গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে বলপ্রয়োগ? ট্রাম্প প্রশাসনের আক্রমণাত্মক ইঙ্গিত!

- Update Time : ০২:৩৪:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
- / ১১৬ Time View
গ্রিনল্যান্ড কেনার ধারণাটি নিছক একটি কৌতুক নয়, বরং এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যদি গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তাহলে বলপ্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এই বক্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন আর্কটিক অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়ছে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নতুন বাণিজ্য পথগুলোর উন্মোচনের ফলে এই অঞ্চল কৌশলগতভাবে অত্যন্ত মূল্যবান হয়ে উঠছে। মার্কিন সরকার দীর্ঘদিন ধরেই গ্রিনল্যান্ডকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থান হিসেবে দেখে আসছে, কারণ এটি উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সংযোগস্থলে অবস্থিত এবং সামরিক ঘাঁটি স্থাপন ও সম্পদ আহরণের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি), মার্কিন সাংবাদিক মেগিন কেলির টেলিভিশন শোতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুবিও বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্রিনল্যান্ড কিনতে চান, এবং যদি তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দ্বীপটি দখল করতেও পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু জমি অধিগ্রহণের বিষয় নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। আগামী বছরগুলোতে আর্কটিক মহাসাগর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ হয়ে উঠবে। চীন সেটি দখলে নিতে চাইবে, যা আমাদের জন্য হুমকি। তাই বিষয়টি অবশ্যই সমাধান করতে হবে।”
চার বছরের মধ্যে গ্রিনল্যান্ড দখল?
সাক্ষাৎকারে রুবিওকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ট্রাম্প প্রশাসন কি ২০২৮ সালের মধ্যে গ্রিনল্যান্ড কিনতে পারবে? উত্তরে তিনি বলেন, “এই বিষয়ে প্রেসিডেন্টই ভালো বলতে পারবেন। তবে এটুকু নিশ্চিত—চার বছর পর আমাদের অবস্থান আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্কটিক অঞ্চলে তার উপস্থিতি ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে, সামরিক সম্প্রসারণ এবং কূটনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব মোকাবিলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যদি কূটনৈতিক আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, সামরিক শক্তির প্রদর্শন, বা সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের মতো বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কঠোর প্রতিক্রিয়া
রুবিওর মন্তব্যের পর গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউটে এগেডে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। যদি কেউ আমাদের ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করে, আমাদের জনগণ তা প্রতিহত করবে।”
যদিও গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, তবে এটি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখে। বিশাল এই দ্বীপে মাত্র ৫৬,৫৮৩ জন বাস করে, যাদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ইনুইট জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। দ্বীপটি বিরল খনিজ, তেল ও গ্যাসসহ প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, যা বৈশ্বিক বাজারে অত্যন্ত মূল্যবান।
ডেনমার্ক সরকারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাট ফ্রেডরিকসেন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, গ্রিনল্যান্ডের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপস করা হবে না, এবং যেকোনো ধরনের আগ্রাসন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রতিরোধের মুখে পড়বে।
এর আগে, গত ২৫ ডিসেম্বর, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একটি পোস্টে বলেন, “বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার স্বার্থে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ এখন আমাদের হাতে থাকা জরুরি।”
কিন্তু ট্রাম্পের বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেন, “গ্রিনল্যান্ড আমাদের। এটি বিক্রির জন্য নয় এবং কখনোই বিক্রি হবে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি এবং তা বৃথা যেতে দেব না।”
বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি
ট্রাম্প প্রশাসনের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের চেষ্টায় বলপ্রয়োগের পথে যায়, তবে এটি বৈশ্বিক সংঘাতের সূত্রপাত করতে পারে। ন্যাটো মিত্ররা, বিশেষ করে কানাডা ও ইউরোপীয় দেশগুলো, আর্কটিক অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘও শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় উত্তপ্ত ইস্যুতে পরিণত হতে পারে, বিশেষ করে যখন আর্কটিক অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। এই অঞ্চলে রাশিয়া তার সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে এবং চীন ব্যাপক অর্থনৈতিক বিনিয়োগ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা আরও বড় সংঘর্ষ সৃষ্টি করতে পারে, যা বৈশ্বিক শান্তির প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
সূত্র: রয়টার্স
Please Share This Post in Your Social Media

গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে বলপ্রয়োগ? ট্রাম্প প্রশাসনের আক্রমণাত্মক ইঙ্গিত!

গ্রিনল্যান্ড কেনার ধারণাটি নিছক একটি কৌতুক নয়, বরং এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যদি গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তাহলে বলপ্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এই বক্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন আর্কটিক অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়ছে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নতুন বাণিজ্য পথগুলোর উন্মোচনের ফলে এই অঞ্চল কৌশলগতভাবে অত্যন্ত মূল্যবান হয়ে উঠছে। মার্কিন সরকার দীর্ঘদিন ধরেই গ্রিনল্যান্ডকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থান হিসেবে দেখে আসছে, কারণ এটি উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সংযোগস্থলে অবস্থিত এবং সামরিক ঘাঁটি স্থাপন ও সম্পদ আহরণের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি), মার্কিন সাংবাদিক মেগিন কেলির টেলিভিশন শোতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুবিও বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্রিনল্যান্ড কিনতে চান, এবং যদি তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দ্বীপটি দখল করতেও পারেন।”
তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু জমি অধিগ্রহণের বিষয় নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। আগামী বছরগুলোতে আর্কটিক মহাসাগর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ হয়ে উঠবে। চীন সেটি দখলে নিতে চাইবে, যা আমাদের জন্য হুমকি। তাই বিষয়টি অবশ্যই সমাধান করতে হবে।”
চার বছরের মধ্যে গ্রিনল্যান্ড দখল?
সাক্ষাৎকারে রুবিওকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ট্রাম্প প্রশাসন কি ২০২৮ সালের মধ্যে গ্রিনল্যান্ড কিনতে পারবে? উত্তরে তিনি বলেন, “এই বিষয়ে প্রেসিডেন্টই ভালো বলতে পারবেন। তবে এটুকু নিশ্চিত—চার বছর পর আমাদের অবস্থান আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্কটিক অঞ্চলে তার উপস্থিতি ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে, সামরিক সম্প্রসারণ এবং কূটনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব মোকাবিলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। যদি কূটনৈতিক আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, সামরিক শক্তির প্রদর্শন, বা সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের মতো বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কঠোর প্রতিক্রিয়া
রুবিওর মন্তব্যের পর গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউটে এগেডে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। যদি কেউ আমাদের ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করে, আমাদের জনগণ তা প্রতিহত করবে।”
যদিও গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, তবে এটি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখে। বিশাল এই দ্বীপে মাত্র ৫৬,৫৮৩ জন বাস করে, যাদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ইনুইট জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। দ্বীপটি বিরল খনিজ, তেল ও গ্যাসসহ প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, যা বৈশ্বিক বাজারে অত্যন্ত মূল্যবান।
ডেনমার্ক সরকারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাট ফ্রেডরিকসেন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, গ্রিনল্যান্ডের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপস করা হবে না, এবং যেকোনো ধরনের আগ্রাসন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রতিরোধের মুখে পড়বে।
এর আগে, গত ২৫ ডিসেম্বর, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একটি পোস্টে বলেন, “বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার স্বার্থে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ এখন আমাদের হাতে থাকা জরুরি।”
কিন্তু ট্রাম্পের বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেন, “গ্রিনল্যান্ড আমাদের। এটি বিক্রির জন্য নয় এবং কখনোই বিক্রি হবে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি এবং তা বৃথা যেতে দেব না।”
বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি
ট্রাম্প প্রশাসনের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের চেষ্টায় বলপ্রয়োগের পথে যায়, তবে এটি বৈশ্বিক সংঘাতের সূত্রপাত করতে পারে। ন্যাটো মিত্ররা, বিশেষ করে কানাডা ও ইউরোপীয় দেশগুলো, আর্কটিক অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘও শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় উত্তপ্ত ইস্যুতে পরিণত হতে পারে, বিশেষ করে যখন আর্কটিক অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। এই অঞ্চলে রাশিয়া তার সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে এবং চীন ব্যাপক অর্থনৈতিক বিনিয়োগ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা আরও বড় সংঘর্ষ সৃষ্টি করতে পারে, যা বৈশ্বিক শান্তির প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
সূত্র: রয়টার্স