বাংলাদেশ ব্যাংক পাচার হওয়া ১৭ বিলিয়ন ডলারের সন্ধানে নিয়োগ দিয়েছে বিদেশি নিরীক্ষক

- Update Time : ১০:২৮:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
- / ১৬৮ Time View
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশ’s ব্যাংকিং খাত থেকে পাচার হওয়া বিপুল অর্থের সন্ধানে আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই বিশ্বের খ্যাতনামা তিনটি অডিট সংস্থা—ইওয়াই (EY), ডেলয়েট (Deloitte), এবং কেপিএমজি (KPMG)—কে এই তদন্তে নিয়োগ দিয়েছে। মোট ১৭ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার) পাচারের এই ঘটনা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
অর্থপাচারের অভিযোগ এবং তদন্তের সূচনা
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, দেশের অর্থনৈতিক খাত থেকে পাচার হওয়া এই বিপুল অর্থের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসূত্র রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এই পাচারের ঘটনায় জড়িত।
গভর্নরের ভাষ্যমতে, এই অর্থপাচারের ঘটনা তদন্ত ও পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর নেতৃত্বে ১১টি যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিগুলো পাচার হওয়া অর্থের উৎস চিহ্নিত করা এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক অডিট সংস্থার ভূমিকা
তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিশ্বখ্যাত অডিট সংস্থাগুলোর নিয়োগ একটি বড় পদক্ষেপ। ইওয়াই, ডেলয়েট এবং কেপিএমজি—এ তিনটি প্রতিষ্ঠান তাদের নিরপেক্ষ ও পেশাদার দক্ষতার মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের উৎস চিহ্নিত এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র বিশ্লেষণে কাজ করবে। এ ধরনের সংস্থাগুলো অর্থপাচারের ক্ষেত্রে জটিল আর্থিক কার্যক্রমের বিশদ তথ্য বিশ্লেষণে পারদর্শী।
রয়টার্স সূত্রে জানা যায়, ইওয়াই এবং ডেলয়েটের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কেপিএমজির সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কাছ থেকে সাড়া মেলেনি।
গভর্নরের বক্তব্য
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের সময় গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণ করা আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার নয়, বরং এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা।” তিনি আরও জানান, দেশের শীর্ষ ১০টি কোম্পানি এবং শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে এই তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে।
পাচার হওয়া অর্থের প্রভাব
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ দেশের মোট জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশের সমান। এই অর্থ দেশের উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, এবং জনসাধারণের কল্যাণমূলক কার্যক্রমে ব্যবহার করা যেত। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এত বিপুল অর্থপাচার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সরকারি পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
বাংলাদেশ সরকার অর্থপাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিএফআইইউ’র নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটিগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সন্দেহভাজন কোম্পানি ও ব্যক্তিদের আর্থিক লেনদেন পর্যবেক্ষণ এবং তাদের সম্পদের উৎস যাচাই করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অডিট সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তদন্ত পরিচালনার ফলে সরকারের অগ্রগতির বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে এসেছে। এটি দেশের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সাহায্য করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতিবিদ এবং আইনের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের অর্থপাচার শুধু দেশের অর্থনীতিতে নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতাতেও প্রভাব ফেলতে পারে। তারা এই তদন্তের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিচালনা এবং দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অডিট সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততা বিষয়টি আরও স্বচ্ছ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ অর্থনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের দৃঢ়তার প্রমাণ। পাচার হওয়া অর্থের পুনরুদ্ধার শুধু দেশের আর্থিক অবস্থাকে মজবুত করবে না, বরং এটি ভবিষ্যতে আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তবে এই প্রচেষ্টা সফল করতে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
Please Share This Post in Your Social Media

বাংলাদেশ ব্যাংক পাচার হওয়া ১৭ বিলিয়ন ডলারের সন্ধানে নিয়োগ দিয়েছে বিদেশি নিরীক্ষক

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশ’s ব্যাংকিং খাত থেকে পাচার হওয়া বিপুল অর্থের সন্ধানে আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই বিশ্বের খ্যাতনামা তিনটি অডিট সংস্থা—ইওয়াই (EY), ডেলয়েট (Deloitte), এবং কেপিএমজি (KPMG)—কে এই তদন্তে নিয়োগ দিয়েছে। মোট ১৭ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার) পাচারের এই ঘটনা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
অর্থপাচারের অভিযোগ এবং তদন্তের সূচনা
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, দেশের অর্থনৈতিক খাত থেকে পাচার হওয়া এই বিপুল অর্থের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগসূত্র রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এই পাচারের ঘটনায় জড়িত।
গভর্নরের ভাষ্যমতে, এই অর্থপাচারের ঘটনা তদন্ত ও পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর নেতৃত্বে ১১টি যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিগুলো পাচার হওয়া অর্থের উৎস চিহ্নিত করা এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক অডিট সংস্থার ভূমিকা
তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিশ্বখ্যাত অডিট সংস্থাগুলোর নিয়োগ একটি বড় পদক্ষেপ। ইওয়াই, ডেলয়েট এবং কেপিএমজি—এ তিনটি প্রতিষ্ঠান তাদের নিরপেক্ষ ও পেশাদার দক্ষতার মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের উৎস চিহ্নিত এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র বিশ্লেষণে কাজ করবে। এ ধরনের সংস্থাগুলো অর্থপাচারের ক্ষেত্রে জটিল আর্থিক কার্যক্রমের বিশদ তথ্য বিশ্লেষণে পারদর্শী।
রয়টার্স সূত্রে জানা যায়, ইওয়াই এবং ডেলয়েটের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কেপিএমজির সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কাছ থেকে সাড়া মেলেনি।
গভর্নরের বক্তব্য
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের সময় গভর্নরের দায়িত্ব গ্রহণ করা আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার নয়, বরং এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা।” তিনি আরও জানান, দেশের শীর্ষ ১০টি কোম্পানি এবং শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে এই তদন্ত পরিচালিত হচ্ছে।
পাচার হওয়া অর্থের প্রভাব
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ দেশের মোট জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশের সমান। এই অর্থ দেশের উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, এবং জনসাধারণের কল্যাণমূলক কার্যক্রমে ব্যবহার করা যেত। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এত বিপুল অর্থপাচার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সরকারি পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
বাংলাদেশ সরকার অর্থপাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিএফআইইউ’র নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটিগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সন্দেহভাজন কোম্পানি ও ব্যক্তিদের আর্থিক লেনদেন পর্যবেক্ষণ এবং তাদের সম্পদের উৎস যাচাই করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অডিট সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তদন্ত পরিচালনার ফলে সরকারের অগ্রগতির বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে এসেছে। এটি দেশের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সাহায্য করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতিবিদ এবং আইনের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের অর্থপাচার শুধু দেশের অর্থনীতিতে নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতাতেও প্রভাব ফেলতে পারে। তারা এই তদন্তের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিচালনা এবং দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অডিট সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততা বিষয়টি আরও স্বচ্ছ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ অর্থনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের দৃঢ়তার প্রমাণ। পাচার হওয়া অর্থের পুনরুদ্ধার শুধু দেশের আর্থিক অবস্থাকে মজবুত করবে না, বরং এটি ভবিষ্যতে আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তবে এই প্রচেষ্টা সফল করতে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।