্শ ও পরিকল্পনা

জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, নতুন দলটি কোনো চরম ডান বা বামপন্থী আদর্শের অনুসারী হবে না, বরং এটি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে মধ্যপন্থী রাজনৈতিক ধারা গড়ে তুলতে চায়। যদিও দলের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে একাধিক প্রস্তাবের ভিত্তিতে এটি নির্ধারণের কাজ চলছে। পাশাপাশি, দলের প্রতীক নির্বাচন নিয়েও আলোচনা চলছে।

নেতৃত্ব ও সম্ভাব্য পদত্যাগ

জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে যে, অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী তিনজন উপদেষ্টার (মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ) মধ্যে একজন পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আসতে পারেন। অন্য দুই উপদেষ্টাও পরবর্তী সময়ে সুবিধাজনক মুহূর্তে পদত্যাগ করে দলে যোগ দিতে পারেন। তাঁদের মধ্যে একজন আগামী জুন মাসে উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে নতুন দলে যোগ দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

style="text-align: justify;">রাজনৈতিক দল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন গণমাধ্যমে জানিয়েছেন যে, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে নতুন রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। এই দলটি এমন ব্যক্তিদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হতে চায়, যারা গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন কিন্তু এখনো কোনো বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি আরও বলেন, ‘শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে আমরা জনমত যাচাই করছি। অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র উপদেষ্টাদের নাম আলোচনায় রয়েছে, তবে এখনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। একই সঙ্গে, তাঁরা পদত্যাগ করলে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে থাকবে, সেই বিষয়েও আলোচনা চলছে।’

নতুন দলের সাংগঠনিক কাঠামো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন রাজনৈতিক দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন উপদেষ্টার ভাইও আসতে পারেন, যিনি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে এই আন্দোলনের ভিত্তিতে গঠিত হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি, যা দেশের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। গত বছরের ৮ নভেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের প্রথম কমিটি গঠন করে এবং ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ২৫৭টি থানা ও উপজেলায় প্রতিনিধি কমিটি গঠন করেছে। বর্তমানে সারা দেশে তাদের প্রতিনিধির সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২ নভেম্বর তাদের প্রথম কমিটি গঠন করে এবং এখন পর্যন্ত ৩০টি জেলা, ৫টি মহানগর, ৮টি থানা, ২টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩টি কলেজ ও ১টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে। বর্তমানে এই সংগঠনের সদস্যসংখ্যা প্রায় সাড়ে আট হাজার।

জাতীয় নাগরিক কমিটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

যদিও নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, তবে জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। এটি একটি ‘সিভিল পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে কাজ করবে, যেখানে রাজনীতি ও নাগরিক আন্দোলন সমন্বয় করা হবে। একইভাবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রমও চালু থাকবে।

নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ এবং তরুণ উপদেষ্টার সম্ভাব্য নেতৃত্ব গ্রহণ দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক ধারার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
About Author Information

বিল্লাল হোসেন

বিল্লাল হোসেন, একজন প্রজ্ঞাবান পেশাজীবী, যিনি গণিতের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ হিসেবে একটি সমৃদ্ধ ও বহুমুখী ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। তার আর্থিক খাতে যাত্রা তাকে নেতৃত্বের ভূমিকায় নিয়ে গেছে, বিশেষ করে সৌদি আরবের আল-রাজি ব্যাংকিং Inc. এবং ব্যাংক-আল-বিলাদে বিদেশী সম্পর্ক ও করেসপন্ডেন্ট মেইন্টেনেন্স অফিসার হিসেবে। প্রথাগত অর্থনীতির গণ্ডির বাইরে, বিল্লাল একজন প্রখ্যাত লেখক ও বিশ্লেষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে মননশীল কলাম ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করে। তার দক্ষতা বিস্তৃত বিষয় জুড়ে রয়েছে, যেমন অর্থনীতির জটিলতা, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট, রেমিটেন্স, রিজার্ভ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত দিক। বিল্লাল তার লেখায় একটি অনন্য বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসেন, যা ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে অর্জিত বাস্তব জ্ঞানকে একত্রিত করে একাডেমিক কঠোরতার সাথে। তার প্রবন্ধগুলো শুধুমাত্র জটিল বিষয়গুলির উপর গভীর বোঝাপড়ার প্রতিফলন নয়, বরং পাঠকদের জন্য জ্ঞানপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যা তত্ত্ব ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। বিল্লাল হোসেনের অবদান তার প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে যে, তিনি আমাদের আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বের জটিলতাগুলি উন্মোচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি বিস্তৃত এবং আরও সূক্ষ্ম বোঝাপড়ার দিকে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

তরুণ উপদেষ্টার পদত্যাগ: নতুন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব গ্রহণের সম্ভাবনা

Update Time : ০৫:২৯:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে গঠিত এই দলটি মধ্যপন্থী আদর্শের অনুসারী হবে বলে জানা গেছে। নতুন এই দলে অন্তর্বর্তী সরকারের একজন তরুণ উপদেষ্টার নেতৃত্ব গ্রহণের সম্ভাবনা প্রবল।

নতুন দলের আদর্শ ও পরিকল্পনা

জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, নতুন দলটি কোনো চরম ডান বা বামপন্থী আদর্শের অনুসারী হবে না, বরং এটি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে মধ্যপন্থী রাজনৈতিক ধারা গড়ে তুলতে চায়। যদিও দলের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে একাধিক প্রস্তাবের ভিত্তিতে এটি নির্ধারণের কাজ চলছে। পাশাপাশি, দলের প্রতীক নির্বাচন নিয়েও আলোচনা চলছে।

নেতৃত্ব ও সম্ভাব্য পদত্যাগ

জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে যে, অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী তিনজন উপদেষ্টার (মাহফুজ আলম, নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ) মধ্যে একজন পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আসতে পারেন। অন্য দুই উপদেষ্টাও পরবর্তী সময়ে সুবিধাজনক মুহূর্তে পদত্যাগ করে দলে যোগ দিতে পারেন। তাঁদের মধ্যে একজন আগামী জুন মাসে উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে নতুন দলে যোগ দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

style="text-align: justify;">রাজনৈতিক দল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন গণমাধ্যমে জানিয়েছেন যে, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে নতুন রাজনৈতিক দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। এই দলটি এমন ব্যক্তিদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হতে চায়, যারা গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন কিন্তু এখনো কোনো বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি আরও বলেন, ‘শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে আমরা জনমত যাচাই করছি। অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র উপদেষ্টাদের নাম আলোচনায় রয়েছে, তবে এখনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। একই সঙ্গে, তাঁরা পদত্যাগ করলে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে থাকবে, সেই বিষয়েও আলোচনা চলছে।’

নতুন দলের সাংগঠনিক কাঠামো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন রাজনৈতিক দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন উপদেষ্টার ভাইও আসতে পারেন, যিনি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে এই আন্দোলনের ভিত্তিতে গঠিত হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি, যা দেশের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। গত বছরের ৮ নভেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের প্রথম কমিটি গঠন করে এবং ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ২৫৭টি থানা ও উপজেলায় প্রতিনিধি কমিটি গঠন করেছে। বর্তমানে সারা দেশে তাদের প্রতিনিধির সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২ নভেম্বর তাদের প্রথম কমিটি গঠন করে এবং এখন পর্যন্ত ৩০টি জেলা, ৫টি মহানগর, ৮টি থানা, ২টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩টি কলেজ ও ১টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে। বর্তমানে এই সংগঠনের সদস্যসংখ্যা প্রায় সাড়ে আট হাজার।

জাতীয় নাগরিক কমিটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

যদিও নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, তবে জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। এটি একটি ‘সিভিল পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে কাজ করবে, যেখানে রাজনীতি ও নাগরিক আন্দোলন সমন্বয় করা হবে। একইভাবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রমও চালু থাকবে।

নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ এবং তরুণ উপদেষ্টার সম্ভাব্য নেতৃত্ব গ্রহণ দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক ধারার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

শেয়ার করুনঃ
Pin Share