সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ: যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

- Update Time : ১১:২৪:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৯৮ Time View
রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সারা দেশে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রুটে গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দেশের লাখ লাখ যাত্রী চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
কমলাপুর স্টেশনের পরিস্থিতি
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র ছিল স্পষ্ট। অনেক যাত্রী ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনে বসে ছিলেন, যদিও তাঁদের অনেকেই জানতেন না যে ট্রেন চলাচল বন্ধ। সকাল সোয়া ৯টার দিকে স্টেশনে উপস্থিত বহু যাত্রী ট্রেনের খবর জানতে আসেন। ট্রেন বন্ধ থাকার খবর শুনে অনেকেই হতাশ হয়ে স্টেশন ছেড়ে চলে যান। তবে বয়স্ক যাত্রী এবং নারী যাত্রীদের মধ্যে অনেককে স্টেশনেই অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
একজন যাত্রী, যিনি রাজশাহীতে জরুরি কাজে যাওয়ার জন্য ট্রেন ধরতে এসেছিলেন, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা জানতাম না যে ট্রেন চলবে না। এখানে এসে জানতে পারলাম। এখন অন্য কোনো উপায় খুঁজতে হবে।” এমন পরিস্থিতিতে বাস এবং অন্যান্য বিকল্প পরিবহনে ভিড় বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যান্য স্টেশনেও একই চিত্র
রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্টেশনেও একই রকম চিত্র দেখা গেছে। যাত্রীরা স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও ট্রেন না পেয়ে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দূরপাল্লার যাত্রায় বাস বা অন্য পরিবহন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
রানিং স্টাফদের দাবিদাওয়া
রেলওয়ের রানিং স্টাফরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছেন। তাঁদের মূল দাবি হলো, “মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা প্রদান।” আগে রানিং স্টাফরা দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে অতিরিক্ত অর্থ পেতেন, যা তাঁদের অবসরের পর পেনশন হিসাবেও যোগ হতো। কিন্তু ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এই সুবিধা সীমিত করে। এতে রানিং স্টাফদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়।
গত সপ্তাহে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়, ২৭ জানুয়ারির মধ্যে তাঁদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁরা এই কর্মসূচি কার্যকর করেছেন।
রানিং স্টাফ কারা এবং তাঁদের ভূমিকা
রানিং স্টাফদের মধ্যে গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক এবং টিকিট পরিদর্শকরা (টিটিই) অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে ট্রেনে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশের রেল সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ট্রেনচালক এবং সহকারী চালকরা রেলের কার্যক্রম সচল রাখতে নিরলস পরিশ্রম করে থাকেন।
আগে রানিং অ্যালাউন্সসহ অবসরের সময় তাঁদের পেনশন এবং অন্যান্য সুবিধা হিসাব করা হতো। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। রানিং স্টাফরা এটিকে তাঁদের অধিকার হরণ বলে মনে করছেন।
যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র
রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা বিকল্প পরিবহনের জন্য ছুটছেন। কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া এবং সড়কপথে যানজটের কারণে এই যাত্রা সহজ হচ্ছে না। দূরপাল্লার যাত্রায় বাস সার্ভিসেও টিকিটের সংকট দেখা দিয়েছে।
একজন চাকরিজীবী যাত্রী বলেন, “আমার কর্মস্থলে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি, কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকায় কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না। বাসেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।”
অন্যদিকে, পণ্য পরিবহনেও ট্রেন বন্ধের প্রভাব পড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন যে পণ্য পরিবহনে বিলম্ব তাদের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, আন্দোলনরত কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি রানিং স্টাফদের প্রতি ট্রেন চালু রেখে আলোচনা করার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। রানিং স্টাফদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। সরকারের উচিত দ্রুত এই সংকটের সমাধান করা, যাতে রেল যোগাযোগ পুনরায় সচল হয় এবং যাত্রীদের ভোগান্তি কমে। রেল সেবা চালু রাখা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Please Share This Post in Your Social Media

সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ: যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সারা দেশে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন রুটে গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দেশের লাখ লাখ যাত্রী চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
কমলাপুর স্টেশনের পরিস্থিতি
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র ছিল স্পষ্ট। অনেক যাত্রী ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনে বসে ছিলেন, যদিও তাঁদের অনেকেই জানতেন না যে ট্রেন চলাচল বন্ধ। সকাল সোয়া ৯টার দিকে স্টেশনে উপস্থিত বহু যাত্রী ট্রেনের খবর জানতে আসেন। ট্রেন বন্ধ থাকার খবর শুনে অনেকেই হতাশ হয়ে স্টেশন ছেড়ে চলে যান। তবে বয়স্ক যাত্রী এবং নারী যাত্রীদের মধ্যে অনেককে স্টেশনেই অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
একজন যাত্রী, যিনি রাজশাহীতে জরুরি কাজে যাওয়ার জন্য ট্রেন ধরতে এসেছিলেন, ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা জানতাম না যে ট্রেন চলবে না। এখানে এসে জানতে পারলাম। এখন অন্য কোনো উপায় খুঁজতে হবে।” এমন পরিস্থিতিতে বাস এবং অন্যান্য বিকল্প পরিবহনে ভিড় বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অন্যান্য স্টেশনেও একই চিত্র
রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্টেশনেও একই রকম চিত্র দেখা গেছে। যাত্রীরা স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও ট্রেন না পেয়ে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দূরপাল্লার যাত্রায় বাস বা অন্য পরিবহন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
রানিং স্টাফদের দাবিদাওয়া
রেলওয়ের রানিং স্টাফরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছেন। তাঁদের মূল দাবি হলো, “মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা প্রদান।” আগে রানিং স্টাফরা দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে অতিরিক্ত অর্থ পেতেন, যা তাঁদের অবসরের পর পেনশন হিসাবেও যোগ হতো। কিন্তু ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এই সুবিধা সীমিত করে। এতে রানিং স্টাফদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়।
গত সপ্তাহে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেয়, ২৭ জানুয়ারির মধ্যে তাঁদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে ২৮ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁরা এই কর্মসূচি কার্যকর করেছেন।
রানিং স্টাফ কারা এবং তাঁদের ভূমিকা
রানিং স্টাফদের মধ্যে গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক এবং টিকিট পরিদর্শকরা (টিটিই) অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে ট্রেনে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশের রেল সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ট্রেনচালক এবং সহকারী চালকরা রেলের কার্যক্রম সচল রাখতে নিরলস পরিশ্রম করে থাকেন।
আগে রানিং অ্যালাউন্সসহ অবসরের সময় তাঁদের পেনশন এবং অন্যান্য সুবিধা হিসাব করা হতো। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। রানিং স্টাফরা এটিকে তাঁদের অধিকার হরণ বলে মনে করছেন।
যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র
রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা বিকল্প পরিবহনের জন্য ছুটছেন। কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া এবং সড়কপথে যানজটের কারণে এই যাত্রা সহজ হচ্ছে না। দূরপাল্লার যাত্রায় বাস সার্ভিসেও টিকিটের সংকট দেখা দিয়েছে।
একজন চাকরিজীবী যাত্রী বলেন, “আমার কর্মস্থলে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি, কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকায় কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না। বাসেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।”
অন্যদিকে, পণ্য পরিবহনেও ট্রেন বন্ধের প্রভাব পড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন যে পণ্য পরিবহনে বিলম্ব তাদের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, আন্দোলনরত কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি রানিং স্টাফদের প্রতি ট্রেন চালু রেখে আলোচনা করার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। রানিং স্টাফদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। সরকারের উচিত দ্রুত এই সংকটের সমাধান করা, যাতে রেল যোগাযোগ পুনরায় সচল হয় এবং যাত্রীদের ভোগান্তি কমে। রেল সেবা চালু রাখা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।