সময়: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

পৃথিবীর গভীরে হিমালয়ের চেয়ে শত গুণ বড় দুটি পর্বতের সন্ধান

ডিজিটাল ডেস্ক
  • Update Time : ১২:১০:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১৮১ Time View

prothomalo bangla 2024 04 6ebb434e f583 4df7 bf91 5f67e42595f3 Earth Spin Reuters

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট, যা প্রায় ৮.৮ কিলোমিটার উঁচু। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া তথ্য আমাদের চমকে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর গভীরে এমন দুটি পর্বত রয়েছে, যেগুলোর উচ্চতা মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ বেশি। এসব পর্বত পৃথিবীর কেন্দ্র এবং ম্যান্টেলের সংযোগস্থলে লুকিয়ে আছে।

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার জার্নালে, যা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন নিয়ে আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে। এই পর্বতগুলোর সন্ধান ভূপৃষ্ঠের নিচে চলমান টেকটোনিক প্রক্রিয়া ও ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে।

পর্বতগুলোর অবস্থান এবং আকৃতি

  1. অবস্থান:
    গবেষকরা জানিয়েছেন, দুটি পর্বত আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরের ঠিক নিচে অবস্থিত। এই পর্বতগুলো পৃথিবীর ম্যান্টেল এবং কেন্দ্রের (কোর) সীমানায় অবস্থান করছে।
  2. উচ্চতা:
    পর্বতগুলোর উচ্চতা প্রায় এক হাজার কিলোমিটার। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের (৮.৮ কিলোমিটার) তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ বেশি।
  3. আকৃতি এবং কাঠামো:
    এই পর্বতগুলো সুনির্দিষ্টভাবে গঠিত এবং আশপাশের অঞ্চলের তুলনায় তুলনামূলক উঁচু। তবে এগুলোর আকৃতি আমাদের পরিচিত পর্বতগুলোর মতো নয়, বরং এটি ভূমিকম্প থেকে প্রাপ্ত শকওয়েভের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যা

গবেষণার নেতৃত্বে থাকা বিজ্ঞানী আরওয়েন ডিউস বলেছেন, এই পর্বতগুলো কীভাবে গঠিত হয়েছে তা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে তারা বেশ কিছু ধারণা এবং পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন:

  1. টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ:
    পর্বতগুলো এমন একটি অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে দুটি টেকটোনিক প্লেট একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। একটি প্লেট অন্যটির নিচে সরে যাওয়ার ফলে এগুলোর সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
  2. তাপমাত্রার ভিন্নতা:
    ভূমিকম্পের শকওয়েভ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, এই পর্বতগুলো আশপাশের অঞ্চলের তুলনায় বেশি গরম। এটি দেখায় যে, পৃথিবীর গভীরতর স্তর এখনো উত্তপ্ত এবং শক্তি প্রবাহিত করছে।
  3. বয়স:
    গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, পর্বতগুলোর বয়স প্রায় ৫০ কোটি বছর। এটি পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কালকে প্রতিনিধিত্ব করে।

গবেষণার গুরুত্ব প্রভাব

এই আবিষ্কার পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন ও কার্যপ্রক্রিয়া নিয়ে নতুন তথ্য দিয়েছে, যা ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

. ভৌগোলিক গঠন বিশ্লেষণ

এই পর্বতগুলো আমাদের পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন, বিশেষ করে ম্যান্টেল এবং কেন্দ্রের সীমারেখা নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করছে।

. ভূমিকম্পের কারণ অনুসন্ধান

ভূমিকম্পের শকওয়েভ ব্যবহার করে এমন কাঠামো আবিষ্কার করা ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা দেবে।

. টেকটোনিক প্রক্রিয়ার বিশদ বিশ্লেষণ

টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে কীভাবে নতুন ভূতাত্ত্বিক কাঠামো গড়ে ওঠে, তা বোঝার জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

. পৃথিবীর তাপগতিশীলতা

পর্বতগুলোর আশপাশে তাপমাত্রার পার্থক্য গবেষকদের দেখাচ্ছে যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তর এখনো উত্তপ্ত। এই তথ্য আমাদের গ্রহের তাপগতিশীল কার্যপ্রণালী সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দিতে পারে।

পরবর্তী গবেষণার দিকনির্দেশনা

গবেষকরা মনে করছেন, পৃথিবীর গভীরে এমন আরও কাঠামো লুকিয়ে থাকতে পারে, যা এখনো অজানা। নতুন আবিষ্কারগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তরের আরও নিখুঁত মানচিত্র তৈরি করতে সাহায্য করবে।

  • শকওয়েভের ব্যবহার:
    ভূমিকম্পের শকওয়েভের মাধ্যমে নতুন কাঠামো চিহ্নিত করার প্রযুক্তি উন্নত করা হবে।
  • তাপপ্রবাহের পর্যবেক্ষণ:
    পৃথিবীর গভীরতর স্তরের তাপপ্রবাহ এবং এর শক্তি নির্ণয়ের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
  • গভীর সমুদ্র গবেষণা:
    আফ্রিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে এই পর্বতগুলো কীভাবে প্রভাব ফেলছে, তা গভীর সমুদ্র গবেষণার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

পৃথিবীর গভীরে এই বিশাল পর্বতের সন্ধান আমাদের গ্রহ সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করছে। এটি দেখাচ্ছে যে, আমাদের গ্রহের ভৌগোলিক এবং ভূতাত্ত্বিক গঠন কেবল পৃষ্ঠতলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর গভীরেও রয়েছে আশ্চর্যজনক কাঠামো, যা ভবিষ্যতে গবেষণার নতুন দিক উন্মোচন করবে।

এ আবিষ্কার আমাদের শিখিয়েছে, আমরা এখনো পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তরের অনেক কিছুই জানি না। নতুন প্রযুক্তি এবং গবেষণার মাধ্যমে আমরা হয়তো আরও বিস্ময়কর তথ্য জানতে পারব, যা পৃথিবীর গঠন ও কার্যপ্রক্রিয়ার জটিল রহস্য উন্মোচনে সহায়ক হবে।

সূত্র: এনডিটিভি, নেচার জার্নাল

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share

Please Share This Post in Your Social Media

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Newest
Oldest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

পৃথিবীর গভীরে হিমালয়ের চেয়ে শত গুণ বড় দুটি পর্বতের সন্ধান

Update Time : ১২:১০:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
শেয়ার করুনঃ
Pin Share

 

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট, যা প্রায় ৮.৮ কিলোমিটার উঁচু। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া তথ্য আমাদের চমকে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর গভীরে এমন দুটি পর্বত রয়েছে, যেগুলোর উচ্চতা মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ বেশি। এসব পর্বত পৃথিবীর কেন্দ্র এবং ম্যান্টেলের সংযোগস্থলে লুকিয়ে আছে।

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার জার্নালে, যা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন নিয়ে আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে। এই পর্বতগুলোর সন্ধান ভূপৃষ্ঠের নিচে চলমান টেকটোনিক প্রক্রিয়া ও ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে।

পর্বতগুলোর অবস্থান এবং আকৃতি

  1. অবস্থান:
    গবেষকরা জানিয়েছেন, দুটি পর্বত আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরের ঠিক নিচে অবস্থিত। এই পর্বতগুলো পৃথিবীর ম্যান্টেল এবং কেন্দ্রের (কোর) সীমানায় অবস্থান করছে।
  2. উচ্চতা:
    পর্বতগুলোর উচ্চতা প্রায় এক হাজার কিলোমিটার। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের (৮.৮ কিলোমিটার) তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ বেশি।
  3. আকৃতি এবং কাঠামো:
    এই পর্বতগুলো সুনির্দিষ্টভাবে গঠিত এবং আশপাশের অঞ্চলের তুলনায় তুলনামূলক উঁচু। তবে এগুলোর আকৃতি আমাদের পরিচিত পর্বতগুলোর মতো নয়, বরং এটি ভূমিকম্প থেকে প্রাপ্ত শকওয়েভের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ

ব্যাখ্যা

গবেষণার নেতৃত্বে থাকা বিজ্ঞানী আরওয়েন ডিউস বলেছেন, এই পর্বতগুলো কীভাবে গঠিত হয়েছে তা পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে তারা বেশ কিছু ধারণা এবং পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন:

  1. টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ:
    পর্বতগুলো এমন একটি অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে দুটি টেকটোনিক প্লেট একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। একটি প্লেট অন্যটির নিচে সরে যাওয়ার ফলে এগুলোর সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
  2. তাপমাত্রার ভিন্নতা:
    ভূমিকম্পের শকওয়েভ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, এই পর্বতগুলো আশপাশের অঞ্চলের তুলনায় বেশি গরম। এটি দেখায় যে, পৃথিবীর গভীরতর স্তর এখনো উত্তপ্ত এবং শক্তি প্রবাহিত করছে।
  3. বয়স:
    গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, পর্বতগুলোর বয়স প্রায় ৫০ কোটি বছর। এটি পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কালকে প্রতিনিধিত্ব করে।

গবেষণার গুরুত্ব প্রভাব

এই আবিষ্কার পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন ও কার্যপ্রক্রিয়া নিয়ে নতুন তথ্য দিয়েছে, যা ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

. ভৌগোলিক গঠন বিশ্লেষণ

এই পর্বতগুলো আমাদের পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন, বিশেষ করে ম্যান্টেল এবং কেন্দ্রের সীমারেখা নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করছে।

. ভূমিকম্পের কারণ অনুসন্ধান

ভূমিকম্পের শকওয়েভ ব্যবহার করে এমন কাঠামো আবিষ্কার করা ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা দেবে।

. টেকটোনিক প্রক্রিয়ার বিশদ বিশ্লেষণ

টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে কীভাবে নতুন ভূতাত্ত্বিক কাঠামো গড়ে ওঠে, তা বোঝার জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।

. পৃথিবীর তাপগতিশীলতা

পর্বতগুলোর আশপাশে তাপমাত্রার পার্থক্য গবেষকদের দেখাচ্ছে যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তর এখনো উত্তপ্ত। এই তথ্য আমাদের গ্রহের তাপগতিশীল কার্যপ্রণালী সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দিতে পারে।

পরবর্তী গবেষণার দিকনির্দেশনা

গবেষকরা মনে করছেন, পৃথিবীর গভীরে এমন আরও কাঠামো লুকিয়ে থাকতে পারে, যা এখনো অজানা। নতুন আবিষ্কারগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তরের আরও নিখুঁত মানচিত্র তৈরি করতে সাহায্য করবে।

  • শকওয়েভের ব্যবহার:
    ভূমিকম্পের শকওয়েভের মাধ্যমে নতুন কাঠামো চিহ্নিত করার প্রযুক্তি উন্নত করা হবে।
  • তাপপ্রবাহের পর্যবেক্ষণ:
    পৃথিবীর গভীরতর স্তরের তাপপ্রবাহ এবং এর শক্তি নির্ণয়ের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
  • গভীর সমুদ্র গবেষণা:
    আফ্রিকা এবং প্রশান্ত মহাসাগরের নিচে এই পর্বতগুলো কীভাবে প্রভাব ফেলছে, তা গভীর সমুদ্র গবেষণার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

পৃথিবীর গভীরে এই বিশাল পর্বতের সন্ধান আমাদের গ্রহ সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করছে। এটি দেখাচ্ছে যে, আমাদের গ্রহের ভৌগোলিক এবং ভূতাত্ত্বিক গঠন কেবল পৃষ্ঠতলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর গভীরেও রয়েছে আশ্চর্যজনক কাঠামো, যা ভবিষ্যতে গবেষণার নতুন দিক উন্মোচন করবে।

এ আবিষ্কার আমাদের শিখিয়েছে, আমরা এখনো পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তরের অনেক কিছুই জানি না। নতুন প্রযুক্তি এবং গবেষণার মাধ্যমে আমরা হয়তো আরও বিস্ময়কর তথ্য জানতে পারব, যা পৃথিবীর গঠন ও কার্যপ্রক্রিয়ার জটিল রহস্য উন্মোচনে সহায়ক হবে।

সূত্র: এনডিটিভি, নেচার জার্নাল

 

শেয়ার করুনঃ
Pin Share