গুগলকে ভেঙে ফেলার পরিকল্পনায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ: লক্ষ্য ক্রোম এবং অ্যান্ড্রয়েড

- Update Time : ১১:৩৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
- / ২২৬ Time View

মার্কিন সরকার গুগলকে তার কিছু প্রধান ব্যবসা, বিশেষত ক্রোম ব্রাউজার এবং অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা করছে। তারা আদালতে এমন একটি প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছে, যা গুগলের অনলাইন সার্চ বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। কর্মকর্তারা বলেছেন, এই পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্দেশ্য হলো গুগলের সার্চ ব্যবসায় প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনা এবং এর একচেটিয়াতন্ত্রকে ভেঙে ফেলা।
সম্প্রতি এক আলোচিত মামলায় বিচারক ঘোষণা করেছেন যে গুগল অবৈধ একচেটিয়াতন্ত্র তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইনে যে তথ্য অনুসন্ধানের কার্যক্রম হয়, তার প্রায় ৯০ শতাংশ গুগলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিচার বিভাগ গুগলের সার্চ ইঞ্জিন এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ব্যবসাগুলির ওপর যে সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছে, তার ফলে এই বাজারে বড় পরিবর্তন আসতে পারে এবং গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা বাজারে তাদের অংশ বাড়ানোর সুযোগ পাবে।
গুগল তার সার্চ ইঞ্জিনকে বিভিন্ন স্মার্টফোন এবং ব্রাউজারের ডিফল্ট হিসেবে রেখে ব্যবহারকারীদের উপর একধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। অ্যাপলসহ অন্যান্য ডিভাইস নির্মাতা কোম্পানিকে অর্থ প্রদান করে গুগল ২০২১ সালে ২৬.৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যেন নতুন ডিভাইসে গুগল সার্চ ইঞ্জিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিফল্ট হিসেবে সেট করা থাকে। মার্কিন বিচার বিভাগ গুগলের এই কার্যক্রমের অবসান চায়, কারণ এটি গুগলের বাজারের একচেটিয়া দখলকে সহজতর করেছে।
যদিও গুগল এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছে, তবু কোম্পানিটি দাবি করেছে যে তারা শুধু উন্নত মানের সার্ভিস প্রদান করার কারণে ব্যবহারকারীরা তাদের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেন। গুগল আরও বলেছে যে তারা অ্যামাজন এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাছাড়া ব্যবহারকারীরা চাইলে তাদের ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন পরিবর্তনও করতে পারেন
গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম কোম্পানি এবং এর বাজার মূল্য দুই লাখ কোটি ডলারেরও বেশি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে, মার্কিন সরকারের প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলির ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে। গত সপ্তাহে আরেকটি মামলায় মার্কিন বিচারক রায় দিয়েছেন যে গুগলকে তার প্লে স্টোর খুলে দিতে হবে এবং প্রতিযোগীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করতে হবে।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গুগলের ওয়েবভিত্তিক বিজ্ঞাপন ব্যবসার প্রতিও বিশেষ নজর দিয়েছে এবং সেটি ভেঙে দেওয়ারও প্রস্তাব করছে। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ক্ষেত্রে গুগলের একচেটিয়া আধিপত্যকেও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিচার বিভাগ ভাবছে, যাতে গুগল তার সার্চ এবং এআই সেবাগুলির তথ্য ও মডেল প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। গুগল এই প্রস্তাবগুলিকে AI এর ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে এবং তারা বলেছে, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে AI সেক্টরে উদ্ভাবন ও বিনিয়োগ হ্রাস পেতে পারে।
মার্কিন বিচার বিভাগ আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে গুগল সম্পর্কিত একটি বিস্তারিত প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, এবং গুগলকে নিজেদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে।
এদিকে, শুধু গুগল নয়, ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা, অ্যামাজন এবং অ্যাপলের বিরুদ্ধেও একচেটিয়া বাজার তৈরির অভিযোগে মামলা চলছে। গুগলকে ভেঙে দেওয়ার এই ধারণাটি ইয়েলপ এবং ডাকডাকগোসহ অন্যান্য ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছ থেকেও সমর্থন পেয়েছে।
Please Share This Post in Your Social Media

গুগলকে ভেঙে ফেলার পরিকল্পনায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ: লক্ষ্য ক্রোম এবং অ্যান্ড্রয়েড


মার্কিন সরকার গুগলকে তার কিছু প্রধান ব্যবসা, বিশেষত ক্রোম ব্রাউজার এবং অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা করছে। তারা আদালতে এমন একটি প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছে, যা গুগলের অনলাইন সার্চ বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। কর্মকর্তারা বলেছেন, এই পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্দেশ্য হলো গুগলের সার্চ ব্যবসায় প্রতিযোগিতা ফিরিয়ে আনা এবং এর একচেটিয়াতন্ত্রকে ভেঙে ফেলা।
সম্প্রতি এক আলোচিত মামলায় বিচারক ঘোষণা করেছেন যে গুগল অবৈধ একচেটিয়াতন্ত্র তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইনে যে তথ্য অনুসন্ধানের কার্যক্রম হয়, তার প্রায় ৯০ শতাংশ গুগলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিচার বিভাগ গুগলের সার্চ ইঞ্জিন এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ব্যবসাগুলির ওপর যে সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছে, তার ফলে এই বাজারে বড় পরিবর্তন আসতে পারে এবং গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা বাজারে তাদের অংশ বাড়ানোর সুযোগ পাবে।
গুগল তার সার্চ ইঞ্জিনকে বিভিন্ন স্মার্টফোন এবং ব্রাউজারের ডিফল্ট হিসেবে রেখে ব্যবহারকারীদের উপর একধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। অ্যাপলসহ অন্যান্য ডিভাইস নির্মাতা কোম্পানিকে অর্থ প্রদান করে গুগল ২০২১ সালে ২৬.৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যেন নতুন ডিভাইসে গুগল সার্চ ইঞ্জিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিফল্ট হিসেবে সেট করা থাকে। মার্কিন বিচার বিভাগ গুগলের এই কার্যক্রমের অবসান চায়, কারণ এটি গুগলের বাজারের একচেটিয়া দখলকে সহজতর করেছে।
যদিও গুগল এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছে, তবু কোম্পানিটি দাবি করেছে যে তারা শুধু উন্নত মানের সার্ভিস প্রদান করার কারণে ব্যবহারকারীরা তাদের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করেন। গুগল আরও বলেছে যে তারা অ্যামাজন এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাছাড়া ব্যবহারকারীরা চাইলে তাদের ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন পরিবর্তনও করতে পারেন
গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম কোম্পানি এবং এর বাজার মূল্য দুই লাখ কোটি ডলারেরও বেশি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে, মার্কিন সরকারের প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলির ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে। গত সপ্তাহে আরেকটি মামলায় মার্কিন বিচারক রায় দিয়েছেন যে গুগলকে তার প্লে স্টোর খুলে দিতে হবে এবং প্রতিযোগীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করতে হবে।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গুগলের ওয়েবভিত্তিক বিজ্ঞাপন ব্যবসার প্রতিও বিশেষ নজর দিয়েছে এবং সেটি ভেঙে দেওয়ারও প্রস্তাব করছে। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ক্ষেত্রে গুগলের একচেটিয়া আধিপত্যকেও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিচার বিভাগ ভাবছে, যাতে গুগল তার সার্চ এবং এআই সেবাগুলির তথ্য ও মডেল প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। গুগল এই প্রস্তাবগুলিকে AI এর ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে এবং তারা বলেছে, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে AI সেক্টরে উদ্ভাবন ও বিনিয়োগ হ্রাস পেতে পারে।
মার্কিন বিচার বিভাগ আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে গুগল সম্পর্কিত একটি বিস্তারিত প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, এবং গুগলকে নিজেদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে।
এদিকে, শুধু গুগল নয়, ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা, অ্যামাজন এবং অ্যাপলের বিরুদ্ধেও একচেটিয়া বাজার তৈরির অভিযোগে মামলা চলছে। গুগলকে ভেঙে দেওয়ার এই ধারণাটি ইয়েলপ এবং ডাকডাকগোসহ অন্যান্য ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছ থেকেও সমর্থন পেয়েছে।