ওয়াশিংটনে হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষে উড়োজাহাজ দুই টুকরা হয়ে নদীতে পড়ল

- Update Time : ১২:৩৩:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
- / ১০১ Time View

ওয়াশিংটন ডিসির আকাশে একটি উড়োজাহাজ ও একটি হেলিকপ্টারের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটেছে, যার ফলে উড়োজাহাজটি দুই টুকরা হয়ে পটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এই দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, যা সমগ্র দেশকে গভীর শোকে নিমজ্জিত করেছে।
দুর্ঘটনার বিবরণ
স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯টার দিকে এই সংঘর্ষ ঘটে। মার্কিন ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, পিএসএ এয়ারলাইন্স পরিচালিত উড়োজাহাজটি রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছিল, তখন এটি মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সঙ্গে মাঝ আকাশে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আকাশে এক বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে, যার পর মুহূর্তেই উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ নদীতে পড়তে দেখা যায়।
টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন এবং হতাহতের কথা নিশ্চিত করেছেন, তবে সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করেননি। ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) এবং এফএএ যৌথভাবে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে খারাপ আবহাওয়া এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে সম্ভাব্য যোগাযোগ বিভ্রাট দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
উদ্ধার অভিযান ও অনুসন্ধান
দুর্ঘটনার পরপরই একাধিক সংস্থা পটোম্যাক নদীতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ডুবুরিরা এখনো নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করছেন, পাশাপাশি উদ্ধার করা ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করা হচ্ছে। নদীর চারপাশে বেশ কয়েকটি উদ্ধারকারী নৌকা, হেলিকপ্টার ও ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিএসএ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটিতে ৬০ জন যাত্রী এবং ৪ জন ক্রু ছিলেন, অন্যদিকে ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটিতে ছিলেন ৩ জন মার্কিন সেনাসদস্য। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উদ্ধারকারী দল দু’টি বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের চেষ্টা করছে, যা ফ্লাইটের তথ্য এবং ককপিটের কথোপকথন বিশ্লেষণে সহায়তা করবে। এফএএ জানিয়েছে, সম্পূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
এফএএ নিশ্চিত করেছে যে পিএসএ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৫৩৪২ কানসাস থেকে উড্ডয়ন করেছিল। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের মালিকানাধীন এই উড়োজাহাজটি ৬৫ জন যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা রাখে।
একজন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে দুর্ঘটনায় তাঁদের একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার জড়িত ছিল। এ ঘটনায় পেন্টাগন ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ পৃথক তদন্ত পরিচালনা করছে।
ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বোউসার দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি আমাদের শহর এবং জাতির জন্য এক গভীর ট্র্যাজেডি। আমরা তদন্তে সহায়তা করব এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তথ্য জানাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিমানবন্দরের প্রতিক্রিয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
দুর্ঘটনার পর রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল বিমানবন্দরের সব উড়োজাহাজের ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুনরায় বিমান চলাচল শুরুর আগে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিরাপদ করতে তারা কাজ করছেন।
অন্যান্য বিমান, যেগুলো রিগ্যান বিমানবন্দরে অবতরণের কথা ছিল, সেগুলোকে ডালাস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ও বাল্টিমোর-ওয়াশিংটন ইন্টারন্যাশনাল থারগুড মার্শাল এয়ারপোর্টে পুনর্নির্দেশ করা হয়েছে। যাত্রীদের তাঁদের বিমান সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ঘটনাকে “ভয়াবহ দুর্ঘটনা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং জরুরি উদ্ধার কর্মীদের প্রশংসা করেছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও গভীর শোক প্রকাশ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন এবং তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তদন্ত ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
এনটিএসবি এবং এফএএ দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণের জন্য বিমান ও হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল লগ এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি পরীক্ষা করবে। পাইলট ত্রুটি, যান্ত্রিক ব্যর্থতা বা আকাশসীমায় অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে সংঘর্ষ হয়েছে কি না, তা যাচাই করা হবে।
বিমান বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ বিমানবন্দরের চারপাশে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছেন যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়। কিছু আইনপ্রণেতা সামরিক ও বেসামরিক বিমানের জন্য পৃথক আকাশসীমার ব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং শিগগিরই বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে। পুরো দেশ এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় শোকাহত।
Please Share This Post in Your Social Media

ওয়াশিংটনে হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষে উড়োজাহাজ দুই টুকরা হয়ে নদীতে পড়ল


ওয়াশিংটন ডিসির আকাশে একটি উড়োজাহাজ ও একটি হেলিকপ্টারের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটেছে, যার ফলে উড়োজাহাজটি দুই টুকরা হয়ে পটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এই দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, যা সমগ্র দেশকে গভীর শোকে নিমজ্জিত করেছে।
দুর্ঘটনার বিবরণ
স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯টার দিকে এই সংঘর্ষ ঘটে। মার্কিন ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, পিএসএ এয়ারলাইন্স পরিচালিত উড়োজাহাজটি রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছিল, তখন এটি মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সঙ্গে মাঝ আকাশে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আকাশে এক বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে, যার পর মুহূর্তেই উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষ নদীতে পড়তে দেখা যায়।
টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন এবং হতাহতের কথা নিশ্চিত করেছেন, তবে সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করেননি। ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) এবং এফএএ যৌথভাবে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে খারাপ আবহাওয়া এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে সম্ভাব্য যোগাযোগ বিভ্রাট দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
উদ্ধার অভিযান ও অনুসন্ধান
দুর্ঘটনার পরপরই একাধিক সংস্থা পটোম্যাক নদীতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ডুবুরিরা এখনো নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করছেন, পাশাপাশি উদ্ধার করা ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করা হচ্ছে। নদীর চারপাশে বেশ কয়েকটি উদ্ধারকারী নৌকা, হেলিকপ্টার ও ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিএসএ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটিতে ৬০ জন যাত্রী এবং ৪ জন ক্রু ছিলেন, অন্যদিকে ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটিতে ছিলেন ৩ জন মার্কিন সেনাসদস্য। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উদ্ধারকারী দল দু’টি বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের চেষ্টা করছে, যা ফ্লাইটের তথ্য এবং ককপিটের কথোপকথন বিশ্লেষণে সহায়তা করবে। এফএএ জানিয়েছে, সম্পূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
এফএএ নিশ্চিত করেছে যে পিএসএ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৫৩৪২ কানসাস থেকে উড্ডয়ন করেছিল। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের মালিকানাধীন এই উড়োজাহাজটি ৬৫ জন যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা রাখে।
একজন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে দুর্ঘটনায় তাঁদের একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার জড়িত ছিল। এ ঘটনায় পেন্টাগন ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ পৃথক তদন্ত পরিচালনা করছে।
ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বোউসার দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি আমাদের শহর এবং জাতির জন্য এক গভীর ট্র্যাজেডি। আমরা তদন্তে সহায়তা করব এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তথ্য জানাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিমানবন্দরের প্রতিক্রিয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
দুর্ঘটনার পর রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল বিমানবন্দরের সব উড়োজাহাজের ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুনরায় বিমান চলাচল শুরুর আগে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিরাপদ করতে তারা কাজ করছেন।
অন্যান্য বিমান, যেগুলো রিগ্যান বিমানবন্দরে অবতরণের কথা ছিল, সেগুলোকে ডালাস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ও বাল্টিমোর-ওয়াশিংটন ইন্টারন্যাশনাল থারগুড মার্শাল এয়ারপোর্টে পুনর্নির্দেশ করা হয়েছে। যাত্রীদের তাঁদের বিমান সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ঘটনাকে “ভয়াবহ দুর্ঘটনা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং জরুরি উদ্ধার কর্মীদের প্রশংসা করেছেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও গভীর শোক প্রকাশ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন এবং তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তদন্ত ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
এনটিএসবি এবং এফএএ দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণের জন্য বিমান ও হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল লগ এবং আবহাওয়া পরিস্থিতি পরীক্ষা করবে। পাইলট ত্রুটি, যান্ত্রিক ব্যর্থতা বা আকাশসীমায় অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে সংঘর্ষ হয়েছে কি না, তা যাচাই করা হবে।
বিমান বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ বিমানবন্দরের চারপাশে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছেন যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়। কিছু আইনপ্রণেতা সামরিক ও বেসামরিক বিমানের জন্য পৃথক আকাশসীমার ব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং শিগগিরই বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে। পুরো দেশ এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় শোকাহত।