সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ভারতের সামরিক খরচের বৃদ্ধি: ২০২৫ সালে প্রতিরক্ষা বাজেট ৭৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৩:৩৮:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১৪৪ Time View

ezgif 6db60d3eb580f 679f335c65539

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

 ভারত ২০২৫ সালের জন্য ৭৮ বিলিয়ন ডলারের একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাজেট ঘোষণা করেছে, যা গত বছরের বরাদ্দের তুলনায় ৯.৫% বৃদ্ধি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এই বরাদ্দ ভারতের সামরিক সক্ষমতা শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে। দেশটি বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম প্রতিরক্ষা খরচকারী হিসেবে অবস্থান করছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন এর আগে রয়েছে। ভারতের সামরিক ব্যয় এখন তার মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) ৮% অর্জন করেছে, যা জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামরিক আধুনিকীকরণের দিকে একটি উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের সঙ্কেত।

২০২৫ সালের প্রতিরক্ষা বাজেটের মূল বিবরণ

২০২৫ সালের ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটটি বেশ কয়েকটি প্রধান প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্ত করেছে যা দেশটির সামরিক শক্তি এবং সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে করা হয়েছে, বিশেষত প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে। এই বাজেটের কিছু মূল উপাদান নিচে তুলে ধরা হল:

  1. পুঁজি ব্যয়ের বৃদ্ধি: ভারত সরকার প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণের জন্য উল্লেখযোগ্য তহবিল বরাদ্দ করেছে, যার মধ্যে সামরিক অবকাঠামো উন্নত করা, অস্ত্রশস্ত্র আধুনিকীকরণ এবং নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রতিরক্ষা পুঁজি ব্যয়ে ৪.৬% বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা সামরিক অবকাঠামো উন্নত করার জন্য নিবেদিত।
  2. যুদ্ধবিমান ক্রয়: বাজেটে ৫.৬ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে নতুন যুদ্ধবিমান কেনার জন্য। ভারতের বায়ু সেনা একটি বড় উন্নয়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কারণ দেশটি তার পুরনো বিমানবহরকে আধুনিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য অত্যাধুনিক বিমান দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে চায়। এই ক্রয় পরিকল্পনাটি ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শক্তিশালী করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
  3. নৌবাহিনী সম্প্রসারণ: ভারতের নৌবাহিনী শক্তি বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত ২.৮ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এটি ভারতের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়ানোর এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তার প্রভাব বিস্তারের কৌশলের অংশ। এই তহবিলটি নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণে, যেমন উন্নত সাবমেরিন, যুদ্ধজাহাজ এবং নৌ বিমান ক্রয়ে ব্যবহৃত হবে।
  4. মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: আধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নত করার অংশ হিসেবে ভারত মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে বিনিয়োগ করছে। বিশ্বজুড়ে মিসাইল এবং ড্রোন প্রযুক্তির বৃদ্ধি, বিশেষ করে চীনসহ শত্রু রাষ্ট্রগুলির দ্বারা, এই ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
  5. সাইবার যুদ্ধ এবং মহাকাশ প্রযুক্তি: সাইবার আক্রমণ এবং মহাকাশ ভিত্তিক যুদ্ধের বাড়তে থাকা হুমকির প্রেক্ষিতে ভারত তার সাইবার সক্ষমতা এবং মহাকাশ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা বেশি করে উপলব্ধি করেছে। বাজেটে সাইবার প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং সামরিক উদ্দেশ্যে মহাকাশ গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

ভারতের বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা অবস্থান

ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটে এই বিশাল বৃদ্ধি দেশটির বৃহত্তর কৌশলগত লক্ষ্যকে প্রতিফলিত করে, যা এশিয়ায় একটি প্রভাবশালী সামরিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের উদ্দেশ্যে। ভারত প্রতিরক্ষা খাতে কয়েক বছর ধরে steady বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশেষত চীনের সামরিক আধুনিকীকরণের কারণে বেড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতকে চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আরো সামরিক খরচ বাড়াতে হবে।

চীন তার আক্রমণাত্মক সম্প্রসারণবাদী নীতির মাধ্যমে এশিয়া অঞ্চলে প্রধান হুমকিতে পরিণত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে হিমালয়ের সীমান্ত বিতর্কগুলির কারণে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে ভারতের জন্য সামরিক প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এছাড়া, ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশল শুধু প্রতিক্রিয়া নয়, এটি একটি প্রো-অ্যাকটিভ কৌশলও। ভারত সরকার তার সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চায়। ভারতের নৌবাহিনী সম্প্রসারণ, উন্নত যুদ্ধবিমান এবং মিসাইল সিস্টেমে বিনিয়োগ এই বৃহত্তর কৌশলের অংশ।

সামরিক ব্যয়ের মাঝেও সামাজিকঅর্থনৈতিক উদ্বেগ

যদিও প্রতিরক্ষা খাতে বড় ধরনের বৃদ্ধি ঘটেছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ভারতজুড়ে ৮০ মিলিয়নের বেশি মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছেন, এবং বৈষম্য এবং বেকারত্ব বাড়ার বিষয়ে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে। সরকারের এই বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট, যা জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, সেইসঙ্গে দেশের দারিদ্র্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পর্কিত অগ্রাধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছে।

এই বিতর্ক আরও তীব্র হয়ে উঠেছে কারণ ভারত সরকারের সামরিক ব্যয় বাড়লেও, দেশটি অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলির সাথে মোকাবিলা করছে। সমালোচকরা বলছেন, সামরিক খাতে বিশাল বরাদ্দ দরিদ্রতা নিরসন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য অপর্যাপ্ত হতে পারে।

পেনশন এবং বেতন প্রদান চ্যালেঞ্জ

ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের একটি বড় অংশ এখনও সামরিক কর্মীদের পেনশন এবং বেতন প্রদানকে বরাদ্দ করা হয়। এটি একটি দীর্ঘদিনের উদ্বেগের বিষয়, কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যয় সামরিক আধুনিকীকরণের জন্য বরাদ্দিত তহবিলের একটি বড় অংশ শোষণ করে, যা জাতীয় প্রতিরক্ষা উন্নয়নের দিকে কোনো সরাসরি অবদান রাখে না।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সাবেক আর্থিক পরামর্শক অমিত কৌশিক বলেছেন, প্রতিরক্ষা বাজেটের একটি বড় অংশ এখনও পেনশন এবং বেতন প্রদানেই ব্যয় হচ্ছে, যদিও সরকার বাহিনী আধুনিকীকরণের চেষ্টা করছে। এটি বাজেটের কার্যকর ব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন তোলছে এবং বিশেষজ্ঞরা আরও বেশি তহবিল পুঁজি ব্যয়ে, যা সামরিক আধুনিকীকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তা বরাদ্দ করার কথা বলছেন।

ভূরাজনৈতিক প্রভাব

ভারতের expanding প্রতিরক্ষা বাজেট অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। ভারত তার সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর সাথে সাথে প্রতিবেশী দেশগুলি, বিশেষ করে চীন এবং পাকিস্তান, তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে প্রতিক্রিয়া জানাবে, যার ফলে অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা হতে পারে। ভারতের সামরিক সম্প্রসারণ চীন-ভারত সীমান্তে বিদ্যমান উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, যেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংঘর্ষ হয়েছে।

এছাড়া, এই অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের বৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী আঞ্চলিক বিরোধ এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবেলার কূটনৈতিক প্রচেষ্টাগুলিকে জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে ভারত এবং চীনের মধ্যে কৌশলগত প্রতিযোগিতা প্রতিরক্ষা ব্যয় এবং সামরিক আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টাগুলিকে উভয় পক্ষের জন্য চলমান বিষয় করে তুলবে।

ভবিষ্যতের পথ: প্রতিরক্ষা উন্নয়ন এর মধ্যে সমন্বয়

যদিও ভারতের বেড়ে চলা প্রতিরক্ষা বাজেট তার সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার এবং একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যের প্রতিফলন, চ্যালেঞ্জ হল সামরিক অগ্রাধিকার এবং দেশের উন্নয়নমূলক চাহিদাগুলির মধ্যে একটি সঠিক সমন্বয় স্থাপন। ভারতের প্রতিরক্ষা খরচ এবং দারিদ্র্য নিরসন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা সম্পর্কিত দেশীয় খরচের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখার প্রশ্নটি আগামী বছরগুলিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে রয়ে যাবে।

ভারত যখন ভবিষ্যতে সামরিক সংঘর্ষ এবং ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন এটি নিশ্চিত করতে হবে যে তার প্রতিরক্ষা বিনিয়োগগুলি জনগণের জরুরি চাহিদাগুলির প্রতি উদাসীন না হয়। জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় স্থাপনই ভারতের স্থিতিশীলতা এবং দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

শেষে, ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেশের সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি নির্দেশ করে, বিশেষত প্রতিবেশী প্রতিযোগিতার বাড়তে থাকা চ্যালেঞ্জগুলির মুখে। তবে, সামরিক ব্যয় এবং দেশীয় কল্যাণের জন্য সম্পদ বরাদ্দের সঠিক ভারসাম্য নিয়ে চলমান বিতর্ক ভবিষ্যতে ভারতের প্রতিরক্ষা নীতিগুলিকে প্রভাবিত করতে থাকবে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

ভারতের সামরিক খরচের বৃদ্ধি: ২০২৫ সালে প্রতিরক্ষা বাজেট ৭৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে

Update Time : ০৩:৩৮:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

 ভারত ২০২৫ সালের জন্য ৭৮ বিলিয়ন ডলারের একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাজেট ঘোষণা করেছে, যা গত বছরের বরাদ্দের তুলনায় ৯.৫% বৃদ্ধি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এই বরাদ্দ ভারতের সামরিক সক্ষমতা শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে। দেশটি বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম প্রতিরক্ষা খরচকারী হিসেবে অবস্থান করছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন এর আগে রয়েছে। ভারতের সামরিক ব্যয় এখন তার মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) ৮% অর্জন করেছে, যা জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামরিক আধুনিকীকরণের দিকে একটি উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের সঙ্কেত।

২০২৫ সালের প্রতিরক্ষা বাজেটের মূল বিবরণ

২০২৫ সালের ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটটি বেশ কয়েকটি প্রধান প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্ত করেছে যা দেশটির সামরিক শক্তি এবং সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে করা হয়েছে, বিশেষত প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে। এই বাজেটের কিছু মূল উপাদান নিচে তুলে ধরা হল:

  1. পুঁজি ব্যয়ের বৃদ্ধি: ভারত সরকার প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণের জন্য উল্লেখযোগ্য তহবিল বরাদ্দ করেছে, যার মধ্যে সামরিক অবকাঠামো উন্নত করা, অস্ত্রশস্ত্র আধুনিকীকরণ এবং নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রতিরক্ষা পুঁজি ব্যয়ে ৪.৬% বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা সামরিক অবকাঠামো উন্নত করার জন্য নিবেদিত।
  2. যুদ্ধবিমান ক্রয়:
    বাজেটে ৫.৬ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে নতুন যুদ্ধবিমান কেনার জন্য। ভারতের বায়ু সেনা একটি বড় উন্নয়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কারণ দেশটি তার পুরনো বিমানবহরকে আধুনিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য অত্যাধুনিক বিমান দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে চায়। এই ক্রয় পরিকল্পনাটি ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শক্তিশালী করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
  3. নৌবাহিনী সম্প্রসারণ: ভারতের নৌবাহিনী শক্তি বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত ২.৮ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এটি ভারতের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়ানোর এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে তার প্রভাব বিস্তারের কৌশলের অংশ। এই তহবিলটি নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণে, যেমন উন্নত সাবমেরিন, যুদ্ধজাহাজ এবং নৌ বিমান ক্রয়ে ব্যবহৃত হবে।
  4. মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: আধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নত করার অংশ হিসেবে ভারত মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে বিনিয়োগ করছে। বিশ্বজুড়ে মিসাইল এবং ড্রোন প্রযুক্তির বৃদ্ধি, বিশেষ করে চীনসহ শত্রু রাষ্ট্রগুলির দ্বারা, এই ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
  5. সাইবার যুদ্ধ এবং মহাকাশ প্রযুক্তি: সাইবার আক্রমণ এবং মহাকাশ ভিত্তিক যুদ্ধের বাড়তে থাকা হুমকির প্রেক্ষিতে ভারত তার সাইবার সক্ষমতা এবং মহাকাশ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা বেশি করে উপলব্ধি করেছে। বাজেটে সাইবার প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং সামরিক উদ্দেশ্যে মহাকাশ গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্যও বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

ভারতের বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা অবস্থান

ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটে এই বিশাল বৃদ্ধি দেশটির বৃহত্তর কৌশলগত লক্ষ্যকে প্রতিফলিত করে, যা এশিয়ায় একটি প্রভাবশালী সামরিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের উদ্দেশ্যে। ভারত প্রতিরক্ষা খাতে কয়েক বছর ধরে steady বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশেষত চীনের সামরিক আধুনিকীকরণের কারণে বেড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতকে চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আরো সামরিক খরচ বাড়াতে হবে।

চীন তার আক্রমণাত্মক সম্প্রসারণবাদী নীতির মাধ্যমে এশিয়া অঞ্চলে প্রধান হুমকিতে পরিণত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে হিমালয়ের সীমান্ত বিতর্কগুলির কারণে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে ভারতের জন্য সামরিক প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এছাড়া, ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশল শুধু প্রতিক্রিয়া নয়, এটি একটি প্রো-অ্যাকটিভ কৌশলও। ভারত সরকার তার সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে চায়। ভারতের নৌবাহিনী সম্প্রসারণ, উন্নত যুদ্ধবিমান এবং মিসাইল সিস্টেমে বিনিয়োগ এই বৃহত্তর কৌশলের অংশ।

সামরিক ব্যয়ের মাঝেও সামাজিকঅর্থনৈতিক উদ্বেগ

যদিও প্রতিরক্ষা খাতে বড় ধরনের বৃদ্ধি ঘটেছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ভারতজুড়ে ৮০ মিলিয়নের বেশি মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছেন, এবং বৈষম্য এবং বেকারত্ব বাড়ার বিষয়ে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে। সরকারের এই বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট, যা জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, সেইসঙ্গে দেশের দারিদ্র্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পর্কিত অগ্রাধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছে।

এই বিতর্ক আরও তীব্র হয়ে উঠেছে কারণ ভারত সরকারের সামরিক ব্যয় বাড়লেও, দেশটি অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলির সাথে মোকাবিলা করছে। সমালোচকরা বলছেন, সামরিক খাতে বিশাল বরাদ্দ দরিদ্রতা নিরসন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য অপর্যাপ্ত হতে পারে।

পেনশন এবং বেতন প্রদান চ্যালেঞ্জ

ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের একটি বড় অংশ এখনও সামরিক কর্মীদের পেনশন এবং বেতন প্রদানকে বরাদ্দ করা হয়। এটি একটি দীর্ঘদিনের উদ্বেগের বিষয়, কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যয় সামরিক আধুনিকীকরণের জন্য বরাদ্দিত তহবিলের একটি বড় অংশ শোষণ করে, যা জাতীয় প্রতিরক্ষা উন্নয়নের দিকে কোনো সরাসরি অবদান রাখে না।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সাবেক আর্থিক পরামর্শক অমিত কৌশিক বলেছেন, প্রতিরক্ষা বাজেটের একটি বড় অংশ এখনও পেনশন এবং বেতন প্রদানেই ব্যয় হচ্ছে, যদিও সরকার বাহিনী আধুনিকীকরণের চেষ্টা করছে। এটি বাজেটের কার্যকর ব্যবহারের বিষয়ে প্রশ্ন তোলছে এবং বিশেষজ্ঞরা আরও বেশি তহবিল পুঁজি ব্যয়ে, যা সামরিক আধুনিকীকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তা বরাদ্দ করার কথা বলছেন।

ভূরাজনৈতিক প্রভাব

ভারতের expanding প্রতিরক্ষা বাজেট অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। ভারত তার সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর সাথে সাথে প্রতিবেশী দেশগুলি, বিশেষ করে চীন এবং পাকিস্তান, তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে প্রতিক্রিয়া জানাবে, যার ফলে অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা হতে পারে। ভারতের সামরিক সম্প্রসারণ চীন-ভারত সীমান্তে বিদ্যমান উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, যেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংঘর্ষ হয়েছে।

এছাড়া, এই অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের বৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী আঞ্চলিক বিরোধ এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবেলার কূটনৈতিক প্রচেষ্টাগুলিকে জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে ভারত এবং চীনের মধ্যে কৌশলগত প্রতিযোগিতা প্রতিরক্ষা ব্যয় এবং সামরিক আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টাগুলিকে উভয় পক্ষের জন্য চলমান বিষয় করে তুলবে।

ভবিষ্যতের পথ: প্রতিরক্ষা উন্নয়ন এর মধ্যে সমন্বয়

যদিও ভারতের বেড়ে চলা প্রতিরক্ষা বাজেট তার সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার এবং একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যের প্রতিফলন, চ্যালেঞ্জ হল সামরিক অগ্রাধিকার এবং দেশের উন্নয়নমূলক চাহিদাগুলির মধ্যে একটি সঠিক সমন্বয় স্থাপন। ভারতের প্রতিরক্ষা খরচ এবং দারিদ্র্য নিরসন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা সম্পর্কিত দেশীয় খরচের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখার প্রশ্নটি আগামী বছরগুলিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে রয়ে যাবে।

ভারত যখন ভবিষ্যতে সামরিক সংঘর্ষ এবং ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন এটি নিশ্চিত করতে হবে যে তার প্রতিরক্ষা বিনিয়োগগুলি জনগণের জরুরি চাহিদাগুলির প্রতি উদাসীন না হয়। জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে সমন্বয় স্থাপনই ভারতের স্থিতিশীলতা এবং দীর্ঘমেয়াদী বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

শেষে, ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেশের সামরিক অবস্থান শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি নির্দেশ করে, বিশেষত প্রতিবেশী প্রতিযোগিতার বাড়তে থাকা চ্যালেঞ্জগুলির মুখে। তবে, সামরিক ব্যয় এবং দেশীয় কল্যাণের জন্য সম্পদ বরাদ্দের সঠিক ভারসাম্য নিয়ে চলমান বিতর্ক ভবিষ্যতে ভারতের প্রতিরক্ষা নীতিগুলিকে প্রভাবিত করতে থাকবে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share