যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার তিন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার: উদ্বেগের নতুন মাত্রা

- Update Time : ০৯:৪৭:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৯০ Time View
যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার অপব্যবহারের অভিযোগে তিনজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য এক নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে, পিএইচডি করতে আসা আরও একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে জেএফকে (JFK) বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। মার্কিন অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) বিভাগের কড়াকড়ির ফলে ইমিগ্রেশন নীতিতে পরিবর্তন আসছে, যার ফলে বৈধ শিক্ষার্থীরাও সন্দেহের সম্মুখীন হচ্ছেন।
স্টুডেন্ট ভিসার অপব্যবহার: তদন্ত ও গ্রেপ্তার
গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করে নিয়মিতভাবে কাজ করছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার নিয়ম অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কেবল নির্দিষ্ট ঘন্টা ক্যাম্পাসের ভেতরে কাজ করতে পারেন, কিন্তু তারা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, সুপার মার্কেট ও ট্র্যাভেল এজেন্সিতে কাজ করছিলেন।
তদন্তকারীরা জানান, মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং ও অন্যান্য নজরদারির মাধ্যমে দেখা গেছে যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় অন্যত্র অবস্থান করছিলেন। এই তথ্য উদ্ঘাটনের পর, মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রেপ্তার করে এবং দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো পিএইচডি শিক্ষার্থী
ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা এক বাংলাদেশি পিএইচডি শিক্ষার্থীকে নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তার ভিসার শর্ত এবং শিক্ষাগত পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু তিনি উপযুক্ত উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার ভিসা বাতিল করা হয় এবং তাকে ফিরতি ফ্লাইটে উঠিয়ে দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির কড়াকড়ি: সম্প্রসারিত তদন্ত
এই ঘটনার পর, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, অনেক এশীয় শিক্ষার্থীই শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে অবৈধভাবে কাজ করছেন। নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ভার্জিনিয়া, পেনসিলভানিয়া, ম্যাসাচুসেটস, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, মিশিগান ও আরিজোনাসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এমন ঘটনার নজির পাওয়া গেছে।
ICE-র রিপোর্ট অনুযায়ী:
- শুধুমাত্র টেক্সাস থেকেই ৮৪ জন অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তার হয়েছে।
- সারাদেশে এক সপ্তাহে ১,০০০-এর বেশি অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তার হয়েছে।
- ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালার কারণে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি
নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ওজোন পার্ক এবং ব্রুকলিনে অভিবাসন কর্মকর্তাদের কড়া তল্লাশির কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রেস্টুরেন্ট, সুপার মার্কেট ও গ্রোসারি স্টোরগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি কমে গেছে। এমনকি টাইমস স্কয়ার, ডাউনটাউন ও মিডটাউনের ব্যবসা-বাণিজ্যেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অবৈধভাবে কাজ করা অভিবাসীদের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে মজুরির হার কমে গেছে। নিউইয়র্কে ন্যূনতম মজুরি যেখানে ঘণ্টায় ১৭ ডলার, সেখানে অবৈধ অভিবাসীদের দিয়ে কাজ করিয়ে অনেক ব্যবসায়ী ঘণ্টায় মাত্র ৫-৬ ডলার দিচ্ছেন। এর ফলে বৈধ অভিবাসীদের চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
আইন প্রয়োগ ও বহিষ্কারের প্রক্রিয়া
ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারের জন্য আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ৪১,০০০ শয্যাবিশিষ্ট ডিটেনশন সেন্টার পূর্ণ হয়ে যাওয়ায়, অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত নিজ দেশে পাঠানোর জন্য সেনাবাহিনীর বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফেডারেল অনুদান সংকটে বাংলাদেশিসহ লক্ষাধিক অভিবাসী
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিসহ প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। হোম কেয়ার, ফুড স্ট্যাম্প, স্টুডেন্ট লোন এবং বাড়ি ভাড়ার ভর্তুকিসহ কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।
ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর চাক শ্যুমারসহ অনেক রাজনীতিবিদ ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতির বিরোধিতা করেছেন এবং দ্রুত তা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন।
শেষ কথা
যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রমবর্ধমান কড়াকড়ির ফলে স্টুডেন্ট ভিসায় আসা ব্যক্তিদের সতর্ক হতে হবে। বৈধভাবে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বিধিনিষেধ আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। তবে, যারা নিয়ম ভঙ্গ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এটি এখন পরিষ্কার।
Please Share This Post in Your Social Media

যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার তিন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার: উদ্বেগের নতুন মাত্রা

যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার অপব্যবহারের অভিযোগে তিনজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য এক নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। একইসঙ্গে, পিএইচডি করতে আসা আরও একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে জেএফকে (JFK) বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। মার্কিন অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) বিভাগের কড়াকড়ির ফলে ইমিগ্রেশন নীতিতে পরিবর্তন আসছে, যার ফলে বৈধ শিক্ষার্থীরাও সন্দেহের সম্মুখীন হচ্ছেন।
স্টুডেন্ট ভিসার অপব্যবহার: তদন্ত ও গ্রেপ্তার
গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করে নিয়মিতভাবে কাজ করছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার নিয়ম অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কেবল নির্দিষ্ট ঘন্টা ক্যাম্পাসের ভেতরে কাজ করতে পারেন, কিন্তু তারা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, সুপার মার্কেট ও ট্র্যাভেল এজেন্সিতে কাজ করছিলেন।
তদন্তকারীরা জানান, মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং ও অন্যান্য নজরদারির মাধ্যমে দেখা গেছে যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় অন্যত্র অবস্থান করছিলেন। এই তথ্য উদ্ঘাটনের পর, মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রেপ্তার করে এবং দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো পিএইচডি শিক্ষার্থী
ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা এক বাংলাদেশি পিএইচডি শিক্ষার্থীকে নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তার ভিসার শর্ত এবং শিক্ষাগত পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু তিনি উপযুক্ত উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার ভিসা বাতিল করা হয় এবং তাকে ফিরতি ফ্লাইটে উঠিয়ে দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির কড়াকড়ি: সম্প্রসারিত তদন্ত
এই ঘটনার পর, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, অনেক এশীয় শিক্ষার্থীই শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে অবৈধভাবে কাজ করছেন। নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ভার্জিনিয়া, পেনসিলভানিয়া, ম্যাসাচুসেটস, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, মিশিগান ও আরিজোনাসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এমন ঘটনার নজির পাওয়া গেছে।
ICE-র রিপোর্ট অনুযায়ী:
- শুধুমাত্র টেক্সাস থেকেই ৮৪ জন অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তার হয়েছে।
- সারাদেশে এক সপ্তাহে ১,০০০-এর বেশি অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তার হয়েছে।
- ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালার কারণে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশি অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি
নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ওজোন পার্ক এবং ব্রুকলিনে অভিবাসন কর্মকর্তাদের কড়া তল্লাশির কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রেস্টুরেন্ট, সুপার মার্কেট ও গ্রোসারি স্টোরগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি কমে গেছে। এমনকি টাইমস স্কয়ার, ডাউনটাউন ও মিডটাউনের ব্যবসা-বাণিজ্যেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অবৈধভাবে কাজ করা অভিবাসীদের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে মজুরির হার কমে গেছে। নিউইয়র্কে ন্যূনতম মজুরি যেখানে ঘণ্টায় ১৭ ডলার, সেখানে অবৈধ অভিবাসীদের দিয়ে কাজ করিয়ে অনেক ব্যবসায়ী ঘণ্টায় মাত্র ৫-৬ ডলার দিচ্ছেন। এর ফলে বৈধ অভিবাসীদের চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
আইন প্রয়োগ ও বহিষ্কারের প্রক্রিয়া
ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারের জন্য আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ৪১,০০০ শয্যাবিশিষ্ট ডিটেনশন সেন্টার পূর্ণ হয়ে যাওয়ায়, অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত নিজ দেশে পাঠানোর জন্য সেনাবাহিনীর বিমান ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফেডারেল অনুদান সংকটে বাংলাদেশিসহ লক্ষাধিক অভিবাসী
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিসহ প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। হোম কেয়ার, ফুড স্ট্যাম্প, স্টুডেন্ট লোন এবং বাড়ি ভাড়ার ভর্তুকিসহ কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।
ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর চাক শ্যুমারসহ অনেক রাজনীতিবিদ ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতির বিরোধিতা করেছেন এবং দ্রুত তা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন।
শেষ কথা
যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ক্রমবর্ধমান কড়াকড়ির ফলে স্টুডেন্ট ভিসায় আসা ব্যক্তিদের সতর্ক হতে হবে। বৈধভাবে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বিধিনিষেধ আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। তবে, যারা নিয়ম ভঙ্গ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এটি এখন পরিষ্কার।