ভারতে বাংলাদেশি ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার: আত্মহত্যা নাকি অন্য কিছু?

- Update Time : ১২:৫২:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
- / ১১৩ Time View

ভারতের গুজরাট রাজ্যের ভদোদরা শহরের নর্মদা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে মোহনা মন্ডল নামের এক বাংলাদেশি নারী শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মোহনা এম এস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন এবং সেখানকার রাওপুরা এলাকায় একাই বসবাস করতেন। তার মৃত্যুর ঘটনাটি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
আত্মহত্যার ইঙ্গিত নাকি রহস্য?
পুলিশের দাবি, মোহনা একটি সুইসাইড নোট রেখে গেছেন, যেখানে তিনি নিজেই তার চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা লিখেছেন। তবে, আত্মহত্যার জন্য কাউকে দায়ী করেননি এবং মৃত্যুর কারণও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। ফলে এটি শুধুই আত্মহত্যা নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।
সহপাঠীদের সন্দেহ ও উদ্বেগ
গত মঙ্গলবার মোহনার প্রথম বর্ষের প্রথম পরীক্ষা ছিল, যেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এই বিষয়টি তার বাংলাদেশি সহপাঠীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করে। পরীক্ষার পর তাকে ফোন করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। একই সময়ে, মোহনার পরিবারও তার সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা মোহনার সহপাঠীদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা তার অ্যাপার্টমেন্টে যান। দরজায় নক করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তারা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন এবং মোহনাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।
পুলিশের তদন্ত ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা
রাওপুরা পুলিশ থানার কর্মকর্তা কুলদীপ সিং যাদব জানান, তারা মোহনার সহপাঠীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, কিন্তু কেউই তার মানসিক অবস্থার বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পড়াশোনার চাপের কারণেই মোহনা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।
এম এস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে মোহনার পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। রাওপুরা থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও সম্ভাব্য কারণ
মোহনার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শ্বাসরোধের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, ঝুলে থাকার কারণে শ্বাসরোধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে, এটি নিছক আত্মহত্যা নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে, তা নিশ্চিত করতে আরও তদন্ত চালানো হবে।
মানসিক চাপে ছিলেন মোহনা?
তার এক বাংলাদেশি সহপাঠী জানান, মোহনা দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৯০% নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন এবং গত বছরের সেপ্টেম্বরে এম এস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। প্রথমে তিনি হোস্টেলে থাকলেও পরে একাই নর্মদা অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে শুরু করেন। সহপাঠীর মতে, মোহনা পড়াশোনা নিয়ে বেশ মানসিক চাপে ছিলেন এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবেন কি না, সে বিষয়েও উদ্বিগ্ন ছিলেন।
উদ্বেগজনক বাস্তবতা
প্রবাসী শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ এবং একাকীত্বের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত। বিদেশে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাকীত্ব ও মানসিক চাপ থেকে হতাশা সৃষ্টি হতে পারে, যা কখনো কখনো আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেয়।
মোহনার মৃত্যু কেবল তার পরিবার নয়, সমস্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এক বড় ধাক্কা। এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আরও সচেতন হওয়ার বার্তা দেয়। আত্মহত্যা রোধে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শদানের ব্যবস্থা আরও জোরদার করা দরকার।
মোহনার মৃত্যুর আসল কারণ কী, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশের চূড়ান্ত তদন্তের অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে এটি নিশ্চিত যে, তার মৃত্যু একটি দুঃখজনক ঘটনা যা নতুন করে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।
Please Share This Post in Your Social Media

ভারতে বাংলাদেশি ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার: আত্মহত্যা নাকি অন্য কিছু?


ভারতের গুজরাট রাজ্যের ভদোদরা শহরের নর্মদা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে মোহনা মন্ডল নামের এক বাংলাদেশি নারী শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মোহনা এম এস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন এবং সেখানকার রাওপুরা এলাকায় একাই বসবাস করতেন। তার মৃত্যুর ঘটনাটি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
আত্মহত্যার ইঙ্গিত নাকি রহস্য?
পুলিশের দাবি, মোহনা একটি সুইসাইড নোট রেখে গেছেন, যেখানে তিনি নিজেই তার চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা লিখেছেন। তবে, আত্মহত্যার জন্য কাউকে দায়ী করেননি এবং মৃত্যুর কারণও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। ফলে এটি শুধুই আত্মহত্যা নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।
সহপাঠীদের সন্দেহ ও উদ্বেগ
গত মঙ্গলবার মোহনার প্রথম বর্ষের প্রথম পরীক্ষা ছিল, যেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এই বিষয়টি তার বাংলাদেশি সহপাঠীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করে। পরীক্ষার পর তাকে ফোন করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। একই সময়ে, মোহনার পরিবারও তার সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা মোহনার সহপাঠীদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা তার অ্যাপার্টমেন্টে যান। দরজায় নক করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তারা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন এবং মোহনাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।
পুলিশের তদন্ত ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা
রাওপুরা পুলিশ থানার কর্মকর্তা কুলদীপ সিং যাদব জানান, তারা মোহনার সহপাঠীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, কিন্তু কেউই তার মানসিক অবস্থার বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পড়াশোনার চাপের কারণেই মোহনা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।
এম এস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে মোহনার পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। রাওপুরা থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও সম্ভাব্য কারণ
মোহনার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শ্বাসরোধের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, ঝুলে থাকার কারণে শ্বাসরোধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে, এটি নিছক আত্মহত্যা নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে, তা নিশ্চিত করতে আরও তদন্ত চালানো হবে।
মানসিক চাপে ছিলেন মোহনা?
তার এক বাংলাদেশি সহপাঠী জানান, মোহনা দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৯০% নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন এবং গত বছরের সেপ্টেম্বরে এম এস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। প্রথমে তিনি হোস্টেলে থাকলেও পরে একাই নর্মদা অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে শুরু করেন। সহপাঠীর মতে, মোহনা পড়াশোনা নিয়ে বেশ মানসিক চাপে ছিলেন এবং পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবেন কি না, সে বিষয়েও উদ্বিগ্ন ছিলেন।
উদ্বেগজনক বাস্তবতা
প্রবাসী শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ এবং একাকীত্বের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত। বিদেশে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাকীত্ব ও মানসিক চাপ থেকে হতাশা সৃষ্টি হতে পারে, যা কখনো কখনো আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেয়।
মোহনার মৃত্যু কেবল তার পরিবার নয়, সমস্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এক বড় ধাক্কা। এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আরও সচেতন হওয়ার বার্তা দেয়। আত্মহত্যা রোধে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শদানের ব্যবস্থা আরও জোরদার করা দরকার।
মোহনার মৃত্যুর আসল কারণ কী, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশের চূড়ান্ত তদন্তের অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে এটি নিশ্চিত যে, তার মৃত্যু একটি দুঃখজনক ঘটনা যা নতুন করে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।