সময়: বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

রেলওয়ে রানিং স্টাফদের কর্মসূচি: সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধের আশঙ্কা

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১২:১৮:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১০১ Time View

444d2d61b1a92da105689f0cf2d23d19 679706fbd8594

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এক অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রানিং অ্যালাউন্স ও পেনশন সুবিধা নিয়ে জটিলতার সমাধান না হওয়ায় তারা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। এর ফলে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতি দেশের পরিবহন ও যাত্রী সেবায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

কী ঘটছে?

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি তাদের পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রানিং স্টাফদের দাবি হলো, তাদের মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন সুবিধা ও আনুতোষিক সুবিধা দিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি উপেক্ষিত হওয়ায় তারা এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

পটভূমি:

রানিং স্টাফ বলতে মূলত রেলওয়ের চালক, সহকারী চালক, গার্ড এবং টিকিট চেকারদের বোঝানো হয়। তারা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন এবং অতিরিক্ত কাজের জন্য ‘মাইলেজ সুবিধা’ নামে একটি ভাতা পান। মাইলেজ সুবিধা রেলওয়ে স্টাফদের জন্য আর্থিক প্রণোদনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০২১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় এই সুবিধায় সীমাবদ্ধতা আরোপ করার পর থেকেই স্টাফদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, একজন রানিং স্টাফ তার হেডকোয়ার্টারে ১২ ঘণ্টা এবং আউটার স্টেশনে ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম পান। রেলের স্বার্থে বিশ্রামের সময়ের মধ্যে কাজ করলে তাদের মাইলেজ ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্তে মাইলেজ সুবিধা সীমিত করা হয়েছে এবং পেনশন নির্ধারণে এই ভাতা বাদ দেওয়া হয়েছে।

রানিং স্টাফদের দাবি:

১. মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহাল করতে হবে। 2. পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধার হিসাব মূল বেতনের সঙ্গে মাইলেজ ভাতা যোগ করে নির্ধারণ করতে হবে। 3. ১৬০ বছরের পুরনো রেলওয়ে কোড মেনে চলতে হবে এবং তা হঠাৎ পরিবর্তন করা যাবে না।

রানিং স্টাফরা বলছেন, বর্তমান সিদ্ধান্ত তাদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং কাজের প্রতি আগ্রহ হ্রাস করছে। তারা দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং এর আগে বেশ কয়েকবার কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন। তবে এবার তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অবস্থান:

অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি চিঠিতে জানিয়েছে যে, মাইলেজ ভাতা রেলওয়ে কোড অনুযায়ী চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, তবে তা মাসিক মূল বেতনের চেয়ে বেশি হতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত রানিং স্টাফদের মধ্যে অসন্তোষের আগুন আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তারা বলছেন, তাদের অতিরিক্ত কাজের ন্যায্য মূল্যায়ন হচ্ছে না।

আন্দোলনের ইতিহাস:

রানিং স্টাফরা মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে কর্মবিরতির কারণে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছিল। এরপর একাধিকবার রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা রানিং স্টাফদের সঙ্গে আলোচনা করলেও কোনো সমাধান হয়নি।

সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা:

  1. ২০২৩ সালের ১১ জুন রেলওয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের নির্দেশ দেন।
  2. কিন্তু, অর্থ মন্ত্রণালয় ১৮ জুন এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে চিঠি দেয়।
  3. সর্বশেষ, ২৩ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় জানায় যে, তাদের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকবে।

রানিং স্টাফদের বক্তব্য:

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেছেন, “আমরা আর সময় দিতে পারব না। ১৬০ বছরের পুরনো নিয়ম হঠাৎ করে পরিবর্তন করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের প্রায় ২ হাজার ৩৬ জন স্টাফ থাকার কথা থাকলেও এখন আছি মাত্র ১ হাজার ৩৬ জন। অতিরিক্ত কাজের জন্য আমরা যে মাইলেজ ভাতা পাই, সেটি আমাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল।”

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া:

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেছেন, “আমাদের আলোচনা চলছে। রানিং স্টাফরা যেন আন্দোলনে না যান, আমরা সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। তবে তাদের দাবি পূরণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

পরবর্তী ধাপ:

এই পরিস্থিতি নিয়ে সমাধান না হলে, সোমবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে যাত্রীদের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি দেখা দেবে। দেশের অর্থনীতি ও পরিবহন খাতেও বড় প্রভাব পড়বে।

আমরা আশা করছি, রানিং স্টাফদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট দ্রুত সমাধান হবে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

রেলওয়ে রানিং স্টাফদের কর্মসূচি: সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধের আশঙ্কা

Update Time : ১২:১৮:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এক অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রানিং অ্যালাউন্স ও পেনশন সুবিধা নিয়ে জটিলতার সমাধান না হওয়ায় তারা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। এর ফলে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতি দেশের পরিবহন ও যাত্রী সেবায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

কী ঘটছে?

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি তাদের পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রানিং স্টাফদের দাবি হলো, তাদের মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন সুবিধা ও আনুতোষিক সুবিধা দিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি উপেক্ষিত হওয়ায় তারা এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

পটভূমি:

রানিং স্টাফ বলতে মূলত রেলওয়ের চালক, সহকারী চালক, গার্ড এবং টিকিট চেকারদের বোঝানো হয়। তারা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন এবং অতিরিক্ত কাজের জন্য ‘মাইলেজ সুবিধা’ নামে একটি ভাতা পান। মাইলেজ সুবিধা রেলওয়ে স্টাফদের জন্য আর্থিক প্রণোদনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০২১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় এই সুবিধায় সীমাবদ্ধতা আরোপ করার পর থেকেই স্টাফদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, একজন রানিং স্টাফ তার হেডকোয়ার্টারে ১২ ঘণ্টা এবং আউটার স্টেশনে ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম পান। রেলের স্বার্থে বিশ্রামের সময়ের মধ্যে কাজ করলে তাদের মাইলেজ ভাতা দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্তে মাইলেজ সুবিধা সীমিত করা হয়েছে এবং পেনশন নির্ধারণে এই ভাতা বাদ দেওয়া হয়েছে।

রানিং স্টাফদের দাবি:

১. মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহাল করতে হবে। 2. পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধার হিসাব মূল বেতনের সঙ্গে মাইলেজ ভাতা যোগ করে নির্ধারণ করতে হবে। 3. ১৬০ বছরের পুরনো রেলওয়ে কোড মেনে চলতে হবে এবং তা হঠাৎ পরিবর্তন করা যাবে না।

রানিং স্টাফরা বলছেন, বর্তমান সিদ্ধান্ত তাদের আর্থিক নিরাপত্তা এবং কাজের প্রতি আগ্রহ হ্রাস করছে। তারা দীর্ঘ সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং এর আগে বেশ কয়েকবার কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন। তবে এবার তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অবস্থান:

অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি চিঠিতে জানিয়েছে যে, মাইলেজ ভাতা রেলওয়ে কোড অনুযায়ী চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, তবে তা মাসিক মূল বেতনের চেয়ে বেশি হতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত রানিং স্টাফদের মধ্যে অসন্তোষের আগুন আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তারা বলছেন, তাদের অতিরিক্ত কাজের ন্যায্য মূল্যায়ন হচ্ছে না।

আন্দোলনের ইতিহাস:

রানিং স্টাফরা মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে কর্মবিরতির কারণে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখন অর্থ মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছিল। এরপর একাধিকবার রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা রানিং স্টাফদের সঙ্গে আলোচনা করলেও কোনো সমাধান হয়নি।

সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা:

  1. ২০২৩ সালের ১১ জুন রেলওয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের নির্দেশ দেন।
  2. কিন্তু, অর্থ মন্ত্রণালয় ১৮ জুন এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে চিঠি দেয়।
  3. সর্বশেষ, ২৩ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় জানায় যে, তাদের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকবে।

রানিং স্টাফদের বক্তব্য:

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেছেন, “আমরা আর সময় দিতে পারব না। ১৬০ বছরের পুরনো নিয়ম হঠাৎ করে পরিবর্তন করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের প্রায় ২ হাজার ৩৬ জন স্টাফ থাকার কথা থাকলেও এখন আছি মাত্র ১ হাজার ৩৬ জন। অতিরিক্ত কাজের জন্য আমরা যে মাইলেজ ভাতা পাই, সেটি আমাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল।”

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া:

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেছেন, “আমাদের আলোচনা চলছে। রানিং স্টাফরা যেন আন্দোলনে না যান, আমরা সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। তবে তাদের দাবি পূরণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

পরবর্তী ধাপ:

এই পরিস্থিতি নিয়ে সমাধান না হলে, সোমবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে যাত্রীদের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি দেখা দেবে। দেশের অর্থনীতি ও পরিবহন খাতেও বড় প্রভাব পড়বে।

আমরা আশা করছি, রানিং স্টাফদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট দ্রুত সমাধান হবে।

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share