সৌদি আরবের এক সিদ্ধান্তেই বন্ধ হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: ট্রাম্প

- Update Time : ১২:৪৬:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৭৯ Time View
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এক নিমেষে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যদি সৌদি আরব একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়। তাঁর মতে, সৌদি আরব এবং অন্যান্য তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো যদি তেলের দাম কমিয়ে দেয়, তবে রাশিয়া যুদ্ধ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে যুদ্ধ থেমে যাবে। এই মন্তব্যগুলি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (World Economic Forum) বার্ষিক সভায় সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরে ভার্চুয়ালি বক্তব্যের সময় করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের সমাধান: তেলের দাম কমানো
ট্রাম্প তার বক্তব্যে বলেন, “যদি সৌদি আরব এবং অন্যান্য তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো তেলের দাম কমিয়ে দেয়, তাহলে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে।”
তিনি তেলের দাম কমানোর ব্যাপারে সৌদি আরব এবং অন্যান্য তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর প্রতি সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প বলেন, “এটা এতদিন কেন হয়নি, সেটা আমি অবাক হয়ে দেখছি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অনেক আগেই সৌদি আরব এবং অন্যান্য দেশগুলোর উচিত ছিল এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।”
ওপেক এবং সৌদি আরবকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্পের বক্তব্য
ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি সৌদি আরব এবং ওপেকের অন্যান্য সদস্যদের বলব, তেলের দাম কমান। আপনাদের এটা
তিনি তেলের দাম কমানোর মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করার সম্ভাবনা নিয়ে গভীর আস্থা প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, “তেলের দাম কমলে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ সঙ্গে সঙ্গে থেমে যাবে।”
তেল এবং যুদ্ধের সম্পর্ক
ট্রাম্পের মতে, রাশিয়া তার সামরিক অভিযানের জন্য যে অর্থ উপার্জন করে, তা মূলত তেল রপ্তানি থেকে আসে। রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশগুলির মধ্যে একটি, এবং তেলের উচ্চমূল্য রাশিয়ার জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক সুবিধা এনে দেয়।
এখন তেলের মূল্য অনেক বেশি, যার কারণে যুদ্ধ চালানো সম্ভব হচ্ছে। যদি তেলের দাম কমানো হয়, তবে রাশিয়ার অর্থনৈতিক আয় কমে যাবে, এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের সক্ষমতা হ্রাস পাবে।
সৌদি আরবের ভূমিকা এবং বর্তমান অবস্থান
সৌদি আরব, যা ওপেকের একটি প্রধান সদস্য, বিশ্বের তেল বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সৌদি আরব অনেক সময় তেল বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে বা সংশোধন করতে ব্যবহার করেছে, তবে তারা এখনও ট্রাম্পের প্রস্তাবনার প্রতি কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরবের নীতি অনেক সময় তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং কৌশলগত সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল। তেলের দাম কমানো সৌদি আরবের জন্য আর্থিক ক্ষতি হতে পারে, কারণ তাদের প্রধান আয়ের উৎস তেল রপ্তানি।
তেলের দাম কমানোর বাইরে যুদ্ধের আরো জটিলতা
যদিও ট্রাম্পের প্রস্তাবটি সরল এবং সোজা মনে হতে পারে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট একমাত্র তেলের দাম কমানোর মাধ্যমে সমাধান হবে না। এই যুদ্ধের পেছনে অনেক গভীর রাজনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক কারণে রয়েছে।
বিশ্বের তেল বাজার শুধুমাত্র একটি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে না, এবং তেলের দাম কমানোর পদক্ষেপের পরিণামেও কিছু অপ্রত্যাশিত পরিণতি ঘটতে পারে, যেমন অন্যান্য তেল নির্ভরশীল দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যুদ্ধ এবং বিশ্বব্যাপী প্রভাব
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে “বিশেষ সামরিক অভিযান” শুরু করার ঘোষণা দেন। এরপর থেকে প্রায় তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ পৃথিবীজুড়ে প্রাণহানির পাশাপাশি বিশাল অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া তেলের উচ্চমূল্য ব্যবহার করে সামরিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়ানোর ফলে শুধুমাত্র রাশিয়ার নয়, অন্যান্য দেশগুলোরও অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। ট্রাম্পের প্রস্তাব, অর্থাৎ তেলের দাম কমানোর মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর ধারণাটি শিরোনাম তৈরি করেছে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য একটি নতুন দৃষ্টিকোণ তুলে ধরে, যেখানে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোকে যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে এই প্রস্তাবের বাস্তবতা এবং তেলের দাম কমানোর ফলে বিশ্ববাজারে যে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আলোচনা এখনও চলতে থাকবে।
বিশ্ববাসী এখনো একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে এই যুদ্ধের অবসান চাইছে। তবে ট্রাম্পের পরামর্শ যে একটি আংশিক সমাধান হতে পারে, তা প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্ব শিগগিরই জানবে সৌদি আরব এবং ওপেক কী পদক্ষেপ নেয়, এবং কিভাবে তেলের বাজার যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
Please Share This Post in Your Social Media

সৌদি আরবের এক সিদ্ধান্তেই বন্ধ হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এক নিমেষে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যদি সৌদি আরব একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়। তাঁর মতে, সৌদি আরব এবং অন্যান্য তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো যদি তেলের দাম কমিয়ে দেয়, তবে রাশিয়া যুদ্ধ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে যুদ্ধ থেমে যাবে। এই মন্তব্যগুলি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (World Economic Forum) বার্ষিক সভায় সুইজারল্যান্ডের দাভোস শহরে ভার্চুয়ালি বক্তব্যের সময় করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের সমাধান: তেলের দাম কমানো
ট্রাম্প তার বক্তব্যে বলেন, “যদি সৌদি আরব এবং অন্যান্য তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো তেলের দাম কমিয়ে দেয়, তাহলে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে।”
তিনি তেলের দাম কমানোর ব্যাপারে সৌদি আরব এবং অন্যান্য তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর প্রতি সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্প বলেন, “এটা এতদিন কেন হয়নি, সেটা আমি অবাক হয়ে দেখছি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অনেক আগেই সৌদি আরব এবং অন্যান্য দেশগুলোর উচিত ছিল এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।”
ওপেক এবং সৌদি আরবকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্পের বক্তব্য
ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি সৌদি আরব এবং ওপেকের অন্যান্য সদস্যদের বলব, তেলের দাম কমান। আপনাদের এটা করতেই
তিনি তেলের দাম কমানোর মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করার সম্ভাবনা নিয়ে গভীর আস্থা প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, “তেলের দাম কমলে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ সঙ্গে সঙ্গে থেমে যাবে।”
তেল এবং যুদ্ধের সম্পর্ক
ট্রাম্পের মতে, রাশিয়া তার সামরিক অভিযানের জন্য যে অর্থ উপার্জন করে, তা মূলত তেল রপ্তানি থেকে আসে। রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশগুলির মধ্যে একটি, এবং তেলের উচ্চমূল্য রাশিয়ার জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক সুবিধা এনে দেয়।
এখন তেলের মূল্য অনেক বেশি, যার কারণে যুদ্ধ চালানো সম্ভব হচ্ছে। যদি তেলের দাম কমানো হয়, তবে রাশিয়ার অর্থনৈতিক আয় কমে যাবে, এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের সক্ষমতা হ্রাস পাবে।
সৌদি আরবের ভূমিকা এবং বর্তমান অবস্থান
সৌদি আরব, যা ওপেকের একটি প্রধান সদস্য, বিশ্বের তেল বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সৌদি আরব অনেক সময় তেল বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে বা সংশোধন করতে ব্যবহার করেছে, তবে তারা এখনও ট্রাম্পের প্রস্তাবনার প্রতি কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরবের নীতি অনেক সময় তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং কৌশলগত সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল। তেলের দাম কমানো সৌদি আরবের জন্য আর্থিক ক্ষতি হতে পারে, কারণ তাদের প্রধান আয়ের উৎস তেল রপ্তানি।
তেলের দাম কমানোর বাইরে যুদ্ধের আরো জটিলতা
যদিও ট্রাম্পের প্রস্তাবটি সরল এবং সোজা মনে হতে পারে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সংকট একমাত্র তেলের দাম কমানোর মাধ্যমে সমাধান হবে না। এই যুদ্ধের পেছনে অনেক গভীর রাজনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক কারণে রয়েছে।
বিশ্বের তেল বাজার শুধুমাত্র একটি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে না, এবং তেলের দাম কমানোর পদক্ষেপের পরিণামেও কিছু অপ্রত্যাশিত পরিণতি ঘটতে পারে, যেমন অন্যান্য তেল নির্ভরশীল দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যুদ্ধ এবং বিশ্বব্যাপী প্রভাব
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে “বিশেষ সামরিক অভিযান” শুরু করার ঘোষণা দেন। এরপর থেকে প্রায় তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ পৃথিবীজুড়ে প্রাণহানির পাশাপাশি বিশাল অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া তেলের উচ্চমূল্য ব্যবহার করে সামরিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়ানোর ফলে শুধুমাত্র রাশিয়ার নয়, অন্যান্য দেশগুলোরও অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। ট্রাম্পের প্রস্তাব, অর্থাৎ তেলের দাম কমানোর মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর ধারণাটি শিরোনাম তৈরি করেছে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য একটি নতুন দৃষ্টিকোণ তুলে ধরে, যেখানে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোকে যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে এই প্রস্তাবের বাস্তবতা এবং তেলের দাম কমানোর ফলে বিশ্ববাজারে যে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আলোচনা এখনও চলতে থাকবে।
বিশ্ববাসী এখনো একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে এই যুদ্ধের অবসান চাইছে। তবে ট্রাম্পের পরামর্শ যে একটি আংশিক সমাধান হতে পারে, তা প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্ব শিগগিরই জানবে সৌদি আরব এবং ওপেক কী পদক্ষেপ নেয়, এবং কিভাবে তেলের বাজার যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।