সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

গাজীপুরে টিউলিপের বিপুল সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:৩৫:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১১৭ Time View

9 20250131114436

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গাজীপুরে শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করা টিউলিপ সিদ্দিকের নামে থাকা বিশাল রিসোর্টের অনুসন্ধান শুরু করেছে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ‘টিউলিপস টেরিটোরি’সহ শেখ হাসিনার পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে এবং এই বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তের জন্য সংস্থাটি দ্রুত টিম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

টিউলিপস টেরিটোরির অনুসন্ধান

দুদক সূত্র জানায়, গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কানাইয়া এলাকায় ৩৫ থেকে ৪০ বিঘা জমির উপর নির্মিত ‘টিউলিপস টেরিটোরি’ নামে বিশাল বাগানবাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। এখানে ফুলের বাগান, নানা জাতের গাছপালা, বিশেষ ধরনের ডুপ্লেক্স বাড়ি, বিশাল আকারের পুকুর, শান বাঁধানো ঘাট এবং বিস্তৃত জলাশয় রয়েছে। বাগানবাড়িটিতে একাধিক আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ভবন তৈরি করা হয়েছে, যা বিলাসবহুল আবাসন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে শেখ পরিবারের নামে জমি ও অন্যান্য সম্পদেরও খোঁজ পাওয়া গেছে। দুদক এই সম্পদগুলোর উৎস, বিনিয়োগের বৈধতা ও কর সংক্রান্ত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে।

পরিবারের অন্যান্য সম্পদ

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাজীপুরে বাংলাদেশ স্কাউট প্রশিক্ষণ ভবনের পূর্ব পাশে ২০ থেকে ২৫ বিঘা জমিতে শেখ রেহানা ও তাঁর স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিকের নামে একটি বাংলোর সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলোটির চারপাশে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং অভ্যন্তরে উন্নত মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া, শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারেক আহমদ সিদ্দিক ও তার ভাই রফিক আহমেদ সিদ্দিকের নামেও সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তারেক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে টিউলিপস টেরিটোরি গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, বাঙ্গালগাছ এলাকায় ‘বাগান বিলাস’, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার পাশে ‘ফাওজাল বাগানবাড়ি’ এবং কালিয়াকৈরের ‘মৌচাক বাগানবাড়ি’সহ বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল বাংলোর সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব সম্পদ আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এবং বিলাসবহুল জীবনযাপনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে।

আর্থিক লেনদেন বিনিয়োগের উৎস

দুদক সূত্র জানিয়েছে, শেখ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে অর্থ এনে গোপনে বিনিয়োগের অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংক লেনদেন, সম্পত্তি কেনাবেচার দলিলপত্র, এবং অন্যান্য আর্থিক নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। দুদক ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে।

আইনি পদক্ষেপ পরবর্তী কার্যক্রম

দুদক নিশ্চিত করেছে যে, এই সম্পদগুলোর উৎস অনুসন্ধান করে বৈধতা যাচাই করা হবে। যদি কোনো অবৈধ উপায়ের মাধ্যমে এসব সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য দুদক শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে। এ বিষয়ে শেখ পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজীপুরের এই সম্পদের অনুসন্ধান দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দিক নির্দেশনা দেবে। এই তদন্তের মাধ্যমে শেখ পরিবারের আর্থিক কার্যক্রম ও সম্পদের প্রকৃত অবস্থা উন্মোচিত হতে পারে, যা দেশের রাজনীতি ও দুর্নীতি দমন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

গাজীপুরে টিউলিপের বিপুল সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক

Update Time : ০৫:৩৫:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গাজীপুরে শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করা টিউলিপ সিদ্দিকের নামে থাকা বিশাল রিসোর্টের অনুসন্ধান শুরু করেছে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ‘টিউলিপস টেরিটোরি’সহ শেখ হাসিনার পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে এবং এই বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তের জন্য সংস্থাটি দ্রুত টিম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

টিউলিপস টেরিটোরির অনুসন্ধান

দুদক সূত্র জানায়, গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কানাইয়া এলাকায় ৩৫ থেকে ৪০ বিঘা জমির উপর নির্মিত ‘টিউলিপস টেরিটোরি’ নামে বিশাল বাগানবাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। এখানে ফুলের বাগান, নানা জাতের গাছপালা, বিশেষ ধরনের ডুপ্লেক্স বাড়ি, বিশাল আকারের পুকুর, শান বাঁধানো ঘাট এবং বিস্তৃত জলাশয় রয়েছে। বাগানবাড়িটিতে একাধিক আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ভবন তৈরি করা হয়েছে, যা বিলাসবহুল আবাসন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে শেখ পরিবারের নামে জমি ও অন্যান্য সম্পদেরও খোঁজ পাওয়া গেছে। দুদক এই সম্পদগুলোর উৎস, বিনিয়োগের বৈধতা ও কর সংক্রান্ত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে।

পরিবারের অন্যান্য সম্পদ

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাজীপুরে বাংলাদেশ স্কাউট প্রশিক্ষণ ভবনের পূর্ব পাশে ২০ থেকে ২৫ বিঘা জমিতে শেখ রেহানা ও তাঁর স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিকের নামে একটি বাংলোর সন্ধান পাওয়া গেছে। বাংলোটির চারপাশে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং অভ্যন্তরে উন্নত মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া, শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারেক আহমদ সিদ্দিক ও তার ভাই রফিক আহমেদ সিদ্দিকের নামেও সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তারেক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে টিউলিপস টেরিটোরি গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, বাঙ্গালগাছ এলাকায় ‘বাগান বিলাস’, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার পাশে ‘ফাওজাল বাগানবাড়ি’ এবং কালিয়াকৈরের ‘মৌচাক বাগানবাড়ি’সহ বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল বাংলোর সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব সম্পদ আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এবং বিলাসবহুল জীবনযাপনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে।

আর্থিক লেনদেন বিনিয়োগের উৎস

দুদক সূত্র জানিয়েছে, শেখ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে অর্থ এনে গোপনে বিনিয়োগের অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংক লেনদেন, সম্পত্তি কেনাবেচার দলিলপত্র, এবং অন্যান্য আর্থিক নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। দুদক ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে।

আইনি পদক্ষেপ পরবর্তী কার্যক্রম

দুদক নিশ্চিত করেছে যে, এই সম্পদগুলোর উৎস অনুসন্ধান করে বৈধতা যাচাই করা হবে। যদি কোনো অবৈধ উপায়ের মাধ্যমে এসব সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য দুদক শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে। এ বিষয়ে শেখ পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজীপুরের এই সম্পদের অনুসন্ধান দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দিক নির্দেশনা দেবে। এই তদন্তের মাধ্যমে শেখ পরিবারের আর্থিক কার্যক্রম ও সম্পদের প্রকৃত অবস্থা উন্মোচিত হতে পারে, যা দেশের রাজনীতি ও দুর্নীতি দমন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share